শরীর সুস্থ রাখতে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অনেক। ঠিকমতো ঘুম না হলে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৬ ঘণ্টা গভীর ঘুম প্রয়োজন। তবে অনিদ্রায় আক্রান্ত মানুষেরা সহজে ঘুমাতে পারেন না। যদিও অনিদ্রার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তবে বর্তমানে কাজের চাপ, সময়ের অভাব ও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহারে কারণে অনেকেই এখন বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন।
তবে জানেন কি, অনিদ্রা একাধিক রোগ এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক অনিদ্রা কী কী রোগ ডেকে আনে-
ব্রিটেনের একটি গবেষণায় দেখা গেছেম, অনিদ্রা মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। গবেষকরা বলছেন, যাদের পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব আছে তাদের মৃত্যুর হার অন্যদের তুলনায় বেশি।
এমনকি যারা অনিয়মিত ঘুমান তাদের ক্ষেত্রেও এটি ঘটতে পারে। ঘুমের অভাবে ভুগছেন এমন রোগীদের সংবহনতন্ত্রের রোগ হওয়ার ঝুঁকি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়।
২০০৭ সালে প্রকাশিত এক সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, যারা রাতে ৫-৭ ঘণ্টারও কম ঘুম কমান মৃত্যু ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে দ্বিগুণ। বিশেষ করে, ঘুমের অভাব কার্ডিওভাসকুলার রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিগুণ করে।
অন্যদিকে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে যৌন জীবনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা অনেক বেশি। এমনকি যারা দেরি করে ঘুমাতে যান ও পর্যাপ্ত ঘুম থেকে বঞ্চিত হন, তাদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যেতে পারে। এটি একটি যৌন হরমোন। এই হরমোনের মাত্রা কমে গেলে যৌন মিলনের আগ্রহও কমে যায়।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মানসিক অবসাদও বেড়ে যায়। রাত জাগার সঙ্গে মানসিক অবসাদের মধ্যে একটি চক্রাকার সম্পর্ক আছে। ২০০৫ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, উদ্বেগ বা মানসিক অবসাদে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই গড়ে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান।
মস্তিষ্কের ‘নিওকর্টেক্স’ ও ‘হিপ্পোক্যাম্পাস’ নামক দু’টি অঞ্চলের সহায়তায় অস্থায়ী স্মৃতি স্থায়ী স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়। কাজেই এ প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে গেলে নিবিড় ঘুমের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কিন্তু এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। ফলে ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়।
অনিদ্রা বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আবার পর্যাপ্ত ঘুম বিভিন্ন রোগের সমাধান করতেও সাহায্য করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যারা অনিদ্রায় ভুগছেন তারা একইসঙ্গে অন্য কোনো বিপজ্জনক দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যাতেও ভুগছেন।
ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ অনিদ্রার কারণ বেড়ে যায়। তাই সবারই ঘুমের বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।
রাজশাহীর সময়/এ