০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৭:৪৮:০১ পূর্বাহ্ন


‘দক্ষতা বাড়াতে’ ১২০ কোটি টাকা খরচে বিদেশ যেতে চান ১১০৬ কর্মকর্তা
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৭-২০২৪
‘দক্ষতা বাড়াতে’ ১২০ কোটি টাকা খরচে বিদেশ যেতে চান ১১০৬ কর্মকর্তা সংগৃহিত ছবি


দেশের চলমান ডলার সংকটে কাটাতে সরকারি কর্মকর্তাদের অহেতুক বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। সেই নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর তাদের ১১০৬ কর্মকর্তাকে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত ‘অ্যাকসেলারেটিং অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং স্কিলস ফর ইকোনমিক ট্রান্সফরমেশন (এসেট)’ প্রকল্পের অধীনে বিশেষ এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে জুলাই ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ মেয়াদে চার হাজার ২৯৯.৯৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ‘এসেট’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের মূল লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের কারিগরি ও স্বাস্থ্য শিক্ষাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে অনেকগুলো কার্যক্রমের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হলো কারিগরি শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণ।

কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা হাতে-কলমে ও দক্ষতামূলক হওয়ায় শিক্ষকদের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক বৈদেশিক প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়া এটি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিদেশে প্রশিক্ষণ শিক্ষকদের মূল্যবান দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি উন্নত দেশের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাদান পদ্ধতি, প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা, কারিকুলাম, আইন-কানুন, ল্যাব ফ্যাসিলিটিজ ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে সহায়ক হবে। দ্রুত প্রযুক্তিগত পরিবর্তনশীল বিশ্বে কীভাবে শিক্ষার্থীদের দেশে ও বিদেশে চাকরির জন্য প্রস্তুত করা যায় সে সম্পর্কে নতুন ধারণা লাভ হবে।

প্রস্তাবনায় এসব সুপারিশ করা হলেও ডলার সংকটের কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা অবস্থায় এই বিদেশ ভ্রমণ কতটা যৌক্তিক হবে সেই প্রশ্ন উঠেছে। ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেই নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে।

কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের এ প্রস্তাব ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখন হয়ে গেছে ‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’। আমাদের দায়বদ্ধতা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি বলেন, ‘তারা যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলো সাধারণত ট্যুরিজম হয়। তারা কেনাকাটা করতে যায়, প্রশিক্ষণের নামে ভ্রমণে যায়। এগুলোতে কোনো প্রশিক্ষণ হয় না, কোনো কাজও হয় না। শুধু শুধু অর্থের খেসারত হয়। দেশের এই অর্থনৈতিক সংকটে এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর মাঝে একটি প্রকল্প থেকে ১১০৬ কর্মকর্তার বিদেশে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব, আমার কাছে এটি ‘বিলাসী ভ্রমণ’ ছাড়া কিছু নয়। সরকারি কর্মকর্তারা তাদের ক্ষমতাবলে এমন কার্যক্রম হাতে নেন।

আনু মুহাম্মদ আরও বলেন ‘দেশের বাইরে তাদের প্রশিক্ষণের তো দরকার নেই। দেশের মধ্যকার প্রশিক্ষণই যথেষ্ট। এমন ভ্রমণ দেশের অর্থনৈতিক সংকটকালে শুধু অপ্রয়োজনীয়-ই নয়, স্বাভাবিক সময়েও অপ্রয়োজনীয়। প্রশিক্ষণের খুব বেশি দরকার হলে দেশের বাইরে থেকে দুই-তিনজন বিশেষজ্ঞ এনে এক বছর রেখেই প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। বরং এটি অনেক কাজে লাগবে।’

বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে এসেট প্রকল্পের পরিচালক আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারিভাবে বিদেশ ভ্রমণে এখন একটি নিষেধাজ্ঞা আছে। তবুও আমরা প্রকল্পের কার্যক্রম গতিশীল রাখতে মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় সেটি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এখনও সেটি পাস হয়নি।

তবে, ১২০ কোটি টাকার এ দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের প্রস্তাবের বিষয়ে ‘কিছুই জানেন না’ বলে দাবি করেছেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এ ওয়াই এম জিয়াউদ্দিন আল মামুন। তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণের বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ভালো বলতে পারবেন।’

২০২২ সালের ৯ নভেম্বর সরকারের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর, কর্পোরেশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ এক বিজ্ঞপ্তিতে নিষিদ্ধ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। সূত্র: ঢাকা পোস্ট