২৮ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৩:৫২:০৭ পূর্বাহ্ন


রামুতে অর্ধশতাধিক স্পটে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন : উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত
আব্দুর রহিম (রামু কক্সবাজার):
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২২
রামুতে অর্ধশতাধিক স্পটে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন : উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রামুতে অর্ধশতাধিক স্পটে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন : উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত


কক্সবাজারের রামুর ১১টি ইউনিয়নে ৫০ টির উপরে  অবৈধ ড্রেজিং ও শ্যালোমেশিন  বসিয়ে  বাঁকখালী নদী,  বিভিন্ন খাল ও  ছড়ার  তলদেশ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে বলে  অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

 ইতিমধ্যে সরকারি নির্ধারিত স্থানের বাইরে ৫টি স্থানে ইজারাদার কর্তৃক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করার দায়ে রামু ফকিরা বাজারের পূর্ব পাশে বাঁকখালী নদী চরের ইজারাদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল হক চৌধুরীকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে রামু উপজেলা প্রশাসন। বাঁকখালী নদী ও বাঁকখালী সংযুক্ত বিভিন্ন খালে বসানো অবৈধ ড্রেজার মেশিনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে  উপজেলা প্রশাসন সূত্রে  জানা গেছে।

বালু উত্তোলনের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদী পাড়ের মানুষ, ফসলী জমি। বর্ষার সময়  নদীর দুই পাশের বাঁধ ভেঙে বিলীন হচ্ছে শত শত ঘরবাড়ি। নদীর দুই পাড়ে সরকার  শত কোটি টাকা খরচ করে ব্লক বসালেও নদীর ভাঙ্গন রোধ করা যাচ্ছে না। নদীর দুই পাশের বাঁধ ভেঙে ব্লক তলিয়ে গেছে পানিতে। 

রামু উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, রামু ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের  বাঁকখালী নদীর  বালু মহাল ৪৫ লক্ষ  টাকা সরকারকে রাজস্ব  দিয়ে  ইজারা নিয়েছেন রামু উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক  নুরুল হক চৌধুরী। কিন্তু সরকার  নুরুল হক চৌধুরীকে যে স্থানে ইজারা  দিয়েছেন তিনি সরকারি বিধি ভঙ্গ করে সে স্থানের বাইরে ১ কিলোমিটারের মধ্যে ৫টি স্পট থেকে বালু উত্তোলন করছেন। এভাবে ইজারা বহির্ভূত জায়গায় বালু উত্তোলনের দায়ে তাকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে রামু সহকারী কমিশনার (ভূমি)নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপম মজুমদার। 

এদিকে চাকমারকুল বালু মহাল( সিকদার চর)টি খালেদ হোসেনের নামে ইজারা নিয়েছেন চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের  চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার। খালেদ হোসেন  সেই ইজারাকৃত বালু মহালটি চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের  চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদারকে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে চুক্তির ভিত্তিতে হস্তান্তর করেন। তবে উক্ত ইজারাদার জানান, সম্পূর্ণ বৈধভাবে সরকারি বিধি মোতাবেক বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্ট্যাম্পে উল্লেখ করেই সম্পূর্ণ ইজারার দায়িত্ব বুঝে দেন ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদারকে।  তিনি আরো জানান,  ইজারার স্থান অর্থাৎ সিকদার চরে তার কোন  ব্যবসায়িক কার্যক্রম নেই। এমনকি কোন ড্রেজার মেশিনও বসাননি তিনি। অহেতুক তার ও তার পরিবারের দীর্ঘদিনের সুনাম নষ্ট করতে এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন  করতে  রামুর কিছু জনবিচ্ছিন্ন, সরকার বিরোধী তথাকথিত সংবাদকর্মী তার বক্তব্য না নিয়ে মনগড়া  সংবাদ পরিবেশন করেছে এবং জেলা পর্যায়েও জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে মিথ্য ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করাচ্ছে। এসব অবান্তর সংবাদের সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।

রাজনৈতিক কোন্দলের জেরে রামুর কিছু প্রভাবশালী  আওয়ামীলীগ নেতার পক্ষে নিয়ে স্থানীয় কিছু দলীয় পদপদবীধারী ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিভিন্ন ও অপপ্রচার চালিয়েছেন। যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মানহানিকর। 

চাকমারকুল  বালুমহলটি পরিদর্শনে  এলাকাবাসী জানান, বাঁকখালীর বিভিন্ন  স্থানে  ড্রেজার মেশিন বসিয়ে  বালু উত্তোলন করছে নাছির সিকদার, সাঈদ/সৈয়দ নুর  (২), আদর মিয়া, কামাল উদ্দিন, আবিদ,  ছলিম মিয়া, আমিন সিকদার শাহেদ,  জুয়েল। 

এদিকে রাজারকুল ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকায় স্থানীয়  জনসাধারণ বাঁধার দেওয়ার পরও জোরপূর্বকভাবে  পানি উন্নয়ন বোর্ডের বসানো  সিসি ব্লক এর স্থানে বাঁকখালী নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে  বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা সরওয়ার কামাল সোহেল, দক্ষিণ চাকমারকুল  লম্বরীপাড়া হাবিবার ঘাট এলাকায়  বাঁকখালী নদী থেকে বালু  উত্তোলন করছে আলাউদ্দিন, দিদার ও সাইফুল, 

