যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হেনেছে চরম বিপজ্জনক হ্যারিকেন মিল্টন। ভারী বৃষ্টিপাত, ঝোড়ো বাতাস ও প্রাণঘাতী জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতার মধ্যে স্থানীয় সময় বুধবার (৯ অক্টোবর) দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানে ঝড়টি।
মহাশক্তিশালী সামুদ্রিক ঝড় হ্যারিকেন মিল্টনের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সতর্কতা আগেই দেওয়া হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে হ্যারিকেনের তাণ্ডবে ইতোমধ্যেই ১২ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্যারিকেন মিল্টন বুধবার ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলে আছড়ে পড়েছে। এটি টর্নেডোর জন্ম দিয়েছে এবং এই অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত বয়ে এনেছে। এতে করে এটি টাম্পা উপসাগর এলাকাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে এবং সেখানে সমুদ্রের পানিতে প্রাণঘাতী ঢেউ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে মাত্র দু’সপ্তাহ আগে হ্যারিকেন হেলেনের আঘাতে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের এই অঙ্গরাজ্যে প্রায় ২০ লাখ লোককে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আরও লাখ লাখ মানুষ ঝড়ের অভিক্ষিপ্ত পথে বাস করছেন।
হ্যারিকেন মিল্টন আঘাত হানার আগমুহূর্তে কর্মকর্তারা বুধবার ক্রমবর্ধমান ভয়ানক সতর্কতা জারি করেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জনগণকে স্থানীয় নিরাপত্তা বিধান অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে বাইডেন বলেন, “এটি আক্ষরিক অর্থেই জীবন ও মৃত্যুর বিষয়।”
এদিকে হ্যারিকেন মিল্টনের জেরে ফ্লোরিডায় কমপক্ষে ১২ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। পাওয়ারআউটেজ.ইউএস ট্র্যাকার অনুসারে, অঙ্গরাজ্যজুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, এখন পর্যন্ত ১২ লাখেরও বেশি গ্রাহক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বেশিরভাগ ঘটনাই ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চল জুড়ে রিপোর্ট করা হয়েছে, যেখানে মিল্টন সম্প্রতি আঘাত হেনেছে। এছাড়া টাম্পা এবং আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, “অত্যন্ত বিপজ্জনক” এবং “জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ” হ্যারিকেন মিল্টন ফ্লোরিডার সিয়েস্তা কিতে আঘাত হেনেছে বলে মার্কিন জাতীয় হ্যারিকেন সেন্টার জানিয়েছে।
গভর্নর রন ডিসান্টিস সতর্ক করার পর প্রচন্ড বাতাস এবং আকস্মিক বন্যার সতর্কতাসহ ক্যাটাগরি থ্রি ঝড় হিসাবে আঘাত হানে হ্যারিকেনটি।
এছাড়া কয়েক ডজন টর্নেডো এবং ঝড়ের জলোচ্ছ্বাসের বিষয়ে সতর্কতা জারি করায় লক্ষাধিক মানুষ বুধবার অঙ্গরাজ্যটি থেকে পালিয়ে গেছেন বলেও জানিয়েছে বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হ্যারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, ফ্লোরিডার পশ্চিম-মধ্যাঞ্চলের জন্য সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক হ্যারিকেনের রেকর্ড গড়তে পারে মিল্টন।
এই ধরনের ঝড়ের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের অংশ হচ্ছে জলোচ্ছ্বাস। মূলত ঝড়ের শক্তিশালী বাতাসের কারণে পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। হ্যারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, যেসব এলাকায় ঝড়ের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি সেখানে জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা ৩ থেকে ৪ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
এমন অবস্থায় হ্যারিকেন মিল্টন আছড়ে পড়ার আগেই ফ্লোরিডা উপদ্বীপের প্রায় পুরো পশ্চিম উপকূলে ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা জারি করা হয়।