‘তাদেরকে (আওয়ামী লীগ) বার বার ফ্যাসিজম আর ফ্যাসিস্ট বলা আমি পছন্দ করি না, কারণ এরাওতো আমাদের পরিবারের সদস্য'- এমন মন্তব্য করে ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তার এই মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে বিতর্কের ঝড়। পতিত স্বৈরাচার দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গুম-খুন, লুটপাট সহ যে ভয়াবহ অপকর্ম করে গেছে তাতে তারা কোনভাবেই সহানুভূতি পেতে পারে না- এমনটাই যুক্তি-তর্ক তুলে ধরছেন নেটিজেনরা।
বুধবার লন্ডনে একটি স্থানীয় হলে বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজ (বিবিসিসিআই)-এর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জামায়িত আমীর এমন মন্তব্য করেন। এর আগে আওয়ামী লীগকে সাধারণ ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
বিবিসিসিআই -এর প্রেসিডেন্ট রফিক হায়দারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুর রহমান বলেন , আমি কোনো মৌলবাদী মুসলমান নই আর আমি কোনো মৌলবাদী না এবং মৌলবাদী কোনো খারাপ জিনিস নয়। মূল না থাকলে গাছের অস্তিত্ব টিকবে না মূল আমাদের লাগবে তবে যে সেন্সে মৌলবাদ স্টিগমাটা দেয়া হয় আমি ওই মৌলবাদী মুসলমান না। আমরা ইউনাইটেড বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমি বারবার ফ্যাসিজম আর ফ্যাসিস্ট বলা পছন্দ করিনা কারণ এরাওতো আমাদের পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। ভুল মানুষই করে , দুর্নীতিও মানুষ করতে পারে। ভুল যে করবে সে ক্ষমা চাইবে , দুর্নীতি যারা করবে তারা শাস্তি পাবে। ন্যায় বিচারের মাধ্যমে সে শাস্তি পাবে কোনো অবিচার করে নয়। কারো উপরে জুলুম করে নয়। বার বার তাদের গালি দিতে হবে আমি এটাকে ভালো মনে করি না। এজন্য আমি বলবো অতীতে যারা রাজনীতি করে গেছেন তারা ভুল করুক আর শুদ্ধ করুক তারাতো করে গেছেন ,এখন আমরা কি করবো সেটা ভাবি। শুধু তাদের পেছনে পড়ে থাকলে আমাদের লাভ কী হবে? তারা যা করেছেন এর সাক্ষী জাতি হয়ে গেছে। জাতি বিচার করবে তাদের কী করবে না করবে। এখন কথা হলো জাতির জন্য আমরা কী করবো?
ডাঃ শফিকুর রহমানের মন্তব্যে দলটির সমর্থকদের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কোন অবস্থাতেই আওয়ামী প্রেম দেখানোর সুযোগ নেই মন্তব্য করে তারা এই ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে মাওলানা সাব্বির আহমেদ ফ্যাসিস্টকে ফ্যাসিস্ট বলার হাদিস উল্লেখ করে লিখেছেন, আবু সায়িদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোনো অন্যায় হতে দেখলে যেন হাত দিয়ে তা প্রতিহত করে। যদি তা না পারে, তবে কথা দিয়ে; তাও না পারলে অন্তর দিয়ে (ঘৃণা করবে)। এটি ঈমানের দুর্বলতম স্তর।’ (মুসলিম : ৭৪)
কাজেই ফ্যাসিস্টদের ফ্যাসিস্ট বলে কিছুটা হলেও ঈমানের দাবি পূরণ করুন। ফ্যাসিস্টদের আত্মীয় স্বজন বলে তাদের প্রতি প্রেম পীরিতি দেখিয়ে দুর্বল ঈমানটুকুও হারাবেন না। মনে রাখবেন নেতারা সকাল বিকাল বদলাতে পারে৷ তবে আমাদের মিয়ারে হক বা সত্যের মাপকাঠিতো শুধুই রাসূল (সা.)।
ক্ষোভ প্রকাশ করে সজিব রহমান লিখেছেন, ওনারা এতোদিন আওয়ামী জুলুমের কথা বলে সিম্পেথি অর্জনের রাজনীতি করেছেন, এখন শুধুমাত্র ভোটের আশায় আওয়ামী লীগকে নিয়ে সফটলি কথা বলছেন!আল্লাহ মাফ করুক।