চাকমারকুল ইউনিয়নের মৌজিমের দ্বীপ এলাকায় বালু উত্তোলন করছে দিদার বলি, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের মধ‍্যম উমখালী কাজির পাড়া ও মিয়াজী পাড়ায় বালু উত্তোলন করছে  আজিজুল হক প্রকাশ দুদু মিয়ার পৃথক ২টি, দক্ষিণ চাকমারকুল নতুন ব্রীজ সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর থেকে বালু উত্তোলন করছে জাহাঙ্গীর / সরওয়ার, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্ব পাড়া চেরাংঘর এলাকায়  বাঁকাখালী নদীর থেকে বালু উত্তোলন করছে এনাম সাওদাগরের ছেলে  বাবু, পশ্চিম মনিরঝিলে বাঁকখালী নদীর থেকে বালু উত্তোলন করছে  আলম/ সুমন, জোয়ারিয়ানালা  ইউনিয়নে বালু উত্তোলন করতেছে  আবদু শুক্কুর, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বড় জামছড়ি খাল থেকেই বালু উত্তোলন  করছে দক্ষিণ মৌলভী কাটার  জহির উদ্দিন, তার ভাইপুত রিশাদ, গর্জনিয়া বাজারের দক্ষিণ পাশে কবরস্থান সংলগ্ন ছোট জামছড়ি  খাল থেকে  বালু উত্তোলন করছে মিয়াজী পাড়া এলাকার আবু তাহেরের ছেলে মেহেদী হাসান, গর্জনিয়া ইউনিয়নের গজ্জই খাল থেকে বালু উত্তোলন  করছে মারুফ মেম্বার,  হাফেজ আহাম্মদ,  ব্রাহিম,  থোয়াইঙ্গাকাটা  খাল থেকে বালু উত্তলন করছে জব্বার মেম্বার, ঈদগড় ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডে  বায়তুশ শরফ এলাকায় রেনুরকুল খাল থেকে  বালু উত্তোলন করছে বেলাল উদ্দিন ও  সুলতান, রশিদ নগর ইউনিয়নের গ্যারেজ এলাকার পূর্ব পাশে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে মুজিববর্ষের ঘরের কথা বলে বালু উত্তোলন করছে তুরুপ  আলী, নতুন বাজারের পশ্চিম পাশে কাহাতিয়া পাড়া এলাকায় বালু উত্তোলন করছে  পুতু মেম্বার ও আবু বক্কর, খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম গোয়ালিয়া এলাকায়  ছড়া থেকে  বালু উত্তোলন করছে  কামাল উদ্দিন,  মুজিববর্ষের ঘরের নাম ভাঙিয়ে  বালু উত্তোলন করছে খুনিয়াপালং ইউনিয়নের  সরওয়ার আলম। এভাবে বালু উত্তোলনের কারনে ঝুঁকিতে রয়েছে বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর অসংখ্য মানুষ। ইতোপূর্বেও নদী ভাঙ্গনের কারণে নিঃস্ব হয়েছে শত শত ঘর বাড়ি।

পরিবেশবাদীরা জানান, অবৈধ  বালু মহালের মালিকদের  বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ না  নিলে আগামী বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের ফলে দেখা দিবে ভয়াবহ বন্যা, বিলীন হয়ে যাবে শত শত ঘর বাড়ি। সৃষ্টি হবে পরিবেশের বিপর্যয়।

রামু উপজেলার সহকারী  কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপম মজুমদার বালু উত্তোলনের  বিষয়ে বলেন, ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে আমারা গর্জনিয়া ইউনিয়নে ৫০ হাজার  টাকা  জরিমানা করেছি এবং  হাইটুপি স্পটে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা দায়ে  ইজারাদার নুরুল হক চৌধুরীকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয় আমরা দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেব।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফা সাথে যোগাযোগ  করা হলে  বালু উত্তোলনের বিষয় অভিযান অব‍্যাহত রয়েছে বলে জানান। 

 জানা গেছে রামু উপজেলা প্রশাসনের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত থাকায় কিছু কিছু ড্রেজার মালিকরা দিনে বালু উত্তোলন না করে প্রতিদিন রাত ৯টার পর থেকে  সকাল ৮ পর্যন্ত  ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। অন্যদিকে কিছু  অবৈধ বালু ব্যবসায়ী তাদের ড্রেজার মেশিন সরিয়ে নিলেও  বিশাল অবৈধ বালির  স্তপ স্পটে দেখা গেছে।

এদিকে রামুতে দলীয় কোন্দল, সাংবাদিকদের  গ্রুপিং ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের  ধরে  গত দেড় মাস  ধরে জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয় পত্রিকায় পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিপক্ষকে গায়েল করার জন্য  সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিক সংবাদ পরিবেশিত হওয়ায় অনেকটাই বিব্রত হয়ে পড়েছেন নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তাফা এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি নিরুপম মজুমদারসহ রামুর বিজ্ঞ মহল। 

উপজেলার এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তা মিটিং এর মাধ্যমে অবৈধ স্পট  চিহ্নিত করে সেখানেই অভিযান পরিচালনা করবেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।