রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনা শরিফ হিজরত করে প্রতি বছরই ইতেকাফ করতেন। ইমাম জুহরি বলেন, ‘ওইসব লোকের জন্য আমার আশ্চর্য লাগে, যারা ইতেকাফ করে না। অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝেমধ্যে অন্যান্য (সুন্নত) আমল বাদ দিলেও মদিনা শরিফ হিজরতের পর আজীবন মসজিদে নববিতে ইতেকাফ করতেন।’ (শামেলা)। এমনকি এক বছর তিনি ইতেকাফ করতে না পারায় পরবর্তী বছর ২০দিন ইতেকাফ করেন। আর যেই বছর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নেন, সে বছর ২০দিন ইতেকাফ করেন।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক রমজানে দশদিন ইতেকাফ করতেন। সুতরাং যে বছর তার ওফাত হয়, সে বছর তিনি ২০দিন ইতেকাফ করেন।’ (বোখারি : ২০৪৪)।
মুসলিম সমাজ যদি জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে চায়, তাহলে রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফের বিকল্প নেই। কারণ, প্রত্যেক ইতেকাফে দোজখ আপনার থেকে দূরে সরছে। জান্নাত আপনার কাছে আসছে। ইতেকাফরত ব্যক্তির ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাস (রা.)-কে বলেছিলেন, ‘যে ব্যক্তি আপন ভাইয়ের সহযোগিতায় হেঁটে হেঁটে আসে, তার এ সহযোগিতা (তার জন্য) দশ বছর ইতেকাফ অপেক্ষা উত্তম । আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিনের ইতেকাফও করে থাকে, আল্লাহতায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক আড়াল সৃষ্টি করে দেন। এক-একটি খন্দক আসমান-জমিনের চেয়ে বেশি দূরত্বসম।’ (মাজমায়ে যাওয়ায়েদ : ৮/৩৫১)।
ইতেকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা (কেফায়া)। সুন্নতে মুয়াক্কাদা হলো, কাজ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধারাবাহিকভাবে আদায় করেছেন, তবে মাঝেমধ্যে ছেড়েও দিয়েছেন। ফকিহগণ ইতেকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা (কেফায়া) বলেছেন। যে কাজ এলাকাবাসীর কেউ একজন আদায় করে, তখন সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়, তাকে কেফায়া বলা হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ধারাবাহিকতাই হলো দলিল যে, ইতেকাফ একটি মৌলিক সুন্নত (সুন্নতে মুয়াক্কাদা)। কেননা, ইতেকাফে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়।আল্লাহর ঘর মসজিদের প্রতিবেশী হয়। দুনিয়াবিমুখ হয়। আর তাঁর ইবাদতে নিজেকে নিয়োজিত করে। রহমতের খোঁজে ও মাগফিরাতের আশাবাদী হয়ে আল্লাহর খাঁটি বান্দায় পরিণত হয়।
জীবনে চলার পথে যেমন প্রতিটা বিষয়ে কিছু না কিছু বিধিনিষেধ থাকে, তেমনি ইতেকাফের ক্ষেত্রেও বেশকিছু নিয়ম আছে; যার জ্ঞান একজন মুতাকিফের থাকা বাঞ্ছনীয়। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘অপরিহার্য প্রয়োজন ছাড়া মুতাকিফ মসজিদ থেকে বেরুবে না। যেমন—টয়লেটে যাওয়া, ফরজ গোসল করতে যাওয়া, আর অপারগতার কারণে পানাহারে বাইরে বের হওয়া।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া : ২৬/২১৬)। আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ইতেকাফ থেকে রাতদিন মানবীয় প্রয়োজন ছাড়া বেরুতেন না।’ র্অথাৎ তিনি প্রস্রাব-পায়খানার জন্য মসজিদ থেকে বেরুতেন। (মাকতাবায়ে শামেলা)।
রাজশাহীর সময়/এএইচ