রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের কুহাড় উত্তরপাড়া জামে মসজিদের মুসল্লি ও কমিটির নেতৃবৃন্দের কাছে ১৮ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো: কামরুজ্জামান ওরফে আয়নালের নেতৃত্বে কয়েকজন লোক। এক মাসের মধ্যে দাবিকৃত টাকা পরিশোধ না করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করেছেন তারা। এছাড়া সালিশী বৈঠকের নামে মসজিদটির পাঁচজন মুসল্লিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে জোরপূর্বক ননজুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন কামরুজ্জামান ওরফে আয়নাল ও তার লোকজন। আয়নাল ও তার লোকজনের অব্যাহত হুমকির কারণে কয়েকজন মুসল্লি ও কমিটির সেক্রেটারিসহ একাধিক সদস্য চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। গতকাল বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়।
দুর্গাপুর উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের কুহাড় উত্তরপাড়া জামে মসজিদের মুসল্লি ও কমিটির নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন কুহাড় উত্তরপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আব্দুস সাত্তার। তিনি বলেন, উপজেলার একটি খাস পুকুর (জেএল নং ৬৫, মৌজা কুহাড়, আরএস খতিয়ান নং ০১, হাল দাগ নং ৯৬৫, পরিমাণ ১.০০ একর) কুহাড় উত্তরপাড়া মসজিদের নামে যথারীতি লীজ গ্রহণ সাপেক্ষে ভোগ দখল করে আসছেন। এই খাস পুকুরের যাবতীয় আয় মসজিদের ফাÐে জমা করা হয়। কিন্তু খাস পুকুরটি নিজেদের দাবি করে আদালতে মামলা করেন প্রতিপক্ষের লোকজন। পরবর্তীতে মামলার রায় সরকার পক্ষে অর্থাৎ মসজিদটির অনুক‚লে যায়। পরে এ নিয়ে আপিল করলে তার রায়ও মসজিদের অনুক‚লে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ওরফে আয়নালের নেতৃত্বে গত ৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় কুহাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সালিশী বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
এতে আয়নালের নেতৃত্বে তার সাথে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন কামরুজ্জামান (আয়নাল), ইন্তাজ আলী, হাতেম আলী, জিল্লুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, নুরুল হক, ইউনুছ আলী, মো: আলীমুদ্দিন, আব্দুস সালাম ও মো: সালাউদ্দিন। সালিশী বৈঠকে তারা জোটবব্ধ হয়ে মসজিদের ক্যাশিয়ার আক্তার আলীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে তার নিকট থাকা মসজিদ ফাÐের এক লাখ টাকা নিয়ে নেন। একই সঙ্গে তারা মসজিদের ৪৯ জন মুসল্লির নিকট চাঁদা হিসেবে ১৮ লাখ টাকা দাবি করেন। এক মাসের মধ্যে ১৮ লাখ টাকা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আয়নালের হাতে দিতে হবে বলে সময় নির্ধারণ করে দেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবিকৃত ১৮ লাখ টাকা না দিলে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন তারা। শুধু তাই নয়, সালিশী বৈঠকের নামে আয়নাল ও তার লোকজন মসজিদের পাঁচজন মুসল্লিকে ননজুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। যে পাঁচজন মুসল্লির কাছ থেকে ননজুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করে নেয়া হয় তারা হলেন- আক্তার আলী, মো: সাদ্দাম, জুলমাত, ছোরাপ আলী ও বাবর আলী। এছাড়া মসজিদের নামে লীজ নেওয়া পুকুরটি হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রতিপক্ষের লোকজন জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন মুসল্লিরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মসজিদের মুসল্লি ও কমিটির পক্ষ থেকে গত ১ অক্টোবর রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তারা সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা এবং অবিলম্বে অভিযুক্ত চাঁদাবাজদের দৌরাতœ বন্ধ এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
এদিকে অভিযোগ জানতে চাইলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো: কামরুজ্জামান ওরফে আয়নাল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমাজে হেয় করার জন্য এসব অভিযোগ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি’।