২১ ডিসেম্বর ২০২৪, শনিবার, ১১:৪৬:৫৯ অপরাহ্ন


ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়া, আসন ফাঁকা থাকলেও জাবিতে ভর্তির সুযোগ হয় না
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১০-২০২৪
ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়া, আসন ফাঁকা থাকলেও জাবিতে ভর্তির সুযোগ হয় না


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ২০ অক্টোবর থেকে। কিন্তু এখনও প্রায় ২০টি আসন ফাঁকা রয়ে গেছে। এরমধ্যেই বিড়ম্বনা এড়াতে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে হতাশায় পড়েছেন ভর্তির অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, ত্রুতিপূর্ণ ভর্তি প্রক্রিয়ায় প্রতি বছর প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ আসন ফাঁকা থাকছে জাবিতে!

শিক্ষা শাখায় কথা বলে জানা যায়, ১৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চম মেধাতালিকা দেয়া হয়। সেখান থেকে ভর্তি শেষেও বিভিন্ন অনুষদে প্রায় ২০টি আসন ফাঁকা রয়ে গেছে। এরমধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ছাত্রদের ২১৫৮ পর্যন্ত সাবজেক্ট পেয়েছে। সেখানে ফাঁকা আছে ছয়টি আসন। আর ছাত্রীদের মধ্যে মেধাতালিকায় ৬৫৯ পর্যন্ত সাবজেক্ট পেয়েছে। সেখানেও ছাত্রীদের ছয়টি আসন ফাঁকা আছে।

একইভাবে ‘সি’ ইউনিটে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ছাত্রীরা ১৯৯ পর্যন্ত সাবজেক্ট পেয়েছে। সেখানে এখনও পর্যন্ত ফাঁকা আছে দুটি আসন।

ওই ইউনিটে ২০২ তম মেধাতালিকায় আছেন উম্মে হানি নামে এক ভর্তিচ্ছু। তিনি বলেন, ‘ফাঁকা দুটি আসনের জন্য ষষ্ঠ মেধাতালিকা প্রকাশ হলেই আমি ভর্তি হতে পারবো। ২০০ তম সিলিয়ালে থাকা ছাত্রী আবেদন করেনি। ফলে আমার সুযোগ আছে।’

আমি দ্বিতীয় বারের মতো জাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি জানিয়ে  তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাপ্য সিটগুলোতে পড়ার সুযোগ পাচ্ছি না। এসব সিট ফাঁকা রেখে তো কোন লাভ নেই। কিন্তু যদি আমাদের ভর্তির সুযোগ দেয় তাহলে আমরা নতুন জীবন ফিরে পাবো। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আমরা ছয়-সাতজন ১৭, ১৮ এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে গিয়েছি। শিক্ষা শাখার প্রধান সৈয়দ আলী রেজার সাথে কথা বললে, তারা ভর্তি নিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এরপর ডিন অফিস থেকে উপাচার্যের সাথে দেখা করতে বলেছে। কিন্তু সেখানে গেলেও আমাদের দেখা করতে দেয়নি।’

‘এখন আমার কোথাও পড়ার সুযোগ নেই। বেসরকারিতে পড়ার মতো পারিবারিক সামর্থ্য আমার নেই’- যোগ করেন উম্মে হানি।

একই বিষয়ে সময় সংবাদ কথা বলে ‘এ’ ইউনিটে ৬৬৩ তম মেধাতালিকায় থাকা শেখ কাহরুবা মুনিরা মুগ্ধের সাথে। তিনি বলেন, ‘মেধাতালিকায় ৬৫৯ পর্যন্ত সাবজেক্ট পেয়েছে। এখনও আমার ভর্তির সুযোগ আছে। আমি সেকেন্ড টাইমার। ১৭ সেপ্টেম্বর আমি ডিন অফিসে কথা বলে সিট ফাঁকা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে শিক্ষা শাখায় সৈয়দ আলী রেজা স্যারের সাথে কথা বলি। তিনি ভর্তির সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দেন। তবে ডিন অফিস থেকে বলে ভিসি স্যার অনুমতি দিলে ভর্তি সম্ভব, যেহেতু সিট ফাঁকা আছে।’

