বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিষয়টি জানাজানি হলে সাড়ে ৯ ঘণ্টা থানায় অবস্থান করে আটককৃত তিন শিক্ষার্থীকে মুক্ত করে আনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। বাকিদের মুক্ত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দিবাগত রাত ১টার দিকে তিন শিক্ষার্থীকে মতিহার থানা থেকে মুক্ত করে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন শিক্ষকেরা।
শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছয় শিক্ষার্থীকে আটক করে নগরীর দুই থানা-পুলিশ। শিক্ষার্থী আটকের খবর জানাজানি হলে বিকেলের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আল মামুন, সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন ও কাজী মামুন হায়দার, নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক হাবিব জাকারিয়া ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রোবাইদা আখতার, ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন, ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনকসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষক থানায় অবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আনেন।
শিক্ষকরা আটককৃত ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সৈয়দ সামিউল বাসিত, মাজেদ হাসান এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম ইসলামকে মতিহার থানা থেকে দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর রাত ১টার দিকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।
এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরের মহিষবাথান এলাকা থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত হাসান এবং আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রত্যয়কে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে, প্রত্যয়কে রাজপাড়া থানা পুলিশ ও রিফাত হাসানকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটক করে। এছাড়া ২০২২-২৩ সেশনের তাওহিদুজ্জামান নাইমকে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
তাদের ছাড়াতেও শিক্ষকরা বিকেলে থানায় উপস্থিত হন। তবে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় পর্যন্ত তাদের ছাড়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার দুপুরে রাজশাহীর সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কোর্টের প্রধান ফটকের সামনে থেকে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি শুরু করা ঘোষণা দেন। তবে পথে পুলিশের বাঁধার কথা চিন্তা করে তারা কর্মসূচি পরিবর্তন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে যাত্রা শুরু করার ঘোষণা দেন। এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসার পথে দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সামনে থেকে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে একজনকে আটক করে মতিহার থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাত ১টার দিকে রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটন লিখেছেন, সাড়ে ৯ ঘণ্টা থানায় অবস্থান করার পর অর্ক আর মাজেদকে মুক্ত করে নিয়ে থানা থেকে বের হয়েছি এই পনের মিনিট আগে। এখন বাসায় ঢুকলাম। ইংরেজি বিভাগ, শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট, ফোকলোর এবং গণযোগাযোগ বিভাগের সহকর্মীরা পুরো সময় থানায় ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, উপাচার্য মহোদয় এবং প্রক্টর কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা করেছেন।
তিনি আরও লিখেছেন, শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষার্থীও আটক ছিলেন। তাকেও আমরা ছাড়িয়ে এনেছি। তিনি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে অন্যদের চেয়ে আধা ঘণ্টা আগে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
থানায় অবস্থানকারী আরেক শিক্ষক আমিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী আটকের ঘটনা এক ধরনের হয়রানি। যা কাম্য নয়। এই বিষয়ে সরকারকে নমনীয় হওয়া উচিত। কেননা উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকার এড়াতে পারে না।
এ ব্যাপারে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোবারক পারভেজ বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরসহ নানা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় ব্যাগ নিয়ে সন্দেহভাজন অবস্থায় ঘোরাফেরা করতে দেখে এ ধরনের অপরাধ ঘটাতে পারে মর্মে যথেষ্ট সন্দেহ হওয়ায় তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।