২০২২ সালের জানুয়ারি মাসজুড়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দূষিত বায়ু গ্রহণ করেছে রাজধানীবাসী। এ সময়ের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবেও কয়েকবার আন্তর্জাতিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণ সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে ঢাকার নাম। ঢাকার বাতাসে এমন সব রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি মিলেছে যা ক্যান্সারসহ নানা মারাত্মক রোগের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে রাজধানীবাসী।
মধ্যমাঘে এমন চিত্র দেখে যে কারো মনে হতে পারে নগরে শীতের সকালের কুয়াশার স্নিগ্ধ ছোঁয়া। তবে বাস্তবতা হলো ভরদুপুরে রাজধানীর তিনশ ফিট এলাকার দূষিত বায়ুর চিত্র এটি। একবেলা-দু’বেলা নয় পুরো মাসজুড়েই এমন বায়ুদূষণকে সঙ্গী করেই কাটিয়েছে রাজধানীবাসী।
দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসা দুটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণার তথ্যমতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে সব থেকে ভয়াবহ বায়ুদূষণ ঘটেছে।
আন্তর্জাতিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্যমতে, জানুয়ারি মাসের ৫ দিন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর স্থল ছিল ঢাকা। যার তাৎক্ষণিক প্রভাবও পড়েছে রাজধানীবাসীর স্বাস্থ্যে।
আন্তর্জাতিক বায়ুমণ্ডলীয় সূচকে ০ থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুকে স্বাভাবিক ধরা হয়, মাত্রা দেড়শ অতিক্রম করলে তা হয়ে ওঠে ঝুঁকিপূর্ণ। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের গবেষণায় উঠে এসেছে জানুয়ারি মাসে একদিনও স্বাভাবিক বায়ু সেবন করেনি রাজধানীবাসী।
ক্যাপসের গবেষণায় সম্প্রতি বলা হয়, রাজধানীতে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ুদূষণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ ভাগ। বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী, গড়ে ২০২০ সালে দূষণের মাত্রা ছিল ১৪৫; যা ২০২১ সালে এসে হয় ১৫৯ দশমিক ১।
জরিপে বলা হচ্ছে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বায়ুমান সূচকের (একিউআই) গড় মাত্রা ছিল ২৩৫ দশমিক ১। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বেড়ে দাঁড়ায় ২৬১ দশমিক ৬; যা দুই বছরের হিসাবে ১১ দশমিক ৩ ভাগ বেশি। একইভাবে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ২২০ দশমিক ৫। ২০২১ সালে বেড়ে হয়েছে ২৩১ দশমিক ৪।
ক্যাপসের পরিচালক ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদারের মতে, বায়ু দূষণের মাত্রা ২০০ ছাড়ালে বলা হয় মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর। ৩০০ হলে দুর্যোগপূর্ণ হিসেব বিবেচনা করা হয়। শীত শুরু হলে শুষ্ক মৌসুমের কারণে এ ধরনের আবহাওয়া বছর বছর বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে এক সময় জরুরি অবস্থাও জারি করা হতে পারে বলে মনে করেন এই গবেষক।
রাজধানীর বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ নির্মাণকাজ, ইটভাটা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি। যেখানে সেখানে বর্জ্য পোড়ানোর কারণেও ঘটছে দূষণ। দুই যুগ ধরে এ বিষয়ে গবেষণা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের তথ্য বলছে, যেসব ধুলিকনা দেখতে পাওয়া যায় তার মধ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় রয়েছে পিএম ২.৫ নামে একটি কম্পাউন্ড। যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মস্তিষ্ক পৌঁছে অকেজো করে ফেলতে পারে।
ঢাবির রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘পিএম ২.৫ নামের কম্পাউন্ডটি নাকের মধ্য দিয়ে ব্রেইনে গিয়ে জমা হয়। এরপর স্বাভাবিক সেল এবং কার্যক্রমগুলো নষ্ট করে দেয়। এর মাধ্যমে ক্যান্সারের মতো রোগ দ্রুত শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।’
গত কয়েক বছর ধরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে নগরবাসী মাত্র ২০ দিনের মতো স্বাভাবিক বায়ু গ্রহণ করে বলেও জানা গেছে এই গবেষণায়।
রাজশাহীর সময় / এম আর