তালিবানের জঙ্গিপনার ব্যয়ও দিনের পর দিন বহন করেছে আফিম চাষ আর মাদক। এমনই অভিযোগ ছিল আফগানিস্তান সরকার থেকে শুরু করে বিশ্বের বহু দেশেরই। এবার আফগানিস্তানের প্রথম শাসক গোষ্ঠী হিসেবে আফিম চাষ এবং মাদক উত্পাদন নিষিদ্ধ করল তালিবান।
বিশ্বের বৃহত্তম আফিম উত্পাদনকারী দেশ আফগানিস্তান। প্রধান তালিবান নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নির্দেশমতো, আফগানিস্তান প্রশাসন ঘোষণা করেছে, ‘সমগ্র আফগানিস্তানে কোনও ব্যক্তি আর পোস্তচাষ করতে পারবে না। যদি কেউ এই নির্দেশনামা অস্বীকার করেন, তবে তাঁর ফসল তো নষ্ট করে দেওয়া হবেই। সঙ্গে, শরিয়ত আইন অনুযায়ী তাঁকে শাস্তিও দেওয়া হবে।’ নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, মাদক উত্পাদন, ব্যবহার, বহন করাও যাবে না।
দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের কাছে মাদক নিয়ন্ত্রণের দাবি জানাচ্ছিল। গত আগস্টে আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখল করেছে তালিবান। তারপর থেকেই তারা আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে স্বীকৃতির দাবি জানাচ্ছে। কারণ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক দুনিয়া তালিবান-শাসিত আফগানিস্তানকে নিষিদ্ধ করেছে। সেই নিষেধাজ্ঞার জেরে আফগানিস্তানের ব্যাংকিং পরিষেবা, ব্যবসা এবং উন্নয়ন লাগাতার ব্যাহত হচ্ছে।
এর আগে তালিবান যখন আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিল, সেই সময় জমানার শেষ দিকে ২০০০ সালেও তারা আফিম চাষ বন্ধের ঘোষণা করেছিল। কিন্তু, প্রবল বিরোধের মুখে সেই সময় তারা অবস্থান বদলাতে বাধ্য হয়। রাষ্ট্রসংঘের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে আফগানিস্তানের আফিম উত্পাদনের পরিমাণ ছিল ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার। সম্প্রতি সেটা আরও বেড়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আফগানিস্তানের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। সেই কারণেই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রদেশে আফিম উত্পাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ, বাজারে গমের চেয়ে আফিমের দাম অনেক বেশি।
তালিবান জঙ্গিরা জানিয়েছে, এবারও তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল না। তালিবান সরকারের মধ্যে থেকেই অনেকে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। শুধু তাই নয়, পোস্ত চাষিদের একাংশ বিদ্রোহ করতে পারে বলেও তারা মনে করছে। এই প্রসঙ্গে হেলমন্দ প্রদেশের এক চাষি জানিয়েছেন, আফিমের দাম বাজারে ইতিমধ্যেই বেড়ে গিয়েছে। তালিবান আফিম নিষিদ্ধ করতে পারে। একথা জানার পরই বেড়েছে দাম। এই পরিস্থিতিতে তালিবান সরকার না-চাইলেও তিনি পরিবারের স্বার্থে পোস্ত চাষ করবেন বলে ওই চাষি জানিয়েছেন।
রাজশাহীর সময় / এম আর