রাজশাহীর তানোরে সাবেক এক প্রভাষক পরিবারের বিরুদ্ধে দু'দফায় অবৈধভাবে সরকারি রাস্তার গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত ৩ জুলাই বুধবার এলাকাবাসির পক্ষে আসলাম উদ্দিন মিয়া বাদি হয়ে তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তানোর পৌরসভার বুরুজ মহল্লার আলহাজ্ব সৈয়দ আলী মিয়ার পুত্র ও তানোর সরকারী এ,কে,সরকার ডিগ্রী কলেজের সাবেক প্রভাষক সোহরাব আলী মিয়াকে প্রধান করে মোট ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। স্থানীয়রা এই ঘটনাকে গাছ খেকো প্রভাষকের কান্ড বলে অভিহিত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা বলেন, এর আগেও সোহরাব আলী মিয়া রহিমা ডাঙা মৌজায় সরকারি খাস পুকুর ভরাট করেছে। আবার কারিগরি কলেজ নির্মাণ করে নিয়োগ বাণিজ্যে ও রাতারাতি সেই কলেজ গায়েব করে কলেজের জায়গায় ধানচাষ করছে। তারা এবিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদুক) হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, বাজশাহী জেলার তানোর পৌরসভার অন্তর্গত ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জেএল নম্বর ১৩১, মৌজা- বুরুজ, আরএস দাগ নম্বর ৩৮০। সরকারি রাস্তার নকশার প্রকৃত স্থান পরিবর্তন করে নিজের স্বার্থে অন্যপাশ দিয়ে ২০ ফিট বিশিষ্ট রাস্তা নির্মাণ করেছে। যার দু-পাশে মেহগনি, ইউকালেক্টর ও তালগাছ ছিল। যাহার আনুমানিক মূল্য ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা। আরও সময় পেলে উক্ত গাছগুলি আরো মূল্যবান হতো। যাহা ১ নম্বর বাদীর পিতা তার নিজ সীমানায় রোপণ করেন এবং স্থানীয় জনগন কর্তৃক রোপিত ছিল।।বর্তমানে উক্ত বিবাদীগণ রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাবশালী হওয়ায় প্রভাষক সোহরাব আলীর নির্দেশে এবং লাইসেন্স বিহীন সার্ভেয়ার ৮নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন (ভাদু)- র যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে দু'দফায় সরকারি রাস্তার মূল্যবান প্রায় ১৪টি তাজা গাছ কর্তন করা হয়েছে। যাহা সম্পূর্ণ বে-আইনী ও অপরাধমূলক কাজ। উল্লেখ্য যে, উক্ত রাস্তার পার্শ্বে বাদীর জমি থাকায় দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর যাবৎ উক্ত রাস্তা ভোগদখল করিয়া আসিতেছে। বর্তমানে তারা উক্ত রাস্তার পার্শ্বে অন্য কাউকে যাতায়াত করতে দিবে না মর্মে ভীতি প্রদর্শন করিতেছে। তারা রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাবশালী দাঙ্গাবাজ হওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে নাম উল্লেখপূর্বক কেহ অভিযোগ করার সাহস রাখে না।
এদিকে এসব গাছ নিধনের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসির মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়। এঘটনায় বিবাদমান দু'পক্ষের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা ঘটনা সরেজমিন তদন্তপুর্বাক জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন।
এবিষয়ে সাবেক প্রভাষক সোহরাব আলী মিয়া ও ওহাব হোসেন লালু মিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রাস্তার কোন গাছ কাটা হয়নি। আসলাম উদ্দিন জায়গা জমি মাপার জন্য আমিন এনেছিল। মাপার পর তার জমির সামনের পজিশনটি আমাদের পড়ে। মুলুত একারনে সে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। সে একজন প্রতারক। আমাদের নিজস্ব জায়গার উপরে গাছ ছিল সেগুলো কাটা হয়েছে।
এবিষয়ে আসলাম উদ্দিন মিয়া বলেন, গত প্রায় ৩-৪ মাস আগে তারা কিছু গাছ কাটে। ওই সময় তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় তানোর পৌর মেয়রকে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু পৌর মেয়র ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আরব আলীর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বাধ্য হয়ে ৩ জুলাই বুধবার তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
এবিষয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডকাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আরব আলী জানান, রাস্তা টি সোহরাব ও ওহাব হোসেন লালু মিয়াদের নিজস্ব জায়গা। তারা রাস্তা করার জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়েছে এটাই তো অনেক। যে রাস্তার গাছ কেটেছে সে জায়গা নাকি খাস জানতে চাইলে তিনি জানান এটা আমার জানা নেয়, তবে শুনেছি কিছু খাস থাকতে পারে।
এবিষয়ে তানোর পৌর মেয়র ইমরুল হক জানান,অফিসে গিয়ে ফাইল দেখে এবিষয়ে বলতে পারবেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।