রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে এক নবজাতককে নিয়ে উধাও হয়েছেন এক নারী।
বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির বাবার নাম সুমন মিয়া। তার বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর গ্রামে। সুমনের স্ত্রীর নাম মনি খাতুন (১৮)। তার বাবার বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার গোকুলনগর গ্রামে। সন্তান প্রসবের জন্য গত ৪ অক্টোবর মনিকে রামেক হাসপাতালের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এরপর রোববার (৬ অক্টোবর) একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন মনি খাতুন। জন্মের পর বাচ্চাটির ওজন ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম। এজন্য বাচ্চাটিকে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়।
বুধবার অজ্ঞাতপরিচয় এক নারী মাস্ক পরা অবস্থায় বাচ্চার মাকে সন্তানের ভালমন্দ বিষয়ে খোঁজ নেন। তখন বাচ্চার মা বাচ্চার সমস্যার কথা তাকে জানান। ওই নারী তাকে আশ্বস্ত করেন, বাইরের একটি ক্লিনিকে ভালো ডাক্তার আছে। সেখানে দেখালে তার বাচ্চা ভালো হয়ে যাবে। এ বিষয়ে নবজাতকের নানি রুমি বেগমকে জানালে তিনি বাচ্চার সুস্থতার জন্য ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। ওই নারী তার মাকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বাচ্চাদের চিকিৎসা ও টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করেন।
মনি খাতুন জানান, বুধবার বিকেল ৪টার দিকে তার মা রুমি বেগম বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বলেন, ‘বাচ্চার গরম লাগছে। বাইরে থেকে বাতাস খাইয়ে নিয়ে আসি। এ বলে ছেলেকে বাইরে নিয়ে যান। এরপর থেকে শিশুটির খোঁজ মিলছে না।
শিশুটির বাবা সুমন আলী বলেন, বিকেলে হাসপাতালে আমার শাশুড়ি বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় বোরকা পরিহিত অপরিচিত এক মহিলা নিজেকে স্বেচ্ছাসেবী পরিচয় দিয়ে বাচ্চা অসুস্থ বলে জানান। সে আমার শাশুড়ির সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করেন এবং সহায়তার কথা বলে কিছু টাকাও ধরিয়ে দেন। এরপর ভালো চিকিৎসার কথা বলে শাশুড়ি-সহ শিশুটিকে নিয়ে নগরীর এক হোটেলে যান। সেখান থেকে কৌশলে বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে যান।
এদিকে, বাটার মোড়ের ওই হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার বিকেল ৪টা ২৩ মিনিটে বোরকা পরিহিত দুজন নারী হোটেলে প্রবেশ করছেন। এরপর মুখে মাস্ক পরিহিত ওই নারী হোটেলের রিসিপশনে রুম বুকিং দিচ্ছেন। তার পাশেই নবজাতককে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তার নানিকে। পরে একটি রুমে প্রবেশ করেন তারা। এর কিছুক্ষণ পরই ৪টা ৪০ মিনিটে হোটেলের রুম থেকে মাস্ক পরিহিত ওই নারী বাচ্চা নিয়ে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে নবজাতকের কোনো সন্ধান মেলেনি।
রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, এ ঘটনা জানার পর থেকে আমরা নিজেরাও ক্ষতিয়ে দেখছি। কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ এবং পুলিশের সহযোগিতায় খুব দ্রæত একটা সমাধানে আসতে পারবো বলে আশা করি।
অন্যদিকে এ ঘটনার পর বুধবার রাতে নবজাতকের নানা হাসান আলী ও নানি রুমি বেগম রাজপাড়া থানায় অভিযোগ করতে যান। পরে তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক হওয়ায় পুলিশ তাদের আটক রাখে।
রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আটকের বিষয়টি সেরকম নয়। তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক ছিল। ওই নারীর কাছ থেকে তারা কিছু টাকাও নিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
আরএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন জানান, রংপুর থেকে শিশুটি বাবা আসছেন। তিনি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে পুলিশ সিটি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই নারীকে শনাক্তের চেষ্টা করছে।