২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১২:১৩:৩০ অপরাহ্ন


রাজশাহীতে চাঁদাবাজি ও হত্যাচেষ্টা মামলায় ‘ইমদাদ’ কারাগারে
দূর্গাপুর প্রতিনিধি :
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-১০-২০২৪
রাজশাহীতে চাঁদাবাজি ও হত্যাচেষ্টা মামলায় ‘ইমদাদ’ কারাগারে রাজশাহীতে চাঁদাবাজি ও হত্যাচেষ্টা মামলায় ‘ইমদাদ’ কারাগারে


রাজশাহীর দুর্গাপুরে আব্দুল লতিফ নামের এক ব্যবসায়ীকে হত্যাচেষ্টা, চাঁদাদাবি, বাড়িতে ভাংচুর ও ছিনতাই মামলার প্রধান আসামি ইমদাদুল হক ওরফে (এন্দা) (৪৫) কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত ।

বৃহস্পতিবার ২৬ (সেপ্টেম্বর) একটি মামলায় রাজশাহীর বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে তার জামিনের জন্য আবেদন করা হলে নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত । 

জানা গেছে, গ্রেপ্তার ইমদাদুল হক ওরফে এন্দা রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চককৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত এব্রাহিম আলীর ছেলে এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট ও চরমপন্থী সদস্য এমদাদুল হক ওরফে এন্দা । সে দীর্ঘদিন নিজ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে ছিলো। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদী দুর্গাপুর উপজেলার মসৎ ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ এর কাছে দীর্ঘ দিন থেকে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলো ইমদাদসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীরা। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করলে এবং আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাইলে গত ২২ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এমদাদুল হক ওরফে এন্দা একদল সন্ত্রাসী আব্দুল লতিফের বাড়ির সামনে রাস্তার উপরে পথরোধ করে। এমদাদুল হক ঘিরে ফেলে। এ সময় এন্দা তার হাতে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে আব্দুল লতিবকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ দিলে বাম হাতের ৫টি আঙ্গুল কেটে যায় ও কনিষ্ঠ আঙ্গুল কেটে মাটিতে পড়ে যায়। ফলে ২০টি সেলাই দিতে হয়েছে। জিআই পাইপ ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে শরীরের অন্যান্য স্থানেও রক্তাক্ত জখম করা হয়। এরপর আব্দুল লতিবের পকেট থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নেয় এন্দা ও তার বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনার পর এলাকার লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসী এন্দা ও তার বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় গত ২৭ জুন রাজশাহীর বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে লিখিত অভিযোগ দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালাত অভিযোগ আমলে নিয়ে দুর্গাপুর থানার ওসিকে এজাহার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের আদেশ দেন। মামলার পর থেকেই আত্নগোপনে চলে যায় সে। গত,২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে তার জামিনের জন্য আবেদন করা হলে নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত । 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে বিভিন্ন থানায় একাধীক মামলা রয়েছে। 

এন্দার বিরুদ্ধে তাহলিমুল আমীন রাহী নামের একজন বাদী হয়ে গত বছরের ২৮মে ভূয়া পুলিশের এসআই পরিচয় দিয়ে দস্যুতা করার অভিযোগ এনে রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় মামলা দায়ের করেন।  যাহা চলমান রয়েছে।

গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি জুলেখা খাতুন নামের আরও একজন নারী এই এন্দার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একই থানায় মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাসমিয়া তাবাসসুম নামের অপর এক নারী নগরীর চন্দ্রিমা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন।

২০২১ সালের (২৯ আগস্ট) জীবন আলী সবুজ নামের একজন শিক্ষানবিশ আইনজীবী নগরীর রাজপাড়া থানায় হুমকী, মারধোর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেন ইমদাদুল হক  ওরফে এন্দার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ও তার বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা রয়েছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের চাঁদা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ইমদাদুল হক ওরফে এন্দা ও তার বড় ভাই রেজাউল এক সময় পাবনায় থাকতেন। সেখানে তারা চরমপন্থী (এমএলএম লাল পতাকা) দলের সাথে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতেন। ওয়ান ইলেভেনের পর তারা এলাকায় এসে একই কার্যক্রম চালাতে থাকেন। এসব কারনে স্থানীয় মানুষজন তাদের উপরে অতিষ্ঠ।

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে আরো জানা গেছে, প্রতারক, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভূয়া ম্যাজিস্ট্রেট ও চরমপন্থী সদস্য এমদাদুল হক এন্দা ও তার ভাই সন্ত্রাসী রেজাউল করিম রেজা ও রেজার ছেলে চাঁদাবাজ শান্ত ও ইমদাদের শ্যালোক সোহাগ আলীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন।

উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুর্গাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম খলিলের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, আদালতের আদেশ পেয়ে প্রথমিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে । মামলার এজাহারভূক্ত প্রধান আসামিকে কারাগারে দিয়েছে আদালত। অনান্য আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। আদালতে মামলা বিচারাধীন।

এর আগে গত ৪ (আগষ্ট) দুর্গাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভূয়া ম্যাজিস্ট্রেট ও চরমপন্থী সদস্য এমদাদুল হক ওরফে এন্দা, তার ভাই রেজাউল করিম ওরফে রেজা ও রেজার ছেলে শান্ত আলীর অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছিলো মামলার বাদীসহ ভুক্তভোগীরা।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুর্গাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম খলিল জানান, আমি ছুটিতে ছিলাম। এস শুনেছি দূর্গাপুর থানার মামলা নং-৫, তাং- ১২ জুলাই মামলার প্রধান আসামী  ইমদাদুল হক, সে আদালতে জামিন নিতে গিয়ে আটক হয়েছে।  বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।