মানব শরীর থেকে জীব-গাছপালা, কিংবা প্রকৃতি থেকে মহাশূন্য- সর্বত্র চলছে কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন বা রাসায়নিক বিক্রিয়া। বর্তমান আধুনিক শিল্পবিপ্লবের যুগে অতিমাত্রায় বাড়ছে কেমিক্যালের ব্যবহার। মূলত সব ধরণের শিল্প প্রতিষ্ঠানই চালিত হয় কেমিক্যাল দ্বারা। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান চালাতে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা কেমিকৌশল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। শিল্পায়নের এ যুগে শিক্ষার্থীদের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ক্যারিয়ার গড়ার অনেক ভালো সুযোগ রয়েছে। খাবার, প্রসাধনী, বস্ত্রশিল্প থেকে শুরু করে চিনি, সার, কৃষি- সবক্ষেত্রে কেমিক্যালের বিস্তর ব্যবহার হয়। বিজ্ঞানের আধুনিকতম বিষয়গুলোর একটি হচ্ছে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এই খাতটি প্রতি মুহূর্তেই আরও বিকশিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গবেষণা যুক্ত হচ্ছে, বাড়ছে কাজের ক্ষেত্র।
সুযোগ দিচ্ছে জেডএইচসাস্ট: কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জেড. এইচ. সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান রাজধানী ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে মাত্র ৩ ঘন্টার দূরত্বে শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ থানার কার্তিকপুরে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় পাশ করে ৪ বছর মেয়াদী বিএসসি ইন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হওয়া যাবে। দূরের শিক্ষার্থীদের জন্য আছে আবাসিক হলের ব্যবস্থা। সেই সাথে যারা ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছে তারাও এখানে বিএসসিতে ভর্তি হতে পারবেন। সপ্তাহে ২ দিন (বৃহস্পতি ও শুক্রবার) ক্লাস হওয়ায় চাকরিজীবীরাও বিএসসি সম্পন্ন করতে বিশেষ সুবিধা পায়। উন্নত ল্যাব সুবিধার সাথে সাথে পাঠদানের জন্য রয়েছেন অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দ।
এখানে সীমিত টিউশন ফী দিয়েই মানসম্পন্ন লেখাপড়া করা সম্ভব। মাত্র তিন লাখ ২০ হাজার টাকায় ৪ বছর মেয়াদী বিএসসি ইন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করা যায়। আছে মাসিক কিস্তিতে টিউশন ফি পরিশোধের সুবিধা। পড়াশুনার নিয়ম এবং সিলেবাস ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতই। নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষার দ্বারা ভালো ফলাফল করা সম্ভব। (বিস্তারিত www.zhsust.ac.bd)
কাজের ক্ষেত্র অনেক: সব ধরনের কারখানাতেই কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করে থাকেন। টেক্সটাইল, ঔষধ, চামড়া প্রক্রিয়াকরণ, সিমেন্ট, গ্লাস বা সিরামিক, ফুড ও বেভারেজ, চা, চিনি, কাগজ, সার, পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস, কসমেটিক্স- প্রায় সব শিল্পেই কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন। সরকারি চাকরির মধ্যে পেট্রোবাংলার অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান যেমন তিতাস বা অন্যান্য গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের ইউরিয়া সার কারখানা, কাগজ কারখানা এবং বিপিসির অধীনস্থ একমাত্র রাষ্ট্রীয় জ্বালানি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে কেমিকৌশলীরা কাজ করছেন। সাথে বিসিএস পরীক্ষাসহ বিএসটিআই, পিডিবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিভিন্ন টেস্টিং ল্যাব ইত্যাদিতে কাজের সুযোগ রয়েছে।
বেসরকারি খাতে স্থানীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন টোটাল, শেভরন, স্কয়ার, নাসির, ইউনিলিভার, বার্জার, ফ্রেশ, লিন্ডে, নেসলে, রেকিট বেনকিজার, প্রাণ, সিনজেনটা, বায়ার, ম্যারিকো, কোহিনূর, এপেক্স, আরলা ও নিউজিল্যান্ড ডেইরিসহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে কেমিকৌশলীদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংক, গিজ, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্প, সাস্টেইনেবল ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত প্রজেক্ট, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), স্থানীয় ঔষধ শিল্প, বিভিন্ন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম, গার্মেন্টস, বিভিন্ন সিরামিক কোম্পানি।
এছাড়াও ক্ষার-এসিড-ক্লোরিনের মতো রসায়ন শিল্প, ভোজ্য তেল, সিমেন্ট, এলপিজি শিল্প, লেদার পণ্য শিল্প, বস্ত্র ও তৈরী পোশাক শিল্প, বেসরকারি খাতের জ্বালানি তেল শোধনাগারসমূহের অপারেশন ও প্রসেস কন্ট্রোল বিভাগ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনস্থ কোম্পানি এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আণবিক শক্তি কমিশন ও নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে কেমিকৌশলীরা কাজ করছেন।
ক্যারিয়ার এবং বেতন: একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে সম্ভাব্য গড় বেতন সীমা ২০,০০০-৩০,০০০ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। সাথে অন্যান্য সুবিধা থাকে। প্রতিষ্ঠান ভেদে এটি কম-বেশি হতে পারে। যেহেতু প্রতিবছর সীমিত সংখ্যক কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পড়া শেষ করে জব মার্কেটে আসে সেজন্য ক্যারিয়ার প্রবৃদ্ধি অনেক ভালো, প্রতিযোগিতা কম। বিভিন্ন শিল্প কারখানায় অভিজ্ঞতা ও কারিগরি দক্ষতা অর্জন করতে পারলে ৮ থেকে ১০ বছর কাজ করে ম্যানেজার পদে যাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশী অনেক বড় গ্রুপ যেমন প্রান, ফ্রেশ, বেক্সিমকো, স্কয়ার বিদেশে নানা প্ল্যান্ট স্থাপন করায় দেশ থেকে অনেক কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিদেশের এসব প্রতিষ্ঠানের প্লান্টে যেতে পারেন। সেই সাথে বিদেশে উচ্চশিক্ষার অনেক সুযোগ থাকায় অনেকে মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি করতে যায়। বিদেশী কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে অভিজ্ঞতা ভেদে ৫ থেকে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বেতন পেয়ে থাকেন।
এছাড়া এই প্রকৌশলীরা ভালো রেজাল্ট এবং রিসার্চ করে দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ পান। এই গ্র্যাজুয়েটদের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পর্যায়ে কেমিকৌশল, গ্লাস ও সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড টেকনোলজি ইত্যাদি বিষয়ে টেকনিকাল ইন্সট্রাক্টর (কেমিক্যাল) পদে সরকারি বেসরকারি পলিটেকনিকে শিক্ষকতা করার সুযোগ রয়েছে।