ইউপি নির্বাচনে প্রাণহানির যে ঘটনা গত বছর শুরু হয়েছিল, তা চলতি বছরের শুরুতেও বহাল রয়েছে। গেল জানুয়ারি মাসে পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১০৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ২৯ জন মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৫ শতাধিক।
বেসরকারি সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) জানুয়ারি মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনের এক সমীক্ষায় এই তথ্য জানা যায়।
কয়েক ধাপ পেরিয়ে সোমবার ষষ্ঠ ধাপে ২১৮টি ইউনিয়নে ভোট হয়েছে। এ দিনই এমএসএফের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থার জানুয়ারির মাসের প্রতিবেদন আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্বল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, পদবাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য, গোটা রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়িত করে তুলেছে। ফলে সারাদেশে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন যে কোনো সময়ের তুলনায় এবারের সহিংসতা সব মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।
গত বছর নির্বাচনী সহিংসতায় ৯২ জন নিহত ও চার হাজারের বেশি মানুষ আহত হন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মহামারীর মধ্যে গত বছরের মাঝামাঝিতে দেশে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরুর পরই সহিংসতায় প্রাণহানির খবর আসতে থাকে। এরপর সপ্তম ধাপে ৭ ফেব্রুয়ারি আরও শতাধিক ইউনিয়নে ভোট হবে।
এমএসএফ জানুয়ারি মাসের প্রতিবেদনে বলেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অনেকটাই কমেছে। তবে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু, কারা হেফাজতে মৃত্যু, সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতা, সীমান্তে হতাহতের মতো ঘটনা বেড়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২২ সালের প্রথম মাসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক সীমান্তে হত্যার শিকার হয়েছেন তিনজন বাংলাদেশি, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আরও পাঁচজন। চারজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গেল মাসে ৩২৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে এমএসএফ। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৬৫টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১২টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৩টি। এদের মধ্যে ছয়জন প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এসময়ে ১৭ জন কিশোরীসহ মোট ৬২ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২ জন নারী।
সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি ও হামলা চলছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সাংবাদিকদের জন্য জানুয়ারি মাস ছিল ‘উদ্বেগজনক’।
অন্তত ২৭ জন সাংবাদিক নানাভাবে অপমান, নিপীড়ন, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১৪ জন সাংবাদিক নির্বাচনকালীন তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হন।
তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ঢালাও ব্যবহার কমেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে চারটি মামলা হয়েছে।
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি মাসে ২১১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে প্রধান সড়কগুলোতে ৪৯টি বাসের দুর্ঘটনায় ৬৯ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। মোটরসাইকেল, অটোরিকশাসহ অন্যান্য গণপরিবহন দুর্ঘটনায় ২১১ জন নিহত হয়েছেন।
রাজশাহীর সময় / এম আর