চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকায় আধিপত্য বিস্তার’কে কেন্দ্র করে ইউপি মেম্বারের ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামী আজিজুল হক অরফে ফারুক’কে আটক করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
নিহত ভিকটিম মুমিনুল হক পেশায় একজন কৃষিজীবি এবং গরু ব্যবসায়ী ছিলেন। তার ভাই আকবর হোসেন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানাধীন মুরাদপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত মেম্বার। তাদের এলাকায় কতিপয় ব্যক্তি মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন প্রকার অপকর্ম করত। নিহত ভিকটিমের ভাই ওয়ার্ড মেম্বার হওয়ায় ভিকটিম ও তার ভাই দুজনেই উক্ত অপকর্মকারী ব্যক্তিদের অসাধু কার্যকলাপে বিভিন্ন সময় বাধা প্রদান করত। এরুপ বাধা প্রদানের জন্যই উক্ত দুস্কৃতিকারীদের কাছে ভিকটিম মুমিনুল ও তার ভাই শত্রুতে পরিণত হয়। এই নিয়ে দুস্কৃতিকারীদের সাথে নিহত ভিকটিম মুমিনুল ও তার ভাইয়ের বিরোধ চলে আসছিল এবং কিছুদিন পূর্বে উক্ত দুস্কৃতিকারীদের বিভিন্ন অপকর্মের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে নিহত ভিকটিম মুমিনুল হকের সাথে বাকবিতন্ডা হয় ও তাকে বিভিন্ন রকম হুমকিও প্রদান করে।
এরই ধারবাহিকতায় গত (২৯ জুন ২০২২) নিহত মুমিনুল হক তার ছেলে ও ভাতিজাসহ গরু ক্রয়ের উদ্দেশ্যে মুরাদপুরস্থ ফকিহাট বাজারে যায়। সেখানে দরদাম মত গরু কিনতে না পারায় তারা ওই দিন বিকেলে একটি অটোরিক্সা যোগে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
পথিমধ্যে তারা মুরাদপুরস্থ আমিন মোহম্মদ সী-রোডে নতুন গ্যাস অফিসের সামনে পৌছালে ৪টি সিএনজি নিয়ে এসে দুস্কৃতিকারীরা তাদের অটোরিক্সার গতিরোধ করে। ওই সময় নিহত ভিকটিম মুমিনুল হক তার ছেলে ও ভাতিজাসহ সবাই তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে থাকে কেনো তাদের পথ আটকানো হয়েছে। সে সময় অন্য একটি সিএনজি থেকে নেমে জনৈক এক ব্যক্তি বলে অটোরিক্সার ভিতরে মুমিনুল বসা আছে তাকে মেরে ফেল। একথা বলার সাথে সাথে দুস্কৃতিকারীরা তাদের হাতে থাকা দেশী ধাড়ালো অস্ত্র ছুরি, রাম দা, খুর, চাকু ও ক্রিস দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মুমিনুল হকের শরীরে বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করে। এসময় মুমিনুল হক গুরুতর আহত হয়ে রাস্তার উপর লুটিয়ে পড়লে দুস্কৃতিকারীরা মুমিনুলের পরিহিত শার্টের পকেট ও লুঙ্গির ভিতরে থাকা নগদ ১ লখ ৪৬ হাজার টাকা এবং একটি মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়।
এরপর মুমিনুল হককে গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত জখম অবস্থায় তার ছেলে, ভাতিজা মিলে আশেপাশের লোকজনের সহযোগীতায় তাকে প্রথমে সীতাকুন্ড সেবা ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসা জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।
এ বিষয়ে নিহত ভিকটিম মুমিনুল হকের ছেলে আলী হোসেন সবুজ বাদী হয়ে গত (১ জুলাই ২০২২) চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানায় ৮ জন নামীয় এবং ০৯/১০ জনকে অজ্ঞাতনামা করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে যার মামলা নং ০১/২৫৩ তারিখ ০১ জুলাই ২০২২।
উল্লেখ্য যে, গত (৬ সেপ্টেম্বর) ওই মামলার এজাহারনামীয় পলাতক ১নং ও মাস্টার মাইন্ড আসামী মোঃ সাহাব উদ্দিন(৩৪)’কে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম কর্তৃক আটক করতে সক্ষম হয়। অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতার করার লক্ষ্যে র্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে, ওই হত্যা কান্ডের অন্যতম পরিকল্পণাকারী ও এজাহারনামীয় ৩নং আসামী আজিজুল হক অরফে ফারুক চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন বারবকুন্ড বাজার এলাকায় অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক ১৫৪০ ঘটিকায় বর্ণিত এলাকায় ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে আসামী আজিজুল হক অরফে ফারুক (২৩)কে গ্রেফতার করে র্যাব। সে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানার হাতিলোটা গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে।
আটককৃত খুনি স্বীকার করে , সে আকবর আলী মেম্বারের ছোট ভাই মুুমিনুল হককে নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা মামলার অন্যতম পরিকল্পণাকারী ও এজাহারনামীয় ৩নং পলাতক আসামী।
উল্লেখ্য যে, সিডিএমএস পর্যালোচনা করে ধৃত আসামী আজিজুল হক অরফে ফারুক এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানায় হত্যা, অস্ত্র, ডাকাতি, মারামারি, নারী নির্যাতনসহ সর্বমোট ৫টি মামলা চলমান রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে সীতাকুন্ড থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।