ফেনী জেলার চলমান ভয়াবহ বন্যায় বন্যার্ত ৪০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করলো র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে আভিযানিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি দেশের যে কোন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে মানবিক কার্যক্রমে সর্বাগ্রে থাকে এলিট ফোর্স র্যাব। যে কোন আপদকালীন সময়ে অসহায় ও দুস্থ মানুষের মধ্যে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব। ফেনী জেলার বন্যা কবলিত অসহায় মানুষের জীবন রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য এই দূর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে র্যাব জনমানুষের বন্ধু হয়ে অসহায় ও দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবের উদ্দেশ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ফেনী জেলায় সৃষ্ট প্রাকৃতিক বন্যায় বিপর্যস্ত এ অঞ্চলের পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর, দাগনভূঁঞা ও সোনাগাজী—এ ছয় উপজেলা পুরোপুরি বন্যাকবলিত। স্থানীয় স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দিরের ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। সেখানে সুপেয় পানি ও খাবারের সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। বানভাসী মানুষ অসহায় ও মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকে নিজের শেষ সম্বল ও মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু হারিয়ে আজ দিশেহারা। কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর সহ বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সৃষ্ট বন্যায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে বানভাসী মানুষ অসহায় দিন কাটাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে বন্যার্ত মানুষজন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
৪। চলমান বন্যা পরিস্থিতির শুরু থেকেই র্যাব ফোর্সেস বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকার বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করে আসছে। বন্যার পানিতে সবকিছু তলিয়ে যাওয়ায় র্যাব ফোর্সেস নিত্যপ্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী, যেমন- চাল, ডাল, তেল, বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবার, ইত্যাদি প্রদান করছে। অনেক পানিবন্দী মানুষ যারা ত্রাণ পাচ্ছিলেন না, এধরনের অসহায় মানুষকে খুঁজে বের করে র্যাবের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি বন্যা দুর্গত এলাকাসমূহের পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ এবং ২৬ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে ফেনী জেলার ফেনী সদর থানাধীন বিভিন্ন এলাকায়, ফুলগাজি উপজেলার নতুন মুন্সিরহাট এলাকা এবং পরশুরাম উপজেলার চিথলীয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকার দুর্গম অঞ্চলে র্যাব-৭ এর পক্ষ হতে বন্যার্ত ৪০০ পরিবারের মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী, যেমন- চাল, ডাল, তৈল ইত্যাদি ত্রাণ সামগ্রী এবং শুকনো খাবার যেমন-খেজুর, চিড়া, মুড়ি, চানাচুর, গুড়, বিস্কুট, পাউরুটি সহ বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন, মোমবাতি, গ্যাসলাইটার, ইত্যাদি বিতরণ করা হয়েছে। উক্ত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন র্যাব-৭ এর উপ-অধিনায়ক এবং সিপিসি-১, ফেনীর কোম্পানী কমান্ডার সহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। উল্লেখ্য, বন্যার প্রাদুর্ভাব দিলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আটকে পড়া যাত্রীগণ এবং আশ্রয়স্থলসমূহে আশ্রয় গ্রহণকারীদের মাঝে র্যাব-৭ এর পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
বন্যা এবং বন্যা পরবর্তী সময়ে খাদ্য সংকট, পানীয় জলের দুষ্প্রাপ্যতা এবং বিভিন্ন ধরণের পানিবাহিত রোগের ব্যাপারে র্যাব-৭ জনমানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাবে। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে র্যাব-৭। র্যাব ফোর্সেস মানবিক বিপর্যয় রোধে বন্যার্তদের মাঝে চলমান মানবিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। বন্যা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে কেউ যেন আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে সেজন্য র্যাব-৭ কর্তৃক নিয়মিত টহল কার্যক্রমের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। অধিনায়ক, র্যাব-৭ এর দিকনির্দেশনায় পরিস্থিতি উন্নয়নের এ তৎপরতা সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
ফেনী জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে যে কোন মানবিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি সকলের জানমালের নিরাপত্তা প্রদানে র্যাব-৭ এর প্রতিটি সদস্য দেশাত্মবোধ, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রম, মানবিক সহায়তা প্রদান সহ যে কোন প্রয়োজনে সকলকে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর কন্ট্রোল রুমের সাথে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হলো।