সেজদা আল্লাহর কাছে অনেক দামি ও প্রিয় ইবাদত। আল্লাহর খুব কাছে যাওয়ার মাধ্যম এ সেজদা। মানুষই শুধু আল্লাহকে সেজদা করে, তাসবিহ পড়ে এমন নয় বরং হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, আল্লাহর সৃষ্টি গাছও সেজদা করে; তার তাসবিহ পড়ে; দোয়া করে। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সেজদায় গিয়ে গাছের পড়া দোয়া পড়েছেন মর্মে হাদিসের সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের অনেক স্থানে তাকে সেজদা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এসবই সেজদার আয়াত নামে পরিচিত। এ আয়াতগুলো পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদা দিতেন। এ সেজদায় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর প্রশংসা করতেন। আর তা উম্মতে জন্য মহান শিক্ষা। নবিজীর পড়া তাসবিহ ও দোয়াগুলো কী?
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে সেজদার আয়াত পড়লে, সেজদায় গিয়ে বলতেন-
سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ
উচ্চারণ : ‘সাজাদা ওয়াঝহি লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহু বিহালিহি ওয়া কুয়্যাতিহি।’
অর্থ : ‘আমার চেহারা সেই মহান সত্তার উদ্দেশে সেজদায় অবনত করি, যিনি একে সৃষ্টি করেছেন এবং নিজের প্রবল ক্ষমতায় তার মাঝে শোনার শক্তি ও দেখার শক্তি দান করেছেন।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ, মিশকাত)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপার ক্ষমতার অধিকারি আল্লাহর কাছে বিনয়াবনত হয়ে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া গাছও মহান আল্লাহকে সেজদা করে এবং তাঁর প্রশংসা ও সাহায্য কামনা করে। এ মর্মে হাদিসের একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। তাহলো-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘আজ রাতে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখি- আমি একটি গাছের পেছনে নামাজ আদায় করছি। আমি সেজদা করলে আমার সেজদার মতো গাছটিও সিজদা করে। এরপর আমি ঐ গাছটিকে বলতে শুনলাম-
اللَّهُمَّ اكْتُبْ لِي بِهَا عِنْدَكَ أَجْرًا وَضَعْ عَنِّي بِهَا وِزْرًا وَاجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْرًا وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা উকতুব লি বিহা ইংদাকা আঝরান ওয়াদা’ আন্নি বিহা ওয়িযরান ওয়াঝআলহা লি ইংদাকা জুখরান ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নি কামা তাকাব্বালতাহা মিন আবদিকা দাউদা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! এ সাজদার বিনিময়ে আমার জন্য তোমার কাছে পুরষ্কার লিপিবদ্ধ কর; এর বিনিময়ে আমার একটি গুনাহ অপসারণ কর; আমার জন্য এটাকে পুঁজি হিসেবে জমা রাখ এবং এটাকে আমার পক্ষ থেকে গ্রহণ কর; যেমন তুমি তোমার বান্দা দাউদ (আলাইহিস সালাম) থেকে গ্রহণ করেছিলে।’
এরপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি সিজদার আয়াত পড়ে সিজদায় যান। তখন আমি তাঁকে সিজদায় গিয়ে ওই কথাগুলো বলতে শুনি; যা লোকটি গাছের কথা হিসেবে জানিয়ে গিয়েছিলো।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কোরআনের সিজদার আয়াত পড়লে কিংবা এমনিতে সিজদায় গেলেও আল্লাহর প্রশংসা ও তার কাছে রহমত পেতে এ দোয়া ও তাসবিহগুলো পড়া। হাদিসের ওপর আমল করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
রাজশাহীর সময় / এফ কে