২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ০৬:২৮:২২ পূর্বাহ্ন


‘কাজ নাই, কি করে চালাবো সংসার ’
ইব্রাহিম হোসেন সম্রাট:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৭-২০২৪
‘কাজ নাই, কি করে চালাবো সংসার ’ ‘কাজ নাই, কি করে চালাবো সংসার ’


রাজশাহীর উপকন্ঠ বানিশ্বর এলাকা থেকে একটি বাই সাইকেলে চেপে রবিবার (২৮ জুলাই) ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মহানগরীর তালাইমারী মোড়ে এসেছেন মোঃ সাব্বির হোসেন। তাঁর বাইসাইকেলে বাঁধা আছে একটি কোঁদাল ও ডালি (ঝুড়ি)। 

রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তিনি কোনো কাজ পাননি। তিনি বলেন, ‘দুইড্যা ছেল্যা একডা মেয়ে মিলে আমার সংসার। চাষাবাদ করার মতো কোন জমিজমা নাই। শীতের সময়ে ইটের ভাটায় কাজ কইরা খাই। আর এখন শহরে কাজে আসছি। কারফিউতে কাজটাজ নাই, কি করে সংসার চালাইবো। দোকানে ধারদেনা বেধে গেছে।’

সাব্বিরে মতো একই জায়গায় শ্রম বিক্রি করতে এসেছেন চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের আবুল হাসনাত। গত এক সপ্তাহের মধ্যে ছয়দিন কাজের খোঁজে রাজশাহী শহরে এসেছেন। দুই দিন মাত্র কাজ পেয়েছেন। তাঁর ভাষায়, গ্রামে কাজ নেই। শহরে এলে কাজ পাওয়া যায়। কিন্তু এখন কারফিউর কারণে কাজ নেই বললেই চলে। এভাবে চলা মুশকিল। রাজশাহীতে তো তেমন সংঘর্ষ হয়নি। কারফিউ তুলে দিলে কি হয়? প্রশ্ন আবুল হাসনাতের!

বানেশ্বর থেকে আসা আরেক শ্রমজীবি মোজাম্মেল হক বলেন, বৃষ্টি হলে আমন ধান ও ধান রোপনের ধান কাজ পাওয়া যেত। কিন্তু বৃষ্টি নেই। মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। গ্রামে কোনো কাজকর্ম নেই। শহরের কাজ ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো না হলে, কাজ পাবেন না বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার ১৯ জুলাই রাত থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করেছেন। সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতেও কারফিউ জারি করায় হলে পুরো শহর ফাঁকা হয়ে যায়। সব কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। শহরে প্রবেশ মুখে বিভিন্ন পুলিশ চেকপোষ্টে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে কারফিউ কিছুটা শিথিল করলেও কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসেনি। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিন মুজুর ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

শহরের তালাইমারী মোড়ের মতো মহানগরীর বিনোদপুর, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর-সহ (রেলগেট) বিভিন্ন এলাকায় শ্রমজীবীরা শ্রম বিক্রি করতে আসেন। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম থেকে কাকডাকা ভোরে শ্রমজীবী মানুষেরা আসেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তাঁদের কেউ কাজ পায়, আবার কেউ কাজ না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। কারফিউ থাকায় কাজ না পাওয়া মানুষের তালিকা বাড়ছে।

শনিবার সকাল আটটার দিকে সরেজমিন দেখা গেছে, মহানগরীর তালাইমারী মোড়ে কমপক্ষে দেড় শত শ্রমজীবী মানুষ কাজের অপেক্ষায় ছিলেন। সেখানে সকাল আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত মাত্র ছয়জন শ্রমিককে কাজ পেতে দেখা গেছে। সেখানে শ্রমিক নেওয়ার মতো কেউ এলেই শ্রমিকেরা তাঁদের ঘিরে ধরছেন। মহানগরীর শহীদ এএইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরেও শ্রমিকদের কাজের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে।

শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে কথা হয় পবার পারিলা ইউনিয়নের সাইদুর রহমানের সাথে। তিনি জানান, এ জায়গায় গত সপ্তাহে কাজ করতে পাঁচ দিন এসেছেন। কাজ পেয়েছেন শুধু গত বৃহস্পতিবার। রবিবার ভোর থেকে সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কোনো কাজ পাননি। এখানে আসা কেউই কাজ পাননি। তিনি আরও বলেন, দেশের যত পরিস্থিতিই খারাপ হোক না কেন, তাঁদের মতো শ্রমজীবী মানুষেরাই বিপদে পড়েন। তাই দেশ নিয়ে ভাবনাটা তাঁদেরই বেশি। এখন যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে মনে হচ্ছে সামনে আরও বিপদে পড়তে হবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেছেন, কারফিউয়ে শ্রমজীবী মানুষদের সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে তাঁরা ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিল করছেন।