বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আগের মতো অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে চায়।’
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলন ছয় সমন্বয়ককে ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে যে নাটক করা হয়েছে, এটা রাজনৈতিক জীবনে কেউ দেখেনি যে ডিবি অফিসে বসে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। ত্রাস সৃষ্টি করে এগুলো করা হয়েছে। আবার ডিবি অফিস এখন ভাতের হোটেল- এটা সবাই জানে। এধরনের একটা নাটক করে পুরো জাতিকে ছোট করা হয়েছে। এটি নিয়ে হাইকোর্টও বলেছেন। এরপর আর কিছু বলার নেই।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের কোনো রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নেই। আওয়ামী লীগও সরকারে নেই। একটি অদৃশ্য শক্তির মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কথা শুনলে এটি বোঝা যায়।’
জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। এটা (জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা) তারা আগে করেনি কেন? এখন কেন করছে? আওয়ামী লীগ আগের মতো অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করতে চায়। তারা নানা কৌশল করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কয়েক দিন অনেক ঘটনা ঘটেছে। গণগ্রেফতার চলছে, গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। যাকে পাচ্ছে তাকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। জাতি তো বোকা নয়, এগুলো বুঝবে না। কিশোরদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, আবার রিমান্ডে নেয়া হয়। হাসপাতাল থেকে তুলে নেয়া হয়েছে, এটা কখনো আমরা দেখিনি।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলন কিন্তু আজ শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বে আলোড়ন তৈরি করেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের গণমাধ্যমেও আলোচিত হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। অনেকে বলেছে, এটি স্বৈরাচার সরকার।’
‘এ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শুধু ছাত্র নয়, মারা গেছে নানা পেশা ও শ্রেণির লোক। পত্রিকায় দেখলাম, মারা যাওয়ার সংখ্যা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন- তারা জামায়াত-বিএনপি। কিন্তু আমি তো এখানে জামায়াত-বিএনপির কোনো লোক দেখলাম না,’ বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা জানি কে এ আন্দোলনের উস্কানি ও অর্থ দিয়েছেন। কই আগে তাহলে থামলেন না কেন, এর মানে আপনি জেনে থামলেন না। আপনি শান্তি চাননি। আবার বলে, আন্দোলনে জামায়াত-বিএনপি ঢুকেছে, আবার বলে তৃতীয় শক্তি, বলে বিদেশী।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন কেউ রুখতে পারেনি, পারবে না।’ নতুন প্রজন্মকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রংপুরে আবু সাঈদকে নিয়ে যা বলেছেন, তা মুখে বলা যাচ্ছে না, এত অশ্রাব্য ভাষা। এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। এরা তো শহীদ, এরা তো আমাদের সন্তান।’
‘ছাত্ররা তো বেশি কিছু চায়নি, তারা কোটা সংস্কার চেয়েছিল। তখন তো তারা আপনাদের বসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জমিদারি ভাব নিয়ে সরকার বসেনি, আদালতের ওপর ভর করেছে।’ তাই বলে কি এই চাওয়ার জন্য এতগুলো তাজা প্রাণ ঝরবে?- প্রশ্ন রাখেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘একটা কথা বলতে চাই, বাংলাদেশের কোনো আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি, এবারো হবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছয় বছরের শিশু নিহত হয়েছেন পুলিশের গুলিতে, এর কী জবাব দিবে রাষ্ট্র? এর দায় কার? এ দায় সরকারকে নিতে হবে। সেজন্য বলি, দায়ভার নিয়ে পদত্যাগ করুন।’
‘এ দেশে জঙ্গিবাদের সবচেয়ে পৃষ্ঠপোষক হলো আওয়ামী লীগ। এর চেয়ে বড় কোনো জঙ্গি নেই,’ মন্তব্য বিএনপি মহাসচিবের।