জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্র ঠিকানায় কর্মরত সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দীন ড. ইউনূসের নোবেল পুরুস্কার পাওয়াকে কটাক্ষ করে বলেছেন নোবেল পুরুস্কার এটা কিছুই না। এটা একটা প্রাইজ মাত্র। যার মুল্য ২/১ কোটি টাকা। বাংলাদেশের বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান ও নোবেল বিজীয় প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরুস্কার নিয়ে প্রকাশ্যে বিরুপ মন্তব্য করায় নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশীর মাঝে বইছে প্রতিবাদের ঝড়। গত রোববার জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে প্রবাসীদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে একটি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
২০১৬ সাল পর্যন্ত নোবেল বিজয়ীদের নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ কোটি টাকা। নোবেল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালে এর নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ লাখ ডলার, মানে ৯ কোটি টাকার কিছু বেশি। একই বছর ১৪ সেপ্টেম্বর সুইডেনের স্টকহোমে নগদ অর্থপুরস্কার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় নোবেল ফাউন্ডেশন। নোবেল লরিয়েটদের প্রত্যেককে দেয়া হয় একটি স্বর্ণপদক, একটি ডিপ্লোমা, সুইডেনের নাগরিকত্ব এবং একটি মোটা অঙ্কের অর্থ। বর্তমানে এই অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ১০ মিলিয়ন সুয়েডীয ক্রোনার (১ মিলিয়ন ইউরোর সামান্য বেশি/ ১.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
জীবদ্দশায় ৩৫৫টি উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়েছিলেন আলফ্রেড নোবেল। সুইডিশ এ বিজ্ঞানীর বড় ভাই লুডভিগ ১৮৮৮ সালে ফ্রান্সে বেড়াতে গিয়ে মারা যান। কিন্তু ফরাসি এক দৈনিক ভুল করে আলফ্রেড নোবেল মারা গেছেন ভেবে নিয়ে শিরোনাম করে, ‘মৃত্যুর সওদাগর মারা গেছেন’। যেহেতু নোবেলের অধিকাংশ আবিষ্কারই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র, তাই এমন শিরোনাম। নোবেল তখনই বুঝতে পেরেছিলেন, মৃত্যুর পর ইতিহাস তাঁকে কীভাবে মনে রাখবে।
আর তাই জীবদ্দশায় করে যাওয়া অনেকগুলো উইলের মধ্যে শেষ উইলে নোবেল উল্লেখ করেন যে তাঁর সব সম্পদ পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে, যাঁরা পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে মানবতার স্বার্থে কাজ করবেন। এ জন্য নোবেল তাঁর মোট সম্পদের ৯৪ শতাংশ উইল করে যান, যা এখন নোবেল পুরস্কার হিসেবে স্বীকৃত। ১৯০১ সালে পুরস্কারটি চালু হওয়ার পর থেকে গত বছর পর্যন্ত ২৩টি প্রতিষ্ঠান ও ৮৮১ জন্য ব্যক্তি জিতেছেন ভীষণ সম্মানজনক এ পুরস্কার।
ড. ইউনূসের সেই ৮ কোটি টাকা মূল্যের নোবেল পুরুস্কারকে কটাক্ষ করে খালেদ মহিউদ্দীন বলেন নোবেল পুরুস্কার এটা কিছুই না। এটা একটা প্রাইজ মাত্র। যার মুল্য ২/১ কোটি টাকা। তার এ নেতিবাচক মন্তব্যের ফলে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে বইছে সমালোচনার ঝড়। অনেকে তার এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদও জানিয়েছেন। তার বক্তব্যের প্রতিবাদে ইতোমধ্যে নিউ ইয়র্কে একটি প্রতিবাদ সভাও হয়েছে। ড. ইউনূসের নিউ ইয়র্ক আগমনের সময় খালেদ মহিউদ্দনীনকে সব ধরণের অনুষ্ঠান থেকে বয়কটের দাবি জানানো হয়। গত ১৫ আগস্ট সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্র ঠিকানা-তে যোগ দেন।
বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলমের উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত সভায় প্রধান অতিথি করা হয় নিউ ইয়র্কে সদ্য আসা খালেদ মহিউদ্দীনকে। এ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে খালেদ মহিউদ্দীন ড. ইউনূসকে নিয়ে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, নোবেল পুরুস্কার ২/১ কোটি টাকা মুল্যের একটি পুরুস্কার মাত্র, এছাড়া এটা কিছুই না। এটা একটা প্রাইজ মাত্র।
তিনি আরও বলেন, এতদিন আপনারা জেনেছেন জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। এটা একটি শব্দ। সংবিধান খুলে দেখেন তাতে কি লেখা আছে? সংবিধানে লেখা আছে জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক। ড. ইউনূস হচ্ছে শেখ হাসিনার মত জনগণের চাকর। জনগণের টাকায় তারা বেতন পায়।
তিনি নিউ ইয়র্ক-ঢাকা বিমানের দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এক সময় নিউ ইয়র্ক-ঢাকা বিমান তো চালু ছিল। বন্ধ হয়েছে এটা কাদের দোষ। পুরোটাই কি সরকারের দোষ নাকি কাদের দোষ, কার দুর্নীতির কারণে বন্ধ হয়েছে এটা খুজে বের করতে হবে আগে। বিমান চালু হলে আবার যে দুর্নীতি হবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে।
নোবেল বিজয়ী ও বাংলাদেশের বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূসকে নিয়ে সালমান এফ রহমানের ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সাবেক সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দীনের অত্যন্ত আপত্তিজনক, উদ্ব্যত্তপূর্ণ ও কাজ্ঞানহীন মন্তবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছেন বৈষম্যবিরোধী প্রবাসী সচেতন সমাজ ইউএসএ ও প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক সমাজ। তারা এ মন্তব্যের কারণে খালেদ মহিউদ্দীনকে প্রধান উপদেষ্টার নিউ ইয়র্ক সফরের সময়ে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সকল অফিসে বয়কট করার জোরালো দাবি জানান।
এ নিয়ে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় নিউ ইয়র্কের সচেতন প্রবাসী সমাজ, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, কবি, চিকিৎসক, প্রকৈশলীসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর আয়োজিত এ প্রতিবাদ সভায় সভাতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্রের লং আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক ড. শওকত আলী। প্রতিবাদ সভা থেকে পাঠানো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে প্রতিবাদ সভার পরে ড. ইউনূসকে কটাক্ষের নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে সই করেছেন, প্রফেসর ড. শওকত আলী, ড.হাসনাত হোসাইন, প্রফেসর ড. জগলুল হায়দার, রিতা রহমান, ড. আবুল কাশেম, ড. মনির আহমেদ, মঈনুদ্দিন নাসের, খন্দকার ফরহাদ, জামাল আহমেদ জনি, আব্দুস সবুর, আহমেদ সোহেল, মোহাম্মদ কিউ জামান, তাসের মাহমুদ খান, শাহ আলম দুলাল, মির্জা আজম, মোহাম্মদ সুরুজ্জামান, সায়ীদ তারেক, এম রহমান মাসুম, হামিদ সোহেল ও মির্জা আজম প্রমুখ।