মোঃ মিজান লিখেছেন, যে বা যারা শত্রুকে যদি বারবার শত্রুু বলতে অমঙ্গল মনে করেন, তাহলে আপনারা মঙ্গলগ্রহে চলে যান,কারণ ফেরাউনেরমতো শত্রু কখনোই ভালোবাসা, উদরতার ইত্যাদির প্রাপ্য নন,বরং একজন মোমেন ব্যক্তি ভালোবাসার, উদারতার প্রাপ্য।বর্তমান স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আমরা সবাই এক ও অভিন্ন।তার সাথে নম্রতা,ভদ্রতা উদারতা, ভালোবাসা দেখানো মানি জুলাইয়ের বিপ্লবীগনের সাথে রক্তের বেঈমানি ছাড়া আর কিছুই না,এখনো পর্যন্ত আমার ভাইয়ের রক্তের দাগ শুকাইনি, এখনো পর্যন্ত মায়ের আহাজারি শেষ হয়নি, এখনো পর্যন্ত স্বৈরশাসকের দাঙ্গা হাঙ্গামা শেষ হয়নি, তাদের সাথে কিসের উদারতা, ভালোবাসা!!!! শুধু তাই নয়, এই স্বৈরশাসক হাজারো উলামায়েকেরামকে মাসকে মাস,বছরকে বছর, অন্যায়ভাবে কয়েদখানায় বন্ধি রেখেছে, ফাঁসির রশিতে লটকানো হয়েছে।
তবুও যদি এই স্বৈরশাসকের অতীতের দেওয়া কষ্টগুলো যদি এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যায় , তাহলে আমরা বোকা ছাড়া আর কিচ্ছু না।
এইচ এম রিফাত হোসাইন লিখেছেন, বিগত ১৫বছরে সবচেয়ে নির্যাতিত হয়েছে জামায়াত শিবিরের কর্মীরাই। আমিরে জামায়াতের এ ধরনের মন্তব্যে কর্মীদের থেকেই তীব্র প্রতিক্রিয়া আসা উচিত।
কর্মীরা গাইরতহীন হলে নেতা লাইনে থাকবে না, অথবা তাদের ওপর গায়রতহীন নেতা চাপিয়ে দেয়া হবে।
শাহ আলম লিখেছেন, বারবার ফ্যাসিস্ট বলা পছন্দ করি না - জামায়াত আমীর'।
আমীর মহোদয় আপনি বার বার না বলেন অন্তত গুনে গুনে ২০০০+ বার বলেন। ২০০০+ মানুষতো খু-ন করেছে তারা ।
শহীদি মিছিল এখনো চলমান, এত তাড়াতাড়ি ভদ্র হয়ে গেলেতো কেমনে?
ইফতেখার হোসেন লিখেছেন, জামায়াতে ইসলামী আমীর এর মিডিয়ায় কথা কম বলা উচিত। সবার সামনে কথা বলতে আরও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
দীর্ঘ সময় এভাবে কথা বলতে, মিডিয়া ফেস করতে অভ্যস্ত না হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বের বক্তব্য অগোছালো অসম্পূর্ণ আর বেফাস কথা বের হয়ে যাচ্ছে। সেটা ঢাকতে আরও কতো কথা বলতে হচ্ছে।
শামসুল হুদা মাসুম লিখেছেন, বারবার ফ্যাসিস্ট বলা পছন্দ করেন না, ওটা আপনার সমস্যা। কিন্তু রাজাকারদের রাজাকার, ফ্যাসিস্টদের ফ্যাসিস্টই বলা হবে। ইতিহাস যতদিন মুছে না যায়, ততদিন। যত বলা লাগবে, ততবার।
নাজমুল ইসলাম লিটন লিখেছেন, ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন ফ্যাসিস্ট কে বারবার ফ্যাসিস্ট বলা উনি পছন্দ করেন না, উনি আরোও বলেছেন তারা নাকি উনার পরিবারের সদস্য। তারমানে উনার বাসুর, বুঝলাম বাসুরের নাম মুখে নিতে উনার লজ্জা লাগে।
আমি জানিনা এই বক্তব্য জামাতের আমিরের ব্যাক্তিগত না দলীয়। উনি চাইলেই ফ্যাসিস্টকে ক্ষমা করতে পারেন? আমিতো বলবো দলগতভাবে জামাতেরও সেই এখতিয়ার নাই।
বিগত ফ্যাসিজমের আমলে হাজার হাজার সাধারন নিরিহ মানুষকে জামাত-শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। উনি ক্ষমা করলে নির্যাতিত মানুষগুলোর দায়ভার উনি নিবে না উনার দল নিবে?আসলে রাজনীতি খুব নোংরা জিনিস। ক্ষমতার জন্য সাদা পাঞ্জাবিওয়ালারা পতিতাবৃত্তিকে জায়েজ বলতেও দ্বিধা করেনা!
আদিল হাসান লিখেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছে জামাত। দলটির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। অসংখ্য নেতা কর্মীকে গুম খুন করা হয়েছে। এই জামাতের মুখে আওয়ামী প্রেম মানায় না। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসলে জামাতকে আবারো আগের চেয়ে কঠিন ভাবে নির্মূল করবে- এ কথাটা মনে রাইখেন। একটা কথা আছে, কয়লা ধুইলে ময়লা যায় না।