জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে শ্রেণি পরিবর্তন করে ‘ভিটা বানানো’ রাজশাহী নগরের আরাজি শিরোইল মৌজার সেই পুকুরের খতিয়ান অবশেষে সংশোধন করা হয়েছে। রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া ভূমি অফিস আজ সোমবার বিকেলে পুকুরটিকে আগের হোল্ডিংয়ে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। ভূমি অফিস থেকে পুকুরপাড়ে লাল নিশান টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে; আর পরিবেশ অধিদপ্তর পুকুর ভরাট না করার জন্য সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে।
পুকুরটিতে এখনো টলমল করছে পানি। অথচ দুই বছর আগে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে পুকুরটির শ্রেণি ভিটা করা হয়েছিল। এ নিয়ে ‘রাজশাহী মহানগরে বাস্তবে পুকুর হয়ে যাচ্ছে প্লট’ শিরোনামে সোমবার প্রথম আলো, সমকাল, সময়ের কাগজ, রাজশাহীর সময় সহ বেশ কিছু জাতীয় পত্রিকা ও অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এক দিনের মধ্যে তারা একটি পুকুরের কাগজপত্র সংশোধন করে প্রকৃত অবস্থায় ফেরত দেওয়ার এই উদ্যোগ নেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরের আহম্মদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের আরাজি শিরোইল মৌজার এই পুকুরটির আর এস খতিয়ান-৪৪, জে এল-১১ এবং রকম পুকুর। যা বহুকাল ধরে মেহেরের পুকুর নামে পরিচিত। ২০২২ সালের মার্চ মাসে পুকুরটির অংশবিশেষ নগরের রানীনগর এলাকার মো. শহিদুল ইসলাম ও তালাইমারী এলাকার তৌফিক হাসান মূল মালিকের কাছ থেকে কিনে নেন। এরপর গত বছর ৫ জুন বোয়ালিয়া ভূমি অফিসে আস্ত পুকুরের শ্রেণি বদলে ভিটা (আবাসিক) করে ফেলা হয়। এখানে শহীদুল ইসলামের জমির পরিমাণ ৯ দশমিক ০৫৫ শতাংশ। তৌফিক হাসানের পরিমাণ ০৮০৬ শতাংশ।
অভিযোগ রয়েছে, নগরে একটি প্রভাবশালী মহল সস্তায় পুকুর কিনে এভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করে ভরাট করে চড়া দামে প্লট আকারে বিক্রি করছে। যদিও নগরে পুকুর ভরাট নিষিদ্ধের ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। তা ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের আনুমতি ছাড়া কোনো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তারা এই পরিবর্তন করেছে।
একইভাবে নগরের পোস্টাল একাডেমির উত্তর পাশের বড়বনগ্রাম মৌজার ৮২ নম্বর জে এল–এর ২০২৪ দাগের ১ একর ৬৩ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুর ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রি করা হয়েছে। তার ১৬টি প্রস্তাবিত খতিয়ান হাতে এসেছে। প্রতিটি প্রস্তাবিত খতিয়ানেই জমির শ্রেণি পুকুরের জায়গায় ‘ধানী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার এই খবর দেখে বোয়ালিয়া ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা আরাজি শিরোইল মৌজার পুকুরটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন কাগজপত্রে ভিটা বানানো পুকুরটি এখনো পুকুরই রয়েছে। তারা সেখানে সরকারের উপস্থিতি প্রমাণের জন্য লাল নিশান টাঙিয়ে দেন। এই জমি নিয়ে পরবর্তী কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে।
বোয়ালিয়া ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) অভিজিৎ সরকার জানান, দলিলে জমির শ্রেণি পুকুর রয়েছে। ক্রেতা পুকুর হিসেবেই কিনেছেন; কিন্তু খারিজ করার সময় জমির শ্রেণি ‘ভিটা’ রয়েছে, এমন একটি জাল কাগজ উপস্থাপন করেছেন। অনলাইন নামজারির কারণে এটা বোঝা যায়নি। সরেজমিনে দেখার পরে তাদের প্রস্তাবিত খতিয়ান সংশোধন করা হয়েছে। এই জমি আগের হোল্ডিংয়ে ফিরে যাবে। বড়বনগ্রামের পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে কাল মঙ্গলবার বসবেন বলে তিনি জানান।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহমুদা পারভীনও পুকুরটি পরিদর্শন করেন। অধিদপ্তরের পরিদর্শক নীল রতন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, পুকুর ভরাট করা যাবে না। ‘পুকুর ভরাট করা দণ্ডনীয় অপরাধ’ লেখা একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। এরপর ভরাট করা হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।