বিজেপির দুই জাতীয় মুখপাত্রের পয়গম্বর সম্পর্কে আপত্তিজনক মন্তব্যের জেরে ইসলামিক দুনিয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে ভারত। কাতার, কুয়েত, ইরান প্রভৃতি দেশ সে দেশে কর্মরত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের ডেকে মহম্মদ সম্পর্কে মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে। কাতার দাবি করেছে ভারত সরকারকে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। গলা চড়িয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও। তাঁর অভিযোগ ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের সময় সংখ্যালঘুরা বিপন্ন।
রবিবার দুপুরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাদের দুই জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দালকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। তার আগে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এক বিবৃতিতে জানায়, কোনও ধর্মের প্রতি অবমাননা দল সমর্থন করে না এবং যারা এই ধরনের কাজ করে দল তাদের পাশে থাকে না। এর কিছু সময় পর নূপুর এবং জিন্দালকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে ইসলামিক দুনিয়া এতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। তারা দাবি তুলেছে, শুধু বিজেপি নয়, ভারত সরকারকেই এই বিষয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রকাশ করতে হবে। বস্তুত এই ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে। বেশ কয়েকটি রাজ্য ভারতীয় পণ্য বয়কট করা শুরু করেছে।
ভারতের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা হিংসা-বিদ্বেষের ঘটনা নতুন নয় এবং মোদী জমানায় অনেক বেড়ে গিয়েছে বলে দেশের ভেতরেই অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীদের বক্তব্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং চাকরি-বাকরি না থাকা ইত্যাদি থেকে দৃষ্টি ফেরাতেই দেশের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতাকে একেবারে উচ্চতম মহল থেকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কিছু মসজিদকে হিন্দু মন্দির দাবি করে সেখানে পুজো করার দাবি তোলা হচ্ছে। মোদি সরকার এই বিতর্ক এতদিন মুখ খোলেনি মুখ খোলেনি। বিজেপিও তাদের মুখপাত্র নূপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দালের পয়গম্বর সম্পর্কে টেলিভিশন চ্যানেলে এবং টুইটারে আপত্তিজনক মন্তব্য নিয়ে নীরব ছিল।
বারাণসীতে জ্ঞানবাপী মসজিদকে কেন্দ্র করে হিন্দুত্ববাদীরা নতুন ধরনের দাবি তুলেছে। তাদের বক্তব্য জ্ঞানবাপী ভেতরে যে সমস্ত হিন্দু দেবদেবীর নিদর্শন রয়েছে সেখানে পুজো করতে দিতে হবে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হল, বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই বিষয়টি নিয়ে খুব জোরালো প্রতিবাদ কখনও করেনি। এমনকি নূপুর ও নবীন জিন্দালের মন্তব্য ঘিরে নিন্দার ঝড় বয়ে গেলেও তারা নীরব ছিল।
কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যায় গত শুক্রবার কানপুরে জুম্মার নামাজের পরে গোলমালকে কেন্দ্র করে। সেখানে মুসলিমদের একটি সংগঠন নূপুর এবং নবীনের বক্তব্যের প্রতিবাদে হাট-বাজার দোকানপাট বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলমাল শুরু হয়। ঘটনাচক্রে কানপুর যখন উত্তপ্ত ঠিক সেই সময়ই সেখান থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের গ্রামের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন কানপুরের অশান্তির খবর আসে। উত্তরপ্রদেশ সরকার যথেষ্ট অস্বস্তির মধ্যে পড়ে। কারণ বিজেপি শাসিত রাজ্যে দাঙ্গা হয় না এবং উত্তরপ্রদেশ সে ব্যাপারে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম এমন দাবি ক’দিন ধরে করে আসছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী। কানপুরের ঘটনা অবশ্য রাজ্য সরকার বেশিদূর গড়াতে দেয়নি। ব্যাপক ধরপাকড় করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক দুনিয়া থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে দুই মুখপাত্রের বন্ত্যব্যের জেরে। উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু বর্তমানে কাতার সফরে রয়েছেন। তাঁর সফর চলাকালীন সেখানকার ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে লিখিতভাবে নূপুর এবং নবীন জিন্দালের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হয়। বলা হয়েছে পয়গম্বর সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।