স্বামীর হাতে নির্মমভাবে খুন হলেন ক্রিস্টিনা জোকসিমোভিচ। শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নিজের অপরাধ আড়াল করতে স্ত্রীর দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশ মিক্সারে ব্লেন্ড করে, এসিড দিয়ে গলিয়েও ফেলা হয়।
কিন্তু পুলিশের চোখ এড়াতে পারেননি অভিযুক্ত স্বামী থমাস।
পুলিশ তাঁকে ধরে ফেললে, অপরাধ স্বীকার করেন তিনি। টমাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ যা জানতে পেরেছে, তাতে পুলিশও বিস্মিত।
কে এই ক্রিস্টিনা জোকসিমোভিচ
জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালের মিস সুইজারল্যান্ডের ফাইনালিস্ট ছিলেন ক্রিস্টিনা জোকসিমোভিচ। মিস নর্থওয়েস্ট সুইজারল্যান্ডের খেতাব জিতেছিলেন তিনি। পরে, তিনি ক্যাটওয়াক ট্রেনার হিসাবে কাজ করেন। ডমিনিক রিন্ডারকনেখটের মতো মডেলদের ট্রেনিং দেন তিনিই।
জাইহক, অভিযুক্ত স্বামীর নাম থমাস। বয়স ৪১ বছর। স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি খুন হন ৩৮ বছর বয়সী মডেল ক্রিস্টিনা। ক্রিস্টিনার মৃতদেহ বিনিনজেন শহরে তাঁর বাড়ির লন্ড্রি রুমে পাওয়া গিয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারী, পুলিশ ক্রিস্টিনা হত্যার জন্য থমাসকে গ্রেফতার করে। প্ৰথমে তিনি অপরাধ স্বীকার করতে চাননি। অবশেষে মার্চ মাসে তিনি স্বীকার করেন যে তিনি ক্রিস্টিনাকে খুন করেছেন।
অভিযুক্ত থমাসের দাবি, তিনি তাঁর স্ত্রীকে আত্মরক্ষার্থে খুন করেছেন। খুন করার পর, তাঁর মৃত্যুতে ভীত হয়ে পড়েন থমাস, তাই তিনি ক্রিস্টিনার লাশ টুকরো টুকরো করে কেটে গায়েব করার চেষ্টা করেছিলেন। সুইস মিডিয়া আউটলেট টুডে জানিয়েছে যে থমাস করাত, ছুরি এবং বাগানের কাঁচি ব্যবহার করে, স্ত্রীয়ের দেহ টুকরো টুকরো করে ফেলে। পরে, সেগুলিকে গলানোর জন্য একটি রাসায়নিক দ্রবণ ব্যবহার করেছিলেন তিনি। এমনকি কর্মকর্তারাও থমাসের এমন বর্বরতায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
প্ৰথমে স্ত্রী আক্রমণ করেছিলেন বলে দাবি থমাসের
থমাস দাবি করেছেন যে তিনি আত্মরক্ষা করার জন্য স্ত্রীকে হত্যা করেছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে প্ৰথমে ক্রিস্টিনাই তাঁকে ছুরি দিয়ে আক্রমণ করেছিলেন। প্ৰথমে নাকি স্ত্রীকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেন থমাস, কিন্তু তিনি মানতে রাজি না হওয়ায়, এমন পদক্ষেপ করতে বাধ্য হন বলে জানিয়েছেন। তবে মেডিকেল রিপোর্ট টমাসের বক্তব্যের বিপরীত কথা বলে। ময়নাতদন্ত করে টমাসের 'আত্মরক্ষার জন্য হত্যা'র বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ জাগে অধিকর্তাদের মনে। ময়নাতদন্তে স্পষ্ট যে দেহকে যে নৃশংসভাবে টুকরো টুকরো করা হয়েছিল।
লাশ কাটার আগে শ্বাসরোধ করে হত্যা
জকসিমোভিচের বিকৃত লাশ পাওয়া যাওয়ার পর ফেব্রুয়ারিতে এই জঘন্য অপরাধটির কথা প্রকাশ্যে আসে। কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করে। অবিলম্বে জানতে পারে যে ক্রিস্টিনাকে টুকরো টুকরো করার আগে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল। এই অপরাধে পুলিশ টমাসকে হেফাজতে নিয়েছিল। একই সময়ে, থমাস আদালতের কাছে জামিনও চেয়েছিলেন, যা ফেডারেল আদালত প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানা গিয়েছে। আদালত আরও জানতে পেরেছে যে টমাস মানসিকভাবে অসুস্থ। প্রসিকিউটরদের দাবি, থমাস বরাবরই হিংস্র মনোভাবের মানুষ।
এদিকে, ক্রিস্টিনার এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে, তাঁর পরিচিতরা হতবাক। প্রাক্তন মিস সুইজারল্যান্ড, ক্রিস্টা রিগোজি বলেছেন যে তিনি এই খুনের কথা শুনে হতাশ হয়েছেন। তাঁর মতে ক্রিস্টিনা শুধু সুন্দরই ছিলেন না, তিনি অত্যন্ত দয়ালু মনেরও মানুষ ছিলেন। তাঁর দুই মেয়ে রয়েছে। তাঁদের পরিবারকে বাইরে থেকে দেখে অত্যন্ত নিখুঁত বলে মনে হত।
অভিযুক্ত থমাস একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। খুনের হত্যার কয়েক সপ্তাহ আগেও, তাঁরা লুসার্ন হ্রদে একটি বেড়াতে গিয়েছিলেন। ছবি দেখলে মনে হবে, সুখের সংসার ছিল ক্রিস্টিনার। কিন্তু এই ছবির পিছনে যে এমন সহিংসতা লুকিয়ে থাকতে পারে, ভাবতেও পারা যায় না। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সুইজারল্যান্ড জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।