১৫ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০৪:৩৮:৫৩ পূর্বাহ্ন


মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে শিবির ক্যাডারের ছুরিকাঘাত, মামলা তুলতে হত্যা হুমকি
স্টাফ রিপোর্টার:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০২-২০২২
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে শিবির ক্যাডারের ছুরিকাঘাত, মামলা তুলতে হত্যা হুমকি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে শিবির ক্যাডারের ছুরিকাঘাত, মামলা তুলতে হত্যা হুমকি


ঠিকাদারি ব্যবসার পাওনা অর্থ পরিশোধ করতে বলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল প্রামানিকের সন্তান মো. আবুল হাসেমকে ছুরিকাঘাতে হত্যা চেষ্টা করেন শিবির ক্যাডার রঞ্জু শেখ, চাকু সেলিমসহ তাদের দলবল। এনিয়ে চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলাও দায়ের হয়।

ভুক্তোভুগী পরিবারের অভিযোগ, এ মামলায় কোনো আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি। প্রকাশ্যে আসামীরা ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের খুজে পাচ্ছে না বলে অজুহাত দিচ্ছে। আসামীরা প্রকাশ্যে ও ফোনে মামলা তোলার হুমকি দিলেও পুলিশ কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

পুলিশের কাছে বারং বার অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার বা ন্যায়বিচার না পাওয়ায় বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২ টার দিকে রাজশাহী মহানগর প্রেসক্লাবে স্ত্রী-সন্তানসহ সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মো. আবুল হাশেম।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি পেশায় প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার ও সরবরাহকারী। ঠিকাদারি ব্যবসায় মালামাল সরবরাহের প্রলোভন সিদ্ধার্থ হত্যা মামলার আসামী শিবির ক্যাডার রঞ্জু শেখ ও সেলিম দেখিয়ে বিভিন্ন সময় আমার কাছে ১৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে আটকে দেন। দীর্ঘদিন ঘোরানোর পর ১০ লাখ ২৩ হাজার টাকা এক রাজনৈতিক নেতার মধ্যস্থতায় প্রদান করেন। বাকি অর্থ পরে দেবার কথা থাকলে তা পরিশোধে সরাসরি অস্বীকার করেন তারা।

তিনি আরও বলেন, এনিয়ে আবারো আমাকে দ্বারস্থ হতে হয় ওই রাজনৈতিক নেতার। পরে তিনি (রাজনৈতিক নেতা) ২ জানুয়ারি শিবির ক্যাডার রঞ্জু ও সেলিমকে ডেকে পাওনা অর্থ পরিশোধ না করায় তাদের গালমন্দ করেন এবং নিজেই ওই অর্থ প্রদান করে তাদের বিতাড়িত করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই রাজনৈতিক নেতার সামনেই হত্যাহুমকি দিয়ে বেরিয়ে যায় রঞ্জু ও সেলিম।

এ ঘটনার দুদিন পর অর্থাৎ ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টার দিকে শালবাগান সিটি গ্যারেজের পেছনে (নয়ন বিডিআর এর বাড়ির সামনে) শিবির ক্যাডার রঞ্জু, চাকু সেলিম, সানাসহ আরও ১২/১৩ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। পরে স্থানীয়রা আমাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করে। দ্রুত ওটিতে নিয়ে শরীরে ১৭টি সেলাই দেয়া হয়। প্রচন্ড রক্তক্ষরণের কারণে ৪ ব্যাগ রক্তেরও প্রয়োজন হয়। রামেকের ৪নং ওয়ার্ডের ৫নং বেডে দীর্ঘ ৫ দিন চিকিৎসা শেষে (৯ জানুয়ারি) আমাকে ছুটি দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক বলে জানান আবুল হাসেম।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী মোসা. জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, আমার স্বামী বাড়ি ফেরার পর আমি বাদি হয়ে গত ৭ জানুয়ারি চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা দায়ের করি। মামলায়- মো. রঞ্জু শেখ, মো. সেলিম অরফে চাকু সেলিম, মো. ইসমাইল হোসেন, মো. জয়, মো. হৃদয়, মো. আলিম, মো. সানা সহ অজ্ঞাত আরও ৪/৫জনকে আসামী করা হয়। তাদের মধ্যে ৪ জন আসামী আদালত থেকে আগাম জামিন নেয়। কিন্তু প্রধান আসামী রঞ্জু শেখ, চাকু সেলিম ও জয় ওয়ারেন্ট নিয়ে প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও চন্দ্রিমা থানার পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফারুককে আসামীদের অবস্থানের কথা জানালেও তিনি বলছেন- ‘আসামী খুজে পাচ্ছেন না।’ আসামি না ধরে উল্টো পরামর্শ দিচ্ছেন- ‘বড় কোনো রাজনৈতিক নেতার মাধ্যমে থানার ওসি কিংবা পুলিশ কমিশনারকে বলাতে।’

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশের এমন উদাসীনতায় আসামীরা প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে- ‘আমরা হইলাম বসের লোক। আমাদেরকে পুলিশ ধরবেনা। বস বলেছে এবার তো চাকু মেরেছিস। বেঁচে গেছে। এরপর একেবারে প্রাণে মেরে ফেলবি।’

ভুক্তভোগীরা জানান, এভাবে সরাসরি, মুঠোফোনে এমনকি বিভিন্ন লোক মারফত মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি অব্যাহত রেখেছে জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা। শুধু তাই নয়, আসামীরা বলছে- ‘মামলা না তুললে, আমাকেসহ আমার নাবালক দুই বাচ্চাদের প্রাণে মেরে ফেলবে।’ এভাবে পুলিশি উদাসীনতা চলতে থাকলে ওই সকল সন্ত্রাসীদের হাতেই হয়তো মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের পরিবারকে বলি হতে হবে।

আসামীদের অনেকেই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি শিবির ও বিএনপির ক্যাডার। যার প্রমাণ ও স্বীকারোক্তি রয়েছে আমাদের কাছে। এদের মধ্যে রঞ্জু শেখ ১/১১ সময় রাজশাহীতে পুলিশের এসআই সিদ্ধার্থ হত্যা মামলার আসামী। আবার চাকু সেলিম হচ্ছে বিএনপির ক্যাডার। তারা এখন কিছু আ.লীগের রাজনৈতিক নেতার মদদে নানান সন্ত্রাসী ও অপর্কম করে বেড়াচ্ছে। নিজেদের পরিচয় দিচ্ছেন ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হিসেবে।

এবিষয়ে মামলা তদন্তকারী অফিসার উপপরিদর্শক ফারুক বলেন, এ ঘটনায় জড়িত ওয়ারেন্টভূক্ত আসামীদের গ্রেফতারের চেস্টা চলছে কিন্তু তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি গতকালও (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধে বেলা আসামী রঞ্জুর চেম্বারে গিয়ে খোজা হয়েছে কিন্তু পাওয়া যায়নি। আসামীদের বিএনপি ও শিবির সম্পৃক্ততার কথা উঠলে তিনি বলেন, ‘তারা জামাত-বিএনপির রাজনীতি করে কি না তা জানা নেই। তবে তারা বর্তমানে অন্য দল করে বলে শুনেছি।’

মামলাটির বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে ফোন করা হয় চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমরান আলীকে। তিনি কল ধরে জানান, ‘আমি ব্যস্ত আছি, পরে কথা হবে।’

এবিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে নগর পুলিশের মূখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে ছুরিকাঘাতের মামলার আসামীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না বিষয়টি আমার জানা নেই। খোজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

রাজশাহীর সময় / এম জি