২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০২:৪২:৩৪ অপরাহ্ন


সুস্থতা ও সফলতার আমল
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৫-২০২২
সুস্থতা ও সফলতার আমল ফাইল ফটো


সুস্থতা ও সফলতা মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের শারিরীক পবিত্রতা অর্জন ও সতর্কতার ওপরই তা নির্ভর করে। সুস্থতা ও সফলতার জন্য পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। এর মাধ্যমেই আসে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে (পবিত্র অবস্থায় থাকে) তাদেরকে ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২২২)

মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণা ছিল এমন- নিয়মিত ভালোভাবে হাত ধোয়া। কারণ হাত দিয়ে মানুষ সব কাজ করে থাকে। হাতের মাধ্যমে নাক-মুখ এবং চোখ যেন সংক্রমিত না হয়। আর ভালোভাবে হাত ধোয়ার মানে হলো- হাতকে জীবাণুমুক্ত করা।

মুমিন মুসলমান মাত্রই প্রতিদিন ন্যুনতম ৫ বার নামাজের উদ্দেশ্যে অজু করে। আর অজুর সময় বার বার হাত ধুয়ে থাকে। অজুতে মানুষের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। দৈহিক ও আত্মিকভাবে সুস্থ থাকতে অজু ইসলামের একটি দিকনির্দেশনা।

সুস্থতা ও সফলতার কিছু দিকনির্দেশনা: নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেড় হাজার বছর আগে বলে গেছেন, ‘তোমরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম উভয় হাত ভালোভাবে ধুয়ে নাও।’ দিনের বিভিন্ন সময়ে, খাবার গ্রহেণের আগে ও পরে এবং ওজুর সময় উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়াকে সুন্নাত সাব্যস্ত করেছেন। হাদিসে বলেছেন-

’খাওয়ার আগে এবং পরে হাত ধোয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে।’

হাত ধোয়ার এ বিষয়টি সুন্নাত হিসেবে মেনে চললে মানুষের জন্য তা দুই দিক থেকেই কল্যাণ ও বরকতের হবে। যেমন- একটি হলো সুন্নাত পালনের সাওয়াব। অন্যটি হলো সুস্থ জীবন পাওয়ার সফলতা। হাদিসে অসুস্থতার আগে সুস্থতা মর্যাদা দেয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সে কারণেই সুস্থতা ও সফলতার জন্য পবিত্রতা এবং পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব অনেক বেশি। এ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং পবিত্রতা অর্জনের উপকারিতা শুধু দুনিয়ায় নয়। বরং পরকালেও রয়েছে অসামান্য উপকারিতা। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

‘আল্লাহ তাআলা ওই সব বান্দাকে ভালোবাসেন, যারা অধিক মাত্রায় পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকে।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ১০৮)

দুনিয়ার ‍সুস্থাতা ও পরকালের সফলতায় হাদিসে চমৎকার একটি ঘোষণা এভাবে ফুটে ওঠেছে-

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার হজরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, গতকাল তুমি কিভাবে আমার আগে বেহেশতে প্রবেশ করলে? হজরত বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, 'হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যখনই আমি আজান দেই, তখনই আমি দু'রাকাত নফল নামাজ আদায় করি। আর যখনই (আমার) অজু ছুটে যায়, তখনই নতুন করে অজুর সঙ্গে থাকার চেষ্টা করি।'

তাই সুস্থ থাকতে যেমন পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব বেশি তেমনি পরকালের ও সফলতায় পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার প্রয়োজনীয়তা ফুটে ওঠেছে।

তাছাড়া পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্ন থাকা আল্লাহর হকের শামিল। ন্যুনতম সপ্তাহে একবার গোসল করা, মাথা ও শরীর ধুয়ে নেওয়ার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন নবিজী। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহুআনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সব মুসলমানের ওপর আল্লাহর এ হক আছে যে, প্রতি সপ্তাহে (অন্তত) একদিন গোসল করবে এবং মাথা ও শরীর ধুয়ে নেবে।’ (বুখারি)

মনে রাখা জরুরি: পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। পরিষ্কার, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার গুরুত্বের ব্যাপারে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিস্তারিত পথ নির্দেশ দিয়েছেন। সে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যক্তি পরিবার সমাজের সবার উচিত-

১.নিজের শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র রাখা।

২. চলাফেরা ও উঠাবসায় পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতার বিষয়টি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা।

৩. পোশাক তথা ব্যবহারের জামা-কাপড় পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র রাখা।

৪. বাসা, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় কিংবা রান্না-বান্নার ঘরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র রাখা।

৫. এমনকি রান্না করার হাড়ি-পাতিলও এসব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার তালিকায় সর্বাগ্রে রাখা।

তবেই যাবতীয় রোগ-ব্যধি থেকে মানসিক ও আত্মিক সুস্থতা, প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা পাওয়া সম্ভব। আর তাতে ফিরে আসবে স্বাস্থ্য ও দেহের আনন্দ এবং সজিবতা। দুনিয়ার উপকারিতা পাওয়ার পাশাপাশি সুনিশ্চিত হয়ে যাবে পরকালে সবার আগে জান্নাতের যাওয়া সৌভাগ্য।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার যাবতীয় মহামারি ও রোগ-ব্যধি থেকে সুস্থ থাকার এবং সবার আগে জান্নাত যাওয়ার জন্য পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে থাকার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

রাজশাহীর সময়/এমজেড