ফের মাথাচাড়া দিল হিজাব বিতর্ক, বিক্ষোভের জেরে কয়েকদিন আগেই উত্তাল হয় মেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়। মেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আচমকাই হিন্দু কট্টরপন্থীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে গেলে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব খুলে ঢুকতে হবে। যারা খুলে আসবে না, তাদের ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে হবে। ক্যাম্পাসেই তারা তাদের দাবিতে স্লোগান দিতে শুরু করে। পরিস্থিতি রীতিমতো অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। এবার শ্রেণীকক্ষে হিজাব পরে আসায় পাঁচ ছাত্রীকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠলো ম্যাঙ্গালুরুর উপ্পিনগাদি একটি সরকারি কলেজে।
খবর অনুসারে জানা গিয়েছে বৃহস্পতিবার কলেজের ৬ ছাত্রী হিজাব পরে ক্লাস করতে চাইলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাতে আপত্তি জানায়, এরপরেও তারা তাদের তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় ৬ ছাত্রীকে ২ দিনের জন্য সাসপেণ্ড করল উপ্পিনগাদির এই সরকারি কলেজ। এই ঘটনাকে কেন্দ্রে করে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হল কর্ণাটকে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ করার বিষয়টি ঘিরে বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই উত্তাল হয়ে আছে কর্নাটক। মামলাটি কর্নাটকে হাইকোর্টে গড়িয়েছিল। হিজাব নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে পিটিশনগুলি দায়ের করা হয়েছিল, তা খারিজ করে দিয়েছে কর্নাটক হাইকোর্ট।
উচ্চতর আদালত জানিয়েছে, হিজাব পরা অপরিহার্য ধর্মীয় রীতি নয়। আবেদনকারীরা দাবি করেছিলেন, হিজাব নিষিদ্ধ করে তাদের ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের দাবি ছিল, হিজাব পরা ইসলাম ধর্মে বাধ্যতামূলক। তবে আবেদনকারীদের সেই দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে হাইকোর্টের বেঞ্চ।
গত বছরের ডিসেম্বরে হিজাব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় যখন উদুপি জেলার উদুপি সরকারি প্রি-ইউনিভার্সিটি গার্লস কলেজের ৬ প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাদের হিজাব পরে ক্লাসে যোগদানের অনুমতি দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়
ইসলামে হিজাব বাধ্যতামূলক নয়। ফলে এক্ষেত্রে সংবিধানের ২৫ নং ধারার রক্ষাকবজ পাওয়া যাবে না। হিজাব বিতর্কে মঙ্গলবার এমনটাই রায় দিয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্ট। অর্থাৎ স্কুলে কোনও ধর্মীয় পোশাক পরে আসা যাবে না। কর্ণাটক হাইকোর্টের ওই রায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও রায় নিয়ে সন্তুষ্ট নয় পড়ুয়ারা।
এদিকে গতকালের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজের এক শিক্ষিকা বলেন, “কলেজে কিছু মুসলিস সম্প্রদায়ের ছাত্রী হিজাব পরে ক্লাসে ঢোকার চেষ্টা করলে তাতে ছাত্ররা আপত্তি জানায়, এরপরই কলেজের তরফে ছাত্রীদের ২ দিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। তবে এতে তাদের পড়াশুনার কোন ক্ষতি যাতে না হয় তার জন্য আমরা তাদের অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করব”।
চলতি হিজাব বিতর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসভরাজ বোমাই বলেছেন, ‘বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সিন্ডিকেট সভায় সমাধান করা হয়েছে। হিজাব ইস্যুতে আদালত তার আদেশ দিয়েছেন এবং সবাইকে আদালতের আদেশ মানতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের কলেজ প্রশাসনিক বোর্ড বা যে সমস্ত কলেজে CDC নেই সেখানে অধ্যক্ষের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। এইসব বিতর্কের চেয়ে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করা শিক্ষার্থীদের পক্ষে ভালো।