চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাধীন দেওয়ান নগর এলাকা হতে সরকারী বিভিন্ন সংস্থায় বিভিন্ন পদে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের মূল হোতাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
ভুক্তভোগী মিঠুন চক্রবর্তী পেশায় একজন গাড়ীর ড্রাইভার, গাড়ি চালানোর সুবাদে মিঠুন চক্রবর্তীর সাথে প্রতারক মোহাম্মদ সোহেল আলমের পরিচয় হয়। পরিচয় ও কথাবার্তার এক পর্যায়ে গ্রেফতার প্রতারক বলে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ড্রাইভার পদে চাকরি দিতে পারবে ও তার লোক আছে এ কথা বলে প্রতারক মোহাম্মদ সোহেল আলম তার অপর সহযোগী মোঃ জসীম উদ্দিন এর সাথে মিঠুন চক্রবর্তীকে পরিচয় করিয়ে দেয়।
এরপর প্রতারকরা মিঠুন চক্রবর্তীকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৬ লক্ষ টাকা দাবি করে এবং টাকা দিলে স্থায়ীভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দিবে বলে প্রলোভন দেখায়। মিঠুন চক্রবর্তী সরল বিশ্বাসে প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে গত (১৫ জুলাই ২০২২) সকাল ১০টায় হাটহাজারী থানাধীন পৌরসভাস্থ পশ্চিম দেওয়ান নগরস্থ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের পাশে একটি দোকানের ভিতরে হতে তার স্ত্রী ও স্ত্রীর বড় ভাই রঞ্জিত চক্রবর্তীর সামনে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রতারক মোহাম্মদ সোহেল আলম’কে প্রদান করে।
এর কয়েক দিন পর মোহাম্মদ সোহেল আলম বাকি টাকা দ্রুত পরিশোধ করার জন্য তার সহযোগী মোঃ জসীম উদ্দিন চাপ দিচ্ছে বলে মিঠুন চক্রবর্তীকে জানায়। এরপর দ্বিতীয় ধাপে আরো ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মিঠুন চক্রবর্তী পরিশোধ করে। দুই ধাপে সর্বমোট ৫ লাখ টাকা পরিশোধের পর প্রতারক চক্রটি মিঠুন চক্রবর্তীকে একটি নিয়োগপত্র প্রদান করে। নিয়োগপত্রটি হাতে পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই করে মিঠুন চক্রবর্তী জানতে পারেন, এটা একটা ভুয়া নিয়োগপত্র। এরপর এই বিষয় নিয়ে প্রতারক চক্রের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বিভিন্ন ধরণের তাল-বাহানা ও হুমকি ধামকি প্রদান করে। সে সত্বেও মিঠুন চক্রবর্ত্তী প্রতারক মোহাম্মদ সোহেল আলমের কাছে কান্নাকাটি করলে ১ লাখ টাকা ফেরত দেয় এবং বাকি টাকা পরে দিবে বলে আশ্বস্ত করে। কয়েকদিন পর আবার তার সাথে যোগাযোগ করলে তখন মোহাম্মদ সোহেল আলম জানায় তার কাছে কোন টাকা নেই সকল টাকা তার অপর সহযোগী মোঃ জসীম উদ্দিনকে দিয়ে দিয়েছে বলে
মিঠুন চক্রবর্তীকে জানায়। এ নিয়ে প্রতারক মোহাম্মদ সোহেল আলমের সাথে মিঠুন চক্রবর্তীর কথা কাটাকাটি হয়। এরপর টাকার জন্য খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় দুই প্রতারকের মোবাইল ফোন বন্ধ। বিষয়টি হাটহাজারী বাজার সমিতিকে অবহিত করলে তারাও স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধান করতে ব্যর্থ হয়।
এরপর ভূক্তভোগী মিঠুন চক্রবর্ত্তী র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ভুক্তভোগীর আবেদনের বিষয়টি মানবিকতার সহিত আমলে নিয়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম উল্লেখিত ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে, ওই প্রতারক চক্রের মূল হোতা মোহাম্মদ সোহেল আলম চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানাধীন পৌরসভাস্থ পশ্চিম দেওয়ান নগরস্থ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড এর পাশে একটি দোকানে অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর), দুপুর সাড়ে ১২টায় র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক আসামী মোহাম্মদ সোহেল আলম (৩৬), পিতা-মৃত ফয়েজ আহমদ, সাং-চারিয়া শিকদার পাড়া, থানা-হাটহাজারী, জেলা-চট্টগ্রাম’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এরপর গ্রেফতারকৃত প্রতারককে জিজ্ঞাসাবাদে সে উল্লেখিত প্রতারনার কথা অকপটে স্বীকার করে। এছাড়াও গ্রেফতার আসামী আরো জানায়, সে এবং তার অপর সহযোগী মোঃ জসীম উদ্দিন পরিকল্পিতভাবে দীর্ঘ দিন যাবৎ সাধারণ মানুষ’কে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে সরকারী বিভিন্ন সংস্থায় বিভিন্ন পদে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে আসছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।