‘এরপর আমি ভিসি স্যারের সাথে দেখা করতে তার অফিসে অপেক্ষা করতে থাকি। এরমধ্যে সেখানে আলী রেজা স্যার আসেন। তিনি তখনও বলেন, “ভিসি স্যার চাইলেও তোমাকে ভর্তি করাতে পারবে না। এটা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত।” এরপর ভিসি স্যারের পিএস খুব বাজে ব্যবহার করায় আমি চলে আসি।’

‘এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর আমার খালামনি (জাবির সাবেক ছাত্রী, বর্তমানে জবি শিক্ষক) সহ আবার যাই ভিসি স্যারের সাথে দেখা করতে। ওইদিন ভিসি স্যারের পিএস একটি দরখাস্ত লেখায়। এরপর আমরা তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও আর দেখা করতে দেয়নি।’
 
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ আলী রেজা বলেন, প্রথমে ক্লাস শুরুর তারিখ ছিল ২১ জুলাই। আন্দোলনের জন্য ওই তারিখ পিছিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর করা হয়। এরমধ্যে আবার ৫০টির মতো আসন ফাঁকা হয়ে যায়। এরপর পঞ্চম মেধাতালিকা প্রকাশ করে ভর্তি শেষে দেখা যায় আবার প্রায় ২০টির মতো আসন ফাঁকা হয়েছে। এরপর কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভর্তির সকল কাজ সমাপ্ত করে ২০ অক্টোবর ক্লাস শুরুর তারিখ দেখা হয়।

কেন আসন ফাঁকা রেখে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করা হল- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন ইউনিট থেকে ভর্তি বাতিল করে। ফলে অটো মাইগ্রেশন হয়ে সাবজেক্ট পরিবর্তন হয়। এতে শিক্ষার্থীরা বিড়ম্বনায় পরে। তারা তখন বিভিন্ন মাধ্যমে অটো মাইগ্রেশন আটকানোর জন্য তদবির করে। এতে শিক্ষার্থীরাও বিড়ম্বনায় পড়ে, আমরা যারা কাজ করি তারাও বিড়ম্বনায় থাকি। তাই, ২০১৮ সাল থেকেই আমরা ক্লাস শুরু আগেই আসন ফাঁকা থাকলেও ভর্তি কার্যক্রম শেষ করি।’

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, কর্মকতা-কর্মচারীরা কাজের অনিহা থেকেই আসন ফাঁকা রেখেই ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করছে।

যদিও আসন ফাঁকা থাকার বিষয়টিকে ভর্তি প্রক্রিয়ার ত্রুটি হিসেবেই আখ্যায়িত করলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আগে বিভাগ ভিত্তিক পরীক্ষা হতো। তারা পছন্দমতো সাবজেক্টে পরীক্ষা দিতো। যারা চান্স পেতো তারা খুব কমই চলে যেত। আর এখন ইউনিট ভিত্তিক পরীক্ষা দেয়। এটা অনেকটা জোর করে ইনজেকশন পুশ করানোর মতো। একজন ভর্তি হতে চায় ফার্মেসিতে, তাকে দেয়া হয়েছে বোটানি। স্বাভাবিকভাবে সে পড়তে চাইবে না। সে বিকল্প খোঁজা শুরু করবে।’

প্রতি বছর প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ সিট ফাঁকা থাকছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্লাস শুরুর পর আরও প্রায় দেড়শ’র মতো সিট ফাঁকা হবে। কৃষিতে যারা চান্স পাবে তারা চলে যাবে। এখন যারা বোটানি, প্রাণিবিদ্যাতে ভর্তি হয়েছে তারা মেডিকেলে কোচিং করতেছে। তারা চলে যাবে। কিন্তু যদি সাবজেক্টভিত্তিক পরীক্ষা হতো তাহলে এটা অনেক কম হতো। আবার চলে গেলেও আমাদের পেছন থেকে ভর্তি করাতেও সহজ হতো। এখন যেটা করতে গেলে পুরো ফেকাল্টির মাইগ্রেশন হয়, অধিকাংশ পরিবর্তন হয়ে যায়। এতে সবার ভোগান্তি বাড়ে।’
 
এই উপ-উপাচার্য বলেন, ভর্তির এই প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের আবার চিন্তা করতে হবে। প্রয়োজনে আবার সাবজেক্টভিত্তিক ভর্তিতে ফিরে যেতে হবে।