ফুলের জগতে নিতান্ত মধ্যবিত্ত, সাদামাটা। গোলাপের বাহার বা রঙ তার নেই, গন্ধের দিক থেকেও এমন কিছু আহামরি নয়। কিন্তু তাকে ছাড়া একটি দিনও চলে না বাঙালির! যে কোনও পুজোপার্বণ গাঁদাফুল ছাড়া অসম্পূর্ণ। ঘর বা অনুষ্ঠানের মঞ্চ কম খরচে সাজাতেও ডাক পড়ে গাঁদার মালার!
তবে শুধু ঘর সাজানো নয়, গাঁদার অনেক গুণও রয়েছে। আর রূপচর্চায় এর ব্যবহার বহু প্রাচীন। আয়ুর্বেদেও এর উল্লেখ আছে। ত্বকের যে কোনও সমস্যা কমিয়ে মুখ কোমল, মসৃণ আর ঝলমলে করে তুলতে দুর্দান্ত কাজ করে গাঁদাফুল। তাছাড়া গাঁদাফুলের অ্যান্টিসেপটিক উপাদানের কথাও অজানা নয়। ছোটবেলায় কোথাও কেটেছড়ে গেলে একমুঠো গাঁদাপাতা চিবিয়ে লাগিয়ে দেওয়াই ছিল রেওয়াজ! কাজেই তার ফুলেও যে অ্যান্টিসেপটিক গুণ থাকবে, তাতে আর আশ্চর্য কী! এখন ঝটপট চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক ত্বকের যত্নে আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে কীভাবে কাজে লাগানো যায় গাঁদা ফুল।
ত্বক উজ্জ্বল করবে আমন্ড তেল আর গাঁদা ফুল: উপাদান – ৮০ এমএল আমন্ড তেল, ১টা বড় গাঁদা ফুল এবং একটা কাচের বয়াম।
তৈরির পদ্ধতি: পাত্রে গাঁদা ফুলের সব পাপড়িগুলো দিয়ে তাতে ঢালতে হবে আমন্ড তেল। ১৫ দিন ওভাবে থাক। এবার সুতির কাপড়ে পাপড়িগুলো ছেঁকে নিতে হবে। ব্যস, প্রতিদিন রাতে শোওয়ার আগে ব্যবহারের জন্য তেল তৈরি।
গাঁদার ফেস প্যাক, ত্বককে তাৎক্ষণিক উজ্জ্বল করবে: উপাদান – হাফ কাপ গাঁদা ফুলের পাপড়ি, ৫ টেবিল চামচ গোলাপ জল, ১/৪ কাপ খোসা ছাড়ানো স্লাইস করে কাটা আপেল।
তৈরির পদ্ধতি: সব কটা উপাদান ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিয়ে ১৫ মিনিটের জন্য মুখে লাগাতে হবে। তারপর ধুয়ে ফেললেই তৎক্ষণাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে ত্বক।
ট্যান রুখতে গাঁদার ফেস মাস্ক: উপাদান – ১ চামচ গাঁদা ফুলের পাপড়ির পেস্ট, ১ চিমটি হলুদ গুঁড়ো, ১ চিমটি মিল্ক ক্রিম, কয়েক ফোঁটা মধু।
তৈরির পদ্ধতি: সব কটা ভালো করে মিশিয়ে ২০ মিনিটের জন্য মুখে লাগাতে হবে। তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে ঠান্ডা জলে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য গাঁদা ফুলের ফেস প্যাক: উপাদান – ১ চা চামচ গাঁদা ফুলের পাপড়ির পেস্ট, ১ চা চামচ দই, ১ চা চামচ লেবুর রস, ১ চা চামচ গোলাপ জল।
তৈরির পদ্ধতি: সব উপাদান ভালো করে মিশিয়ে ঘাড় এবং মুখে লাগাতে হবে। এরপর শুকনো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে হালকা গরম জলে।
সাধারণ ত্বকের জন্য গাঁদার ফেস মাস্ক: ১ চা চামচ গাঁদা ফুলের পাপড়ির পেস্ট, ১ চা চামচ বেসন এবং ১ চা চামচ কাঁচা দুধ।
তৈরির পদ্ধতি: সব উপাদান ভালো করে মিশিয়ে ঘাড় এবং মুখে লাগাতে হবে। এরপর শুকনো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে হালকা গরম জলে। সপ্তাহে ৩ বার লাগালে ফল মিলবে হাতেনাতে।
গাঁদার অ্যান্টি এজিং ফেস মাস্ক: উপাদান – হাফ কাপ গাঁদা ফুলের পাপড়ি, আধ কাপ পেঁপে কুঁচি, ২ টেবিল চামচ মধু, ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল।
তৈরির পদ্ধতি: সব কটা উপাদান মিশিয়ে মুখে ১ মিনিট মাসাজ করতে হবে। এরপর অপেক্ষা করতে হবে শুকনো পর্যন্ত। তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে ঠান্ডা জলে।
শুকনো ত্বকের জন্য গাঁদার ফেস মাস্ক: ১ চা চামচ গাঁদা ফুলের পাপড়ির পেস্ট, ১ চা চামচ ফ্রেশ মিল্ক ক্রিম, হাফ চা চামচ মধু।
তৈরির পদ্ধতি: সব উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে মুখে ও ঘাড়ে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এবার বৃত্তাকার ভাবে স্ক্রাবিং করে তুলতে হবে মাস্ক। হালকা গরম জলে মুখে ধুয়ে নিলেই হবে।