ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ৩ এপ্রিল আস্থা ভোটের আগে কোনও বড় অঘটন না ঘটলে তাঁর সরকারের পতন নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে।
দু’দিন আগেই শরিক পিএমএল-কিউকে পঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন ইমরান। মনে হচ্ছিল, তাঁর এই চালে কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়ল বিরোধীরা। কিন্তু ইমরানের পিটিআই আরও বড় ধাক্কা খেল আজ। সকালেই পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাবল ভুট্টো জ়ারদারি দাবি করেছিলেন, শাসক জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক এমকিউএম-পির সঙ্গে তাঁদের সমঝোতা সম্পূর্ণ। পরে সাংবাদিক বৈঠকে এমকিউএম-পি জানিয়ে দেয়, ‘জাতীয় স্বার্থে’ তারা বিরোধী জোটে যোগ দিচ্ছে। এই দলের দুই মন্ত্রী-সহ সাত জন এমপি রয়েছেন। ফলে এক ধাক্কায় ইমরানের সাতটি ‘উইকেট’ পড়ে যায়।
পিটিআইয়ের আর এক জোটসঙ্গী বালুচিস্তান আওয়ামি পার্টিও সরকারের হাত ছেড়েছে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে তাদের পাঁচ সদস্যের মধ্যে একমাত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ়ুবেদ জালাল ছাড়া বাকি চার জন জোট ছাড়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। এমনকি পিএমএল-কিউয়ের পাঁচ এমপি-র মধ্যে জলসম্পদ মন্ত্রী তারিক বশির চিমা ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। ৩৪২ আসনের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আস্থা ভোটে জিততে হলে ইমরানের দরকার ১৭২টি ভোট। কিন্তু অঙ্ক বলছে, শাসক জোটের ঝুলিতে এখন রয়েছে মাত্র ১৬৪টি আসন। বিরোধীদের রয়েছে ১৭৬টি। বিলাবল বলেন, ‘‘শীঘ্রই বিরোধী দলনেতা শাহবাজ় শরিফ প্রধানমন্ত্রী হবেন।
সন্ধের মধ্যেই জল্পনা চরমে ওঠে, ইমরান কি ইস্তফাই দেবেন? যদিও সেই তত্ত্ব খারিজ করে পিটিআইয়ের মুখপাত্র নীলম ইরশাদ শেখ বলেন, ‘‘ইমরান খান শেষ বল পর্যন্ত খেলবেন। সেনাপ্রধান এবং আইএসআইয়ের ডিজি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দেবেন।’’ যদিও পরে বক্তৃতার পরিকল্পনা বাতিল করেন ইমরান। সরকারের দাবি, সেনা প্রধানমন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে বলেনি।
গত রবিবার ইসলামাবাদের জনসভায় পাক প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, চিঠি দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁদের। এ দিন ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে ইমরান বলেন, ‘‘অনাস্থা প্রস্তাব তো একটা বৈধ সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। এখানে যা হচ্ছে, সেটা হল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে আমদানি করা সঙ্কট। আমি এ বার শরিক দলগুলিকে ওই নথি (চিঠি) দেখাব। সিনিয়র সাংবাদিকদেরও দেখাব।
পরে কয়েক জন সাংবাদিককে ডেকে পাঠান ইমরান। একটি চ্যানেলের দাবি, চিঠিটিতে ‘কোনও একটি দেশের’ কর্তাদের সঙ্গে ওই দেশের পাক দূতাবাসের এক কর্তার বৈঠকের নির্যাস রয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়। পাক সরকারের ইউক্রেন-নীতি এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ওই দেশটি নাকি অসন্তুষ্ট। কিন্তু সেটি কোন দেশ, তা খোলসা করেনি পাক সরকার। পাক প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে চ্যানেলটি বলেছে, ‘‘চিঠিতে রয়েছে, ইমরান খান ক্ষমতায় থাকলে পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট দেশটি মনে করছে।’’ ইমরানের দাবি, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা প্রস্তাব পেশের আগেই ওই চিঠিতে অনাস্থা প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছিল। তবে কী ‘হুমকি’ দেওয়া হয়েছিল, তা বলেননি তিনি। তবে পিটিআইয়ের বর্ষীয়ান নেতা ফয়সল ভওড়া দাবি করেছেন, ইমরানের প্রাণসংশয় হতে পারে। তাঁকে খুনের ছক কষা হয়েছে।
আস্থা ভোটের দিনে দলের এমপি-দের হয় অনুপস্থিত থাকতে অথবা ভোটদানে বিরত থাকতে বলেছেন ইমরান। শাহবাজ় শরিফ বলেছেন, ‘‘আজ সব বিরোধী একজোট। দৃষ্টান্ত রেখে ইস্তফাই দেওয়া উচিত প্রধানমন্ত্রীর।’’ ইতিহাস বলছে, এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের কোনও প্রধানমন্ত্রী আস্থা ভোটে গদিচ্যুত হননি। ভবিষ্যৎ যা-ই হোক, ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি আরও এক বার ঘোর অনিশ্চয়তার মুখেই দাঁড়িয়ে।