২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:১০:৪৩ পূর্বাহ্ন


ভালোবাসার টানে ফিলিপাইন ছেড়ে রাজশাহীতে এসে ঘর বাঁধলেন দুই তরুণী
তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১০-২০২৪
ভালোবাসার টানে ফিলিপাইন ছেড়ে রাজশাহীতে এসে ঘর বাঁধলেন দুই তরুণী ভালোবাসার টানে ফিলিপাইন ছেড়ে রাজশাহীতে এসে ঘর বাঁধলেন দুই তরুণী


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) সুবাদে তাদের পরিচয়। সেই পরিচয় ধীরে ধীরে রূপ নেয় পরিণয়ে। এরপর ভালোবাসার টানে সুদূর ফিলিপাইন ছেড়ে বাংলাদেশে উড়ে এসে ঘর বাঁধলেন দুই তরুণী। 

এরপর দুজনই বসেন বিয়ের পিঁড়িতে। তবে বাংলাদেশি দুই তরুণের সঙ্গে ফিলিপাইনের দুই তরুণীর এই বিয়েতে ছিল না কোনো জাঁকালো অনুষ্ঠান। তারপরও তাদের ভালোবাসার গল্প এখন সবার মুখে মুখে। এই ঘটনা জানাজানির পর আশপাশের গ্রামে হৈচৈ পড়ে গেছে। সবাই দেখতে আসছেন এই নব দম্পতিদের।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

এই দুই দম্পতি হলেন, বাংলাদেশের রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের রাকিবুল ইসলাম (২২) ও ফিলিপাইনের জাম্বোয়াঙ্গা উপদ্বীপ অঞ্চলের খাদিজা ইসলাম (২২)। অন্যজন হলেন, একই উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের মালশিরা গ্রামের রেজাউল করিম (৩৩) ও ফিলিপাইনের নেগ্রোস দ্বীপের পশ্চিম অংশ বাগো শহরের মরিয়ম খাতুন (৩২)। মূলত এই দুই তরুণ প্রেমিকের বাড়ি তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের পাশাপাশি গ্রামে।

ওই দুই তরুণের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে ফেসবুকে রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয় ফিলিপাইনের জাম্বোয়াঙ্গা উপদ্বীপ অঞ্চলের বাসিন্দা খাদিজা ইসলামের। তবে খাদিজা তখন সৌদি আরবের একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। আর ধর্ম পরিবর্তনের আগে তার নাম ছিল রিজেল ক্লিয়ার। ফেসবুকে এই দুজনের পরিচয় এক সময় বন্ধুত্বে গড়ায়; এরপর প্রেম-পরিণয়ে। ৫ অক্টোবর সৌদি আরব থেকেই বাংলাদেশে আসেন ফিলিপাইন নাগরিক খাদিজা ইসলাম। ঢাকা বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাকিবুল। পরদিন ৬ অক্টোবর পরিবারের সম্মতিতে মুসলিম রীতি অনুযায়ী বিয়ে করেন দু’জনে। বর্তমানে রাজশাহীর তানোরে থাকা নিজ বাড়িতেই বসবাস করছেন এই নব দম্পতি। আর ভিনদেশি বধূ পেয়ে খুশি রাকিবুলের পরিবারেরলোকজন।

এছাড়া ভালোবাসার টানে একই উপজেলার মালশিরা গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে রেজাউল করিমের কাছে ছুটে এসেছেন ফিলিপাইনের নেগ্রোস দ্বীপের পশ্চিম অংশে থাকা বাগো শহরের মরিয়ম খাতুন। ধর্ম পরিবর্তনের আগে তার নাম ছিল চারিনা মলিন। তবে এদের পরিচয়ের গল্প খানিকটা ভিন্ন। রেজাউল যখন সিঙ্গাপুরে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন তখন ফেসবুকে চারিনা মলিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

দীর্ঘদিন একসঙ্গে একদেশে কাজ করার সুবাদে রেজাউল ও চারিনার সাদামাটা পরিচয় একপর্যায় গড়ায় বন্ধুত্বে। পরে সেই সম্পর্ক আরও গভীর হয়। বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর রেজাউল দেশে ফেরেন। এরপর তিন মাস আগে ভিনদেশি ওই প্রেমিকাও বাংলাদেশে চলে আসেন। তিনি বাংলাদেশে পৌঁছে রাজশাহীর তানোর উপজেলার কাঁমারগা ইউনিয়নের মালশিরা গ্রামের প্রেমিক রেজাউলকে মুসলিম রীতিনীতিতে বিয়ে করেন। সেই থেকে গ্রামেই রেজাউলের সঙ্গে ঘর-সংসার করছেন।

রাকিবুল-খাদিজা এবং রেজাউল ও মরিয়ম এখন আলোচিত দম্পতি। তারা জানান, মূলত ফেসবুকেই তাদের সঙ্গে পরিচয়। স্মার্টফোনের সুবাদে তারা বাংলা ভাষাকে ইংরেজিতে এবং কখনও কখনও ফিলিপাইনের ভাষায় ট্রান্সলেট (রূপান্তর) করে ফেসবুকে চ্যাটিং (গল্প) করতেন ওই দু’জন তরুণীর সঙ্গে। এভাবে চেনাজানা ও বন্ধুত্ব। এরপর ধীরে ধীরে ভালো লাগা থেকে পরস্পর ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

এরপর তারা চারজনই তাদের পরিবারকে জানান যে, তারা বিয়ে করতে চান। এরপর চার পরিবারই সম্মতি দেয়। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল দূরত্ব। তাই তারা এক এক করে দেশে ফেরেন। এরপর প্রায় তিন মাস আগে প্রথমে মরিয়ম বাংলাদেশে আসনে এবং ৫ অক্টোবর আসেন খাদিজা। তারা মুসলিম রীতিনীতিতে বাংলাদেশি প্রেমিকদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তারা স্বামীর সংসারে আছেন এবং সুখে-শান্তিতে ঘর করছেন। সবার সহযোগিতায় চেষ্টা করছেন ভিন্ন পরিবেশে নিজেদের খাপ-খাওয়াতে।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই আশপাশের গ্রামের মানুষ তাদের বাড়িতে গিয়ে ভিনদেশি বধূ দেখতে চাইছেন। তাই এ নিয়ে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেই বিষয়ে থানা পুলিশ খোঁজখবর রাখছে।

তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ওই দু’জন তরুণী ফিলিপাইন নাগরিক। তাই বিদেশি নাগরিক হিসেবে তাদের নিরাপত্তাসহ অন্য কোনো সমস্যা যেন না হয়, সেজন্য থানা পুলিশকে দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।