ডনবাস এলাকায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া। ছেড়ে কথা বলছে না ইউক্রেনও। প্রথম থেকেই মাটি আঁকড়ে পড়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
দু’মাস অতিক্রান্ত। যুদ্ধ থামার নামগন্ধ নেই। উল্টে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিলেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
আমেরিকা-সহ নেটোভুক্ত দেশগুলি যে ভাবে রাশিয়ার চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান ও সমরাস্ত্র পাঠানো শুরু করেছে, তাতে বেজায় চটেছে মস্কো। গত কাল একটি রুশ সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লাভরভ বলেন, ‘‘রাশিয়াকে নিশানা করতেই ওই সমস্ত অস্ত্র পাঠানো হচ্ছে। মোদ্দা কথা, রাশিয়ার সঙ্গে ছায়াযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে নেটোবাহিনী। আর যুদ্ধ মানে যুদ্ধই।’’
ওই সাক্ষাৎকারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন লাভরভ। তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি গুরুতর হচ্ছে। তা কোনও মতে আর অস্বীকার করা যায় না।’’ পাশাপাশি একের পর এক শান্তি বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার দায় কিভের উপরেই চাপিয়েছেন রুশ বিদেশমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, আজ আমেরিকার নেতৃত্বে ৪০টিরও বেশি দেশের মধ্যে নিরাপত্তা বৈঠক হওয়ার কথা। যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশগুলির নিরাপত্তা কী ভাবে আরও জোরদার করা যায় সেটাই আলোচনার মূল বিষয়। পাশাপাশি, ইউক্রেনকে আরও সামরিক সাহায্য পাঠানোর বিষয়টিও বৈঠকে সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। বৈঠকে যোগ দিয়েছে নরওয়ে, সুইডেনের মতো আপাত নিরপেক্ষ দেশগুলিও।
সম্প্রতি পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস এলাকায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে রাশিয়া। ছেড়ে কথা বলছে না ইউক্রেনও। প্রথম থেকেই মাটি আঁকড়ে পড়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তারা। তবে বিপুল পরাক্রমী রুশ শক্তির সঙ্গে পেরে ওঠা তো সহজ কথা নয়। তাই বিগত বেশ কিছু দিন ধরে আমেরিকা-সহ ইউরোপের বন্ধুরাষ্ট্রগুলির কাছে অস্ত্র সাহায্য দাবি করছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। প্রথম দিকে নেটোভুক্ত দেশগুলি এ বিষয়ে সাড়া না দিলেও এত দিনে অবস্থা বদলেছে। পরমাণু শক্তিধর রাশিয়ায় চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই সামরিক সাহায্য পাঠাচ্ছে বহু দেশ।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউজ় মোরাউয়েস্কি গত কাল এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে তাঁরা সাঁজোয়া গাড়ি ও ট্যাঙ্ক পাঠিয়েছেন। তবে সংখ্যায় কত সে বিষয়ে খোলসা করেননি তিনি। মার্চ মাসেও ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান পাঠাতে চেয়েছিল পোল্যান্ড। তারা প্রস্তাব দিয়েছিল, জার্মানির সেনাঘাঁটি হয়ে প্রথমে আমেরিকায় পাঠানো হবে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানগুলি। কিন্তু আমেরিকা তখন সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বারবার অস্ত্র-সাহায্যের জন্য আবেদন জানানো সত্ত্বেও আমেরিকা তখন জানিয়েছিল, ‘‘এখনও এমন আবেদন কেউ জানায়নি। এখনও সে সবের প্রয়োজন নেই।
সম্প্রতি রাশিয়া হামলার তীব্রতা বাড়ানোয় পরিস্থিতি বদলেছে। অনেকের মতে, রুশ আগ্রাসনে নিজেদেরও বিপদ দেখছে নেটোভুক্ত দেশগুলি। তাই সম্মুখ সমরে না-এলেও ইউক্রেনে অস্ত্র সাহায্য পাঠাতে রাজি হয়েছে তারা। দেরিতে হলেও অবস্থান বদলেছে আমেরিকা। গত সপ্তাহেই কিভে এসে জ়েলেনস্কির সঙ্গে দেখা করে আরও ৭কোটি ডলারের অস্ত্র সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন পেন্টাগনের প্রধান লয়েড অস্টিন। সফরে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি জিতবই— যুদ্ধে জিততে চাইলে প্রথমে এই আত্মবিশ্বাস প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি ওরা (ইউক্রেন) জিতবে— ওরাও সেটা বিশ্বাস করে। প্রয়োজনীয় সমর্থন আর সরঞ্জাম পেলে ওরা জিতবেই।’’
গতকাল ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী ব্রায়ানস্ক এলাকায় তেলের ডিপোতে জ়েলেনস্কি বাহিনীর হামলার কথা জানিয়েছিল মস্কো। আজ ফের কিভের বিরুদ্ধে সীমান্তবর্তী বেলগোরোড অঞ্চলে হামলার অভিযোগ তুলেছে তারা। বেলগোরোডের গভর্নর জানিয়েছেন, ওই হামলায় অন্তত দু’জন গ্রামবাসী গুরুতর জখম হয়েছেন।
অন্য দিকে, ইউক্রেনের চের্নোবিল পারমাণবিক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় তেজস্ত্রিয়তার পরিমাণে অস্বাভাবিকত্ব লক্ষ করা গিয়েছে বলে আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি পারমাণবিক নজরদার সংস্থা জানিয়েছে। কিছু দিন আগে এলাকাটিতে রুশ বাহিনী ঢুকে পড়েছিল। ইতিমধ্যে তারা চের্নোবিল ছাড়লেও ভারী যুদ্ধাস্ত্রের আনাগোনা ও সামরিক ক্রিয়াকলাপের কারণে পরমাণু কেন্দ্রটির তেজস্ত্রিয়তার পরিমাণ বেড়েছে বলে দাবি সংস্থার।
রাজশাহীর সময় / জি আর