২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০২:১৬:০৭ অপরাহ্ন


কোরআনে মহররম মাসের ব্যাপারে যা বলা হয়েছে
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৭-২০২৪
কোরআনে মহররম মাসের ব্যাপারে যা বলা হয়েছে ফাইল ফটো


হিজরি সালের প্রথম মাস মহররম ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ মাস। কোরআনে চারটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত মাস বলা হয়েছে তার অন্যতম মহররম। আল্লাহ তাআলা এ মাসগুলোতে বিশেষ করে সব রকম জুলুম ও পাপাচার থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

اِنَّ عِدَّۃَ الشُّهُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰهِ اثۡنَا عَشَرَ شَهۡرًا فِیۡ كِتٰبِ اللّٰهِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ مِنۡهَاۤ اَرۡبَعَۃٌ حُرُمٌ ؕ ذٰلِكَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ۬ۙ فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِیۡهِنَّ اَنۡفُسَكُمۡ

নিশ্চয় মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোনো জুলুম করো না। (সুরা তওবা: ৩৬)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

إنَّ الزَّمانَ قد استدار كهيئتِه يومَ خَلَق اللهُ السَّمواتِ والأرضَ، السَّنةُ اثنا عَشَرَ شَهرًا، منها أربعةٌ حُرُمٌ، ثلاثٌ متوالياتٌ: ذو القَعْدةِ، وذو الحِجَّةِ، والمحَرَّمُ، ورَجَبُ مُضَرَ الذي بين جُمادى وشَعبانَ

আল্লাহ তাআলা যেদিন আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন, সে দিন থেকে সময় যেভাবে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেভাবে আবর্তিত হচ্ছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। জিলকদ, জিলহজ ও মহররম তিনটি মাস পরপর রয়েছে। আর এক মাস হল রজব-ই-মুযার যা জুমাদাস-সানি ও শাবান মাসের মাঝে আসে। (সহিহ বুখারি: ৩১৯৭)

চারটি মাসকে ‘হারাম’ ঘোষণা করা হয়েছে যে কারণে

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির আগে জিলকদ মাসে হজ পালনকারীরা মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করতেন, জিলহজে হজের বিধিবিধানগুলো পালন করতেন এবং দূরদূরান্ত থেকে মক্কায় আসা হাজিদের নিজের দেশে ফিরে যেতে মহররম মাস লেগে যেত। এ জন্য এই তিনটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত মাস ঘোষণা করা হয়েছে যেন হজ পালনকারীরা নিরাপদে হজ পালনের জন্য আসতে পারেন এবং হজ পালন শেষে নিরাপদে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারেন। আর বছরের মাঝে রজব মাসকে সম্মানিত ঘোষণা করা হয়েছে রজব মাসে মানুষকে নিরাপদে ওমরাহ পালন করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

মহররম মাসের রোজা ফজিলতপূর্ণ

হাদিসে এ মাসটিকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। এ মাসের রোজাকে রমজানের রোজার পর সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ বলা হয়েছে। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ

রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা এবং ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হচ্ছে রাতের নামায। (সহিহ মুসলিম: ২৬২৬)

নবি মুসা (আ.) ও তার জাতির ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তির মাস

নবি মুসা (আ.) ও তার জাতি ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন মহররম মাসের ১০ তারিখে। যে কারণে মুসা (আ.) মহররম মাসের ১০ তারিখে রোজা রাখতেন। আল্লাহর রাসুলও (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ দিনটিতে নিজে রোজা রেখেছেন এবং রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিজরতের পর মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, এটি একটি উত্তম দিন যেদিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের মুক্তি দিয়েছেন। তাই মুসা (আ.) এ দিন রোজা রাখতেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আমি তোমাদের চেয়েও মুসার (আ.) অধিক নিকটবর্তী।’ এরপর তিনি এ দিন রোজা রাখেন, অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দেন। (সহিহ মুসলিম: ২৫৪৮)