সুরা হাক্কাহ কোরআনের ৬৯তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ৫২ এবং রুকু সংখ্যা ২। সুরা হাক্কাহ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
সুরা হাক্কাহ শুরু হয়েছে ‘হাক্কাহ’ সম্পর্কে প্রশ্নের মাধ্যমে। ‘হাক্কাহ’ শব্দের মূল অর্থ নিশ্চিত বা বাস্তব বিষয়। এখানে ‘হাক্কাহ’ অর্থ কেয়ামত বা শেষ বিচারের দিন যা অবশ্যম্ভাবি বা নিশ্চিত ঘটনা এবং যেদিন আল্লাহর পুরস্কারের ওয়াদা ও শাস্তির সতর্কবার্তা বাস্তবায়িত হবে এবং মানুষের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারিত হবে।
সুরা হাক্কাহর আলোচ্য বিষয় কেয়ামতের ভয়াবহতা, কোরআন ও ওহির সত্যতা, নবিজির (সা.) রিসালত, কাফেরদের বিভিন্ন অপবাদ, অবিশ্বাস ও পাপাচারের কারণে পূর্ববর্তী বিভিন্ন জাতির শাস্তি ইত্যাদি।
সুরা হাক্কাহর ১৩-১৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন,
(১৯)
فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَيَقُولُ هَاؤُمُ اقْرَأوا كِتَابِيَهْ
ফাআম্মা মান ঊতিয়া কিতাবাহূ বিইয়ামীনিহী ফাইয়াকূলু হাউমুকরাঊ কিতাবিয়াহ।
যাকে আমলনামা দেওয়া হবে তার ডান হাতে, সে বলবে, এই যে আমার আমলনামা, তোমরা পড়ে দেখ।
(২০)
إِنِّي ظَنَنْتُ أَنِّي مُلاقٍ حِسَابِيَهْ
ইন্নী জানানতু আন্নী মুলাকিন হিসাবিয়াহ।
আমি বিশ্বাস করতাম যে, আমাকে অবশ্যই হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে।
(২১)
فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ
ফাহুওয়া ফী ঈশাতির রাদিয়াহ।
অতঃপর সে সুখী জীবন-যাপন করবে,
(২২)
فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٍ
ফী জান্নাতিন আলিয়াহ।
সেই সমুন্নত জান্নাতে।
(২৩)
قُطُوفُهَا دَانِيَةٌ
কুতূফুহা দানিয়াহ।
যার ফল ঝুঁকে থাকবে নাগালের মধ্যে।
(২৪)
كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئاً بِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الْأَيَّامِ الْخَالِيَةِ
কুলূ ওয়াশরাবূ হানীআম বিমা আসলাফতুম ফিল আইয়ামিল খালিয়াহ।
বিগত দিনে তোমরা যা প্রেরণ করেছিলে, তার প্রতিদানে তোমরা খাও এবং পান কর তৃপ্তি সহকারে।
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই:
১. পরকাল, হিসাব ও প্রতিদানে বিশ্বাস মুসলমানদের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস, পরকালে অবিশ্বাসী হয়ে কেউ মুমিন হতে পারে না। পরকালের বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে অন্তরে ধারণ করা আমাদের কর্তব্য।
২. আখেরাতের জীবনে যথাযথ বিশ্বাস থাকলে মানুষ গুনাহ করতে পারে না। যারা সত্যিকারভাবেই বিশ্বাস করে একদিন তাকে তার রব আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সব কাজের হিসাব দিতে হবে, সে রবের অবাধ্যতায় ডুবে যেতে পারে না। কখনও ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলেও দ্রুত তওবা করে নেয়।
৩. যাদের আমলনামায় নেক আমলের প্রাধান্য থাকবে, তাদের আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে। এটা হবে তাদের মুক্তির নিদর্শন। ডান হাতে আমলনামা পেয়ে তারা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠবে।
৪. দুনিয়া আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। মানুষ দুনিয়াতে যে ভালো বা মন্দ যে আমল করবে, তার ফল আখেরাতে লাভ করবে।