সুনামগঞ্জে গত ২দিনে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে এক যুবলীগ নেতা ও হত্যা মামলার প্রধান আসামীসহ মোট ৮জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রবিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে পৃথক ভাবে গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে কারাঘারে পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশ ও এলাবাবাসী সূত্রে জানা গেছে- জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় গতকাল শনিবার (৯ নভেম্বর) ভোরে অভিযান চালিয়ে ওয়ারেন্ট ভূক্ত আসামী ওই উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের ছোট শেওড়া গ্রামের আব্দুল মুমিন (৫০), একই গ্রামের শাহিন মিয়া (২০) ও হিরন মিয়া (৪৬) কে গ্রেফতার করাসহ মধ্যনগর উপজেলায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ওয়ারেন্ট ভূক্ত পলাতক আসামী ওই উপজেলার দোলাশিয়া গ্রামের রোকন মিয়া (৩৭), একই গ্রামের মোকশেদ মিয়া (৫৫) ও পাশের হরিনাকান্দি গ্রামের আব্দুল খালেদ (৫০) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এদিকে গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) ভোর রাতে তাহিরপুর উপজেলার বহুল আলোচিত সীমান্ত গডফাদার ও বালি খেকো আওয়ামীলীগ নেতা তোতলা আজাদের সহযোগী যুবলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য মুশাহিদ আলম রানু (৪৫) কে জাদুকাটা নদীর তীর থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ফলে জাদুকাটা নদীর তীরবর্তী ঘাগটিয়া, মানিগাঁও, ঘাগড়া ও আদর্শগ্রামসহ আরো ৮-১০টি গ্রামের সাধারণ অসহায় মানুষের মাঝে স্বস্থি ফিরে এসেছে। কারণ গত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য যুবলীগ নেতা মুশাহিদ আলম রানু তার একান্ত সহযোগী আওয়ামীলীগ নেতা সীমান্ত গডফাদার তোতলা আজাদকে নিয়ে সিন্ডিকেড তৈরি করে জাদুকাটা নদীর তীর কেটে অবৈধ ভাবে বালি বিক্রি করাসহ গভীর পাথর কোয়ারী (মৃত্যুকূপ) তৈরি করে পাথর বিক্রি করে। এছাড়াও ড্রেজার ও সেইভ মেশিন চালিয়ে রাতারাতি হয়েগেছে কোটিকোটি টাকার মালিক।
শুধু তাই নয়, সাংবাদিক ও পুলিশের নাম ভাংগিয়ে উত্তোলন করেছে চাঁদা। তারা সিন্ডিকেডের মাধ্যমে জাদুকাটা নদীর তীর কেটে ও গভীর কোয়ারী তৈরি করে বালি ও পাথর উত্তোলনের কারণে এপর্যন্ত সহশ্রাধিক পরিবার তাদের সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েগেছে। এছাড়া জাদুকাটা নদীর তীর কেটে ও গভীর কোয়ারী তৈরি করে বালি ও পাথর উত্তোলনকে কেন্দ্র করে একাধিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত হয়েছে শতশত মানুষ। এছাড়া পাথর কোয়ারীতে বালি চাপা পড়ে, সংঘর্ষে ও দুইগ্রুপের দ্বন্দের জের ধরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করাসহ মৃত্যু হয়েছে ১০জনের। এসব ঘটনা নিয়ে থানায় হয়েছে একাধিক মামলা।
এসব মামলায় যুবলীগ নেতা রানু মেম্বার একাধিক বার গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে গেলেও তার একান্ত সহযোগী আওয়ামীলীগ নেতা তোতলা আজাদসহ অন্যরা এখনও রয়েছে ধরাছোয়ার বাহিরে। একারণে তাদের অবৈধ ভাবে অর্জিত কোটিকোটি টাকা ও সম্পদ উদ্ধারসহ বিচারের দাবীতে এলাকার ভোক্তভোগী জনসাধারণ জাদুকাটা নদীর তীরে ও বাদাঘাট বাজারে একাধিক বার মানববন্ধন করাসহ জেলা শহর ও উপজেলা সদরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেছে গত আওয়ামীলীগ সরকারের আমালে। তারপরও নেওয়া হয়নি আইনগত কোন পদক্ষেপ।
তাই গডফাদার তোতলা আজাদের অপকর্মের আস্তানা বাদাঘাট ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের বিলাস বহুল বাড়িসহ সিলেট ও সুনামগঞ্জের বাসায় অভিযান চালিয়ে তার অবৈধ কোটিকোটি টাকা ও সম্পদ উদ্ধারের জন্য প্রশাসন ও বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবী ভোক্তভোগীদের।
অপরদিকে এদিন সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে অভিযান চালিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামী জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) কে গ্রেফতার করা হয়। সে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাঁক ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের মাহতাব আলীর ছেলে।
জগন্নাথপুর থানার ওসি মোখলেছুর রহমান, মধ্যনগর থানার ওসি সজিব রহমান, তাহিরপুর থানার ওসি দিলোয়ার হোসেন ও শান্তিগঞ্জ থানার ওসি আকরাম হোসেন পৃথক ভাবে বিশেষ অভিযান চালিয়ে যুবলীগ নেতা ও হত্যা মামলার আসামীসহ মোট ৮জনকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান- এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।