১৫ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১০:০১:৫৪ অপরাহ্ন


তিন'শ বছরের ঐতিহাসিক মাজার খুঁড়ে ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা
হুমায়ুন কবির,রাণীশংকৈল(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৭-২০২৪
তিন'শ বছরের ঐতিহাসিক মাজার খুঁড়ে ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা তিন'শ বছরের ঐতিহাসিক মাজার খুঁড়ে ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা


ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় তিনশত বছরের পুরাতন ও ঐতিহাসিক বিবি সখিনার মাজার রাতের আঁধারে মাটি খুঁড়ে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কংক্রিটের ঢালাই  ভেঙে প্রাচীন এই মাজারে চার ফুট গভীর গর্ত করে দিয়েছে। তবে কে বা কারা,কী কারণে এই কাজ করেছে তা বলতে পারছেন না কেউই।

বৃহস্পতিবার ১১ জুলাই দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

বিবি সখিনার মাজারটি রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সন্ধ্যারই সাতঘরিয়া এলাকায় একটি বিশাল পুকুর পাড়ে অবস্থিত। পুকুরটির নামও বিবি সখিনা পুকুর বলে পরিচিত।

জানা গেছে, ওই সন্ধ্যারই সাতঘরিয়া এলাকার কবরস্থানের একটি পুকুরের পাশে বিবি সখিনার মাজার কংক্রিটের আস্তরণ দিয়ে তৈরি করা। এই মাজারের মাঝখানের কংক্রিটের ঢালাই ভেঙে চার ফুট মাটি খোঁড়া হয়েছে। ঘটনার দিন সকালে স্থানীয়রা বিষয়টি দেখতে পেলে মুহূর্তে এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। সাথে সাথে শত শত উৎসুক নারী-পুরুষ মাজারটি দেখতে ভিড় করছেন। এলাকাবাসীদের ধারণা, মাজার খোঁড়ার  ঘটনা রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা ঘটিয়েছে। কী কারণে মাজার খোঁড়া হয়েছে তা বলতে পারছেনা না এলাকাবাসী। ঘটনার আগের দিন, দিনের বেলা বিবি সখিনার মাজার ঠিক ছিল। কিন্তু  সকালে তাঁরা দেখতে পান মাজারের ঠিক মাঝখানে চার ফুট গর্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা, আনিসুর, মোজাম্মেল হক, ফারুকসহ আরো কয়েকজন যুবক জানান, বিবি সখিনার মাজার কবে স্থাপিত হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস তাঁরা জানেন না। তবে স্থানীয় দুই একজন বৃদ্ধ বলতেছে এটি তিশত বছরেরও পুরাতন মাজার ও বিবি সখিনা পুকুর। তারা জানান পবিত্র মাজারটি যারা খনন করে তছনছ করেছে, তার একটি হীন মানসিকতার কাজ করেছে। এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো। তাই আমরা এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাই, যেন ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। সেইসাথে মাজারটি সংস্কার করে সার্বক্ষণিক পাহাড়ার ব্যবস্থা যেন করা হয়। যেহেতু মাজারকে কেন্দ্র করে পুকুর পাড়ে গড়ে উঠেছে একটি কবরস্থান ও ঈদগাঁ মাঠ তাই এটির দেখভালের প্রয়োজন রয়েছে বলেও তারা জানান।

জানা গেছে, এ মাজার চত্বরে প্রায় মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে পালন করে আসছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি,মাজারে কনো মানত করলে সেই মানত পূরণ হয়। তাই এলাকাসহ দূর দূরান্ত থেকে নারী-পুরুষ মানত করতে আসে মাজারে। মানতের সময় তারা ছাগল, মুরগী নিয়ে আসে। এগুলো এখানে জবাই করে। গোস্ত, ভাত সবজি রান্না করে মিলাদ শেষে উপস্থিত সকলকে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে। কেউ কেউ আবার মানতের তোবারক হিসাবে সিন্নি বা পায়েস রান্না করে নিয়ে আসে সকলকে খাওয়ায়। প্রায় প্রতিদন অনেকে মাজারে এসে দোয়া-দরুদ পাঠ করেন। কেউ কেউ আবার এটির পরিচর্যাও করেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারি বলেন, বিবি সখিনা নামক মাজার প্রাচীনকালের। এখানে মানুষ এসে দোয়া-দরুদ পড়ে মানত করে। শুনেছি মানুষ  অনেকে উপকার পায়। এই মাজারকে বা কাহারা রাতের আঁধারে খনন করেছে। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।

এব্যাপারে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়ন্ত কুমার সাহা বলেন, মাজার ভেঙে খনন করে ফেলার খবর পেয়েছি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান জানান,বিবি সখিনার মাজারটি রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা খনন করে এটির স্থাপনার বিভিন্ন অংশ ভেঙে দিয়েছে, খবরটি শুনেছি। এটি একটি ঐতিহাসিক মাজার। আমি এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।