প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব এ সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের সংস্কারে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
জাতিসংঘের আবাসিক টিম আপনাকে সহায়তা করতে চায় উল্লেখ করে অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, 'সদ্য গৃহীত জাতিসংঘের "প্যাক্ট অফ দ্য ফিউচার" বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং এর প্রণোদনামূলক অর্থায়ন দেশটির জন্য বিশেষ সহায়ক হবে।'
গুতেরেস বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করে বলেন, 'তারা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-আগস্ট মাসের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই আন্দোলন শেখ হাসিনার নির্মম স্বৈরাচারের অবসান ঘটায়।
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে উপস্থিত হতে পেরেছি কারণ তরুণরা নতুন বাংলাদেশের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে।’
বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের ওপর এর প্রভাব, রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের সময় সংঘটিত নৃশংসতার তদন্তে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন অনুসন্ধান মিশনের বিষয়ে আলোচনা হয়।
মার্কিন ব্যবসায়ীদের অংশীদারত্ব চান ড. ইউনূস
বাংলাদেশের নতুন যাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের অংশীদারত্ব চেয়েছেন অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, বহুমুখী সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের একটি হোটেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক সংলাপে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে আপনাদের কথা শুনতে এসেছি এবং আমাদের বিনিয়োগ পরিবেশ কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে আপনাদের পরামর্শ চাই। আমাদের এই নতুন যাত্রায় আপনাদের অংশীদারত্ব চাই।’
‘ইউএস-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিল’ শীর্ষক এ সংলাপের আয়োজন করে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল (ইউএসবিবিসি)।
এ সময় ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ শুধু ১৭ কোটি মানুষের উদীয়মান বাজার নয়। এটি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ভোক্তা বাজারের একটি হিসেবে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীনের ৩০০ কোটি মানুষের বাজার ধরার সম্ভাবনাময় জায়গায় রয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফররত প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কোনো দেশই সমস্যামুক্ত নয়। বাংলাদেশও সমস্যামুক্ত নয়। তবে আমি একটি বিকাশমান বাংলাদেশ দেখি, যে দেশটি স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যখন তার ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির অধীনে সরবরাহ কাঠামো বৈচিত্র্যকরণের দিকে নজর দিচ্ছে, বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে সেই লক্ষ্য পূরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠার উপযুক্ত। আপনার ব্যবসা সম্প্রসারণের পাশাপাশি সরবরাহ কাঠামো বৈচিত্র্যকরণে আমরা সবকিছু করব।
ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগী। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের প্রধান রপ্তানির দেশ এবং আমাদের বিদেশি বিনিয়োগে শীর্ষ উৎস। কিন্তু বাণিজ্য অস্বাভাবিক রকমের কম।’
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি জানি, আপনাদের কিছু কোম্পানি মুনাফা দেশে ফেরত পাঠাতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। স্পষ্টভাবে বললে, গত কয়েক বছর ধরে আমরা একটি বৈদেশিক হিসাব ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছি। এই পরিস্থিতি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে পাচার হওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমাদের সরকার এখন এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে, যাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আর হ্রাস না পায়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ইউএসবিবিসির সভাপতি অতুল কেশাপ বক্তব্য দেন।