২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০১:২৪:১৭ অপরাহ্ন


“এপ্রিল ফুল” বোকা বানানোর দিবসটির জন্মই বিদেশে
শাপলা খাতুন :
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৪-২০২৪
“এপ্রিল ফুল” বোকা বানানোর দিবসটির জন্মই বিদেশে “এপ্রিল ফুল” বোকা বানানোর দিবসটির জন্মই বিদেশে


এপ্রিল ফুল করার মাধুর্য কমে এলেও এক-দুদশক আগেও এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটা আনন্দ, মজা, হাসিঠাট্টার মধ্য দিয়ে পালিত হতো এপ্রিল ফুল বলে। নিতান্তই নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে দিনটি নিয়ে মশকরার মধ্য দিয়ে কেটে যেত। শুধু এদেশে নয়, এপ্রিল ফুল পালিত হয় গোটা বিশ্বেই। কারণ এই বোকা বানানোর দিবসটির জন্মই বিদেশে।

এর ইতিহাস নিয়ে অনেক কাহিনি প্রচলিত আছে। এক-এক দেশে এক-একরকম সংস্কৃতির সঙ্গে যোগ রয়েছে এইসব গল্পগাছার। যেমন:

 ক্যালেন্ডার বদল: ১৫৬৪ সালে ফ্রান্স দেশের ক্যালেন্ডার বদল করে। এর আগে বছর শুরু হতো মার্চের শেষ থেকে। কিন্তু ওই বছর সেটি বদলে নতুন বছর শুরু করা হয় ১ জানুয়ারি থেকে। এই পরিবর্তন অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা ২৫ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন বছরের সূচনা পালন করতে থাকেন। যাঁরা পরিবর্তনটি মেনে নেন, তাঁদের বোকাও বানাতে থাকেন। তাঁদের পিঠে কাগজের তৈরি মাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়। নতুন ক্যালেন্ডারের পক্ষে যাঁরা, তাঁদের ডাকা হত এপ্রিল ফিশ বলে। সেই থেকেই এপ্রিল ফুলের গল্প শুরু হয়।

রোমান কাহিনি: রোমান দার্শনিক প্লুটো যখন তাঁর স্ত্রী পারসিফনকে অপহরণ করে আনেন, তখন পারসিফনের মা সেরিস মেয়েকে খোঁজার অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু পান না। মেয়ে তখন মাটির নীচে। কিন্তু তাঁর মা ‘বোকার মতো’ মাটির উপরে খুঁজতে থাকেন। সেই ‘বোকামি’র কথা ভেবেই নাকি রোমানরা এই দিনটিতে বোকামি দিবস পালন করত।

বিলাতি লোককথা: ব্রিটিশ লোককথা বলে, নটিংহ্যামশায়ারের ‘গথাম’ শহর নাকি ছিল বোকাদের শহর। ত্রয়োদশ শতকে নিয়ম ছিল, সে দেশের রাজা যেখানে যেখানে পা রাখবেন, তা হয়ে যাবে রাষ্ট্রের সম্পত্তি। যখন গথামবাসীরা শুনলেন, রাজা আসছেন, তাঁরা নাকি বললেন, ঢুকতে দেবেন না। রাজা সৈন্য পাঠালেন। সৈন্য এসে দেখল সারা শহরে ভয়াবহ কাণ্ড! সবাই বোকার মতো কাজ করছে। তারা ফিরে গিয়ে রাজাকে জানাল। রাজা বললেন, এমন বোকাদের শাস্তি দেওয়া যায় না। তাই তিনি মাফ করে দিলেন। গথাম স্বাধীন থাকল। সেই থেকে দিনটি ‘বোকা দিবস’।

জার্মানে বলে: ১৫৩০ সালের ১ এপ্রিল, জার্মানির অগসবার্গ শহরে একটি আলোচনাসভা বসার কথা ছিল। আলোচনার ফলের কথা ভেবে অনেকে বিপুল টাকা বাজি ধরেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই সভা বসেই না। বহু মানুষের টাকা গচ্চা যায়। এই বোকামি থেকেই এপ্রিল ফুলের শুরু।

নেদারল্যান্ডসের কাহিনি: ১৫৭২ সালের ১ এপ্রিল। এদিন নেদারল্যান্ডসের ডেন ব্রিয়েল শহরটি স্প্যানিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়। এই দিন বিদ্রোহীরা স্পেনের শাসকদের বোকা বানিয়ে ছাড়ে। তারপর থেকেই নাকি এপ্রিল ফুল পালন করা হয়।

 অনেকে বলে থাকেন,  ল্যাটিন শব্দ ‘হিলরা’ থেকে এই এপ্রিল ফুলের ভাবনা এসেছে। এই শব্দের অর্থ হল হাসি-ঠাট্টা। আর তা থেকেই এই এপ্রিল ফুলের দিন হাসি আনন্দে মেতে থাকার ভাবনা এসেছে। জিওফ্রে চসারের ‘দ্য ক্যান্টারবারি টেলস’-এ ৩২ মার্চ বা ১ এপ্রিলের উল্লেখ রয়েছে। এতক্ষণ আপনারা যা পড়লেন, তার বিশেষ কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই কিন্তু। বেশিরভাগটাই অনুমান নির্ভর এবং লোকশ্রুতি। ফলে পুরোটা পড়ার পর মনে হতেই পারে আমিও কি এপ্রিল ফুল হলাম!