অভিনেতাদের একাধিক ভ্যানিটি ভ্যান ও শেফের জন্য নির্মাতাদের বাজেট অনেকটা বেড়ে যায় এই প্রসঙ্গে এবার মুখ খুললেন অভিনেত্রী তানিশা মুখোপাধ্যায়। বড় তারকাদের এমন দাবি পূরণের জন্য কর্পোরেট কোম্পানিগুলোকে দায়ী করেছেন তানিশা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তানিশা বলেন, "ধরুন একজন স্বতন্ত্র প্রযোজক যদি অভিনেতার কাছে যান এবং বলেন আমি আপনার সঙ্গে একটি ছবিতে কাজ করতে চাই। এই ছবির জন্য আমি আপনাকে ৫ কোটি টাকা দিতে পারি। অন্যদিকে, কর্পোরেট সংস্থাগুলি ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে, আমরা আপনার ৩০ দিন নেব, এর জন্য আমরা আপনাকে ৩০ কোটি টাকা দেব, সেক্ষেত্রে ওই অভিনেতা কাকে বেছে নেবেন, তা বুঝতে নিশ্চয়ই অসুবিধা হয় না। এরকম পরিস্থিতিতে কীভাবে একজন স্বতন্ত্র প্রযোজক একটি প্রোডাকশন হাউসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন?"
কিছু পরিস্থিতির উদাহরণ দিয়ে তানিশা বলেন, "অভিনেতা আপনার সেটে কতটা সময় ব্যয় করছেন তা জানতে হবে৷ অক্ষয় কুমারের মতো একজন অভিনেতা যখন বলেন, তিনি কেবল ৯টা থেকে ৫টা কাজ করবেন, তখন সেটা আলাদা ব্যাপার। তিনি কাজ করে বাড়ি চলে যাচ্ছেন তারপর জিম করছেন। কিন্তু আপনি যে অভিনেতার সঙ্গে কাজ করছেন তিনি কী মাত্র ৯টা থেকে ৫টা কাজ করছেন? তিনি তো আরও বেশি সময়ের জন্য আছেন, তারপরও আপনি কীভাবে বলতে পারেন 'অভিনেতারা বাহানা দিচ্ছে'? যে অভিনেতা আপনার সঙ্গে কাজ করছেন তিনি কি আপনার সঙ্গে ১৪ ঘণ্টার শিফট করতে ইচ্ছুক? এই বিষয়গুলি বিবেচনা করে বিশ্লেষণ করার পরে আপনি তাঁদের ভ্যানিটি ভ্যানে, জিম এবং শেফ এইসব দাবিগুলি অবাস্তব কিনা তা বলতে পারেন। যিনি ১৪ ঘণ্টা কাজ করছেন, অবশ্যই তাঁর একজন শেফের প্রয়োজন হবে, সে কীভাবে তার নিজের খাবার নিজে করতে পারবেন? আর সঠিক সময়, ডায়েট মেনে খাবার না খেলে চেহারাতেও তো তার প্রভাব পড়বে। যদি সে নিজের সব কাজ একা করে তাহলে শ্যুটিং করার জন্য কতক্ষণ সময়ই বা পাবেন তিনি?"
তানিশা প্রযোজক এবং অভিনেতাদের মধ্যে আর্থিক গতিশীলতা সম্পর্কেও কথা বলেছেন। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে প্রযোজকদের সাহসী হতে হবে এবং অভিনেতাদের স্বাক্ষর করার আগে শর্তাবলী স্পষ্টভাবে তাঁদের জানিয়ে দিতে হবে। যদি তাঁরা একজন তারকার খরচ বহন না করতে পারেন তাহলে সেই তারকার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে থাকলেও সরে আসতে হবে। তানিশা প্রথম সারির তারকাদের ছোটখাটো বিষয়গুলি নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে বড় করে যেভাবে দেখানো হয় তার নিয়েও সমালোচনা করেছেন। তিনি অপ্রয়োজনীয় খরচগুলির কথা স্বীকার তো করেছেন, তবে তাঁর বিশ্বাস, যে এটি নির্মাতারা চেষ্টা করলেই এগুলি সামাল দিতে পারেন।
তিনি মনে করেন, ছবির বাজেট নির্ভর করে পরিচালকের ওপর। তিনি শ্যুটিংয়ের দিন কমানোর পরামর্শ দেন। তাঁর মতে, একটি ভ্যানিটি ভ্যানের জন্য প্রতিদিন মাত্র ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে, এরকম একটি তুচ্ছ বিষয় খবরে আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে না। অভিনেত্রী আরও কতগুলি বিষয় তুলে ধরেন। তিনি কম বাজেটে নিয়ে যেসব স্বাধীন প্রযোজকরা কাজ করছেন তাঁদের সরাসরি তারকাদের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তারকারা কর্পোরেট প্রযোজকদের কাছ থেকে বেশি চাহিদা করে, এরফলে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের একটা বাজার দর বেশি হয়ে যায়।
তানিশা সিনেমার মান নির্ধারণে দর্শকদের ভূমিকা নিয়েও মন্তব্য করেছেন, বছরের পর বছর খারাপ ছবি দেখে যাওয়ার জন্য তিনি তাঁদের সমালোচনাও করেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে, দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার প্রবণতাও কমেছে। তাই ছবি বাজেট বেশি হোক বা কম বাণিজ্যিক ভাবে সাফল্য আনতে পারছে না।