সুন্দরবনে নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের হামলায় সন্ন্যাসী মণ্ডল ( ৪৫) নামের এক মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে। জীবন জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনই খাঁড়ি থেকে মাছ কাঁকড়া ধরেন তিনি।
রবিবার ভোরে সুন্দরবনের ঝিলা জঙ্গলের নদীখাঁড়িতে যেই নৌকা নিয়ে খাঁড়ির মধ্যে ঢোকেন অমনি অতর্কিতে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি বাঘ। বাঘের কবল থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি ওই মৎস্যজীবীর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত মৎস্যজীবীর সন্ন্যাসী মণ্ডল। গোসাবার কুমিরমারি গ্রামে বাসিন্দা।
অন্যান্য দিনের মত আরও কয়েকজন মৎস্যজীবীদের সঙ্গে ডিঙি নৌকা নিয়ে শনিবার সকালে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন নিরঞ্জন জোতদার, বাবু মণ্ডল, ভবতোষ মণ্ডল নামে তিন মৎস্যজীবী। শনিবার বেশকিছু মাছ-কাঁকড়া ধরে নদীখাঁড়িতেই নৌকায় ঘুমিয়েছিলেন তাঁরা।
রবিবার সকালে ভোরের আলো ফুটতেই নদীখঁড়িতে কাঁকড়া ধরার জন্য তৈরী হন তারা। ওই সময় হটাৎই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে বাঘ । ঘাপটি মেরে বেশকিছুক্ষণ নদীর পাড়ে বসে থাকে সে। কিন্তু চার মৎস্যজীবীর খেয়াল ছিল না যে, তাঁদের জন্যই ওত পেতে বসে আছে বাঘটি।
আচমকা নদীখাঁড়ি সংলগ্ন সুন্দরবন জঙ্গল থেকে বাঘটি বেরিয়ে এসে সন্ন্যাসী মন্ডলের ঘাড়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে । এরপর তাঁকে টানতে টানতে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেই মুহূর্তে ভবতোষ, নিরঞ্জনরা লাঠি আর নৌকার বৈঠা নিয়ে বাঘের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সঙ্গীকে উদ্ধারের জন্য।
দীর্ঘক্ষণ চলে বাঘ আর মানুষের তুমুল লড়াই। ক্ষুধার্ত বাঘও তার শিকার ছাড়তে নারাজ। শিকার ফেলে রেখে অপর তিন মৎস্যজীবীকেও আক্রমণ করে। তবে শেষে বেগতিক বুঝে শিকার ফেলেই পালিয়ে যায় বাঘ।
এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় সন্ন্যাসীকে নৌকায় তোলেন ভবতোশষেরা। দ্রুত গ্রামে ফেরার জন্য নৌকায় চালান তাঁরা। কিন্তু প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে মাঝনদীতে নৌকার মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সন্ন্যাসী।
অন্যদিকে সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের অধিকর্তা তাপস দাস জানিয়েছেন, “ঘটনার খবর পেয়েছি। বাঘের আক্রমণে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে ঠিক নির্দিষ্ট কোন জায়গায় হয়েছে সেটা এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে যে বা যাঁরা কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন তাঁদের বৈধ কোন কাগজ পত্র ছিল না। এমনিতেই এখন মাছ কাঁকড়া ধরার নিষেধ রয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এই ঘটনার পর শোকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামে।