কেউ বা ভিড়ভাট্টা, পরিবেশ দূষণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সমস্যার থেকে মুক্তি পেতে পাড়ি দিতে চান ভিনদেশে। আবার কেউ অঢেল কালো টাকা জমিয়ে বা হাতিয়ে পাড়ি দিতে চান ভিনদেশ। বিশ্বের বেশ কিছু দেশ আছে যেখানে টাকার বিনিময়ে গোটা দ্বীপ কিনে আপনি সেখানকার নাগরিকত্ব পেতে পারেন। একথা ঠিক যে কিছু দেশ আছে যাদের নাগরিক সংখ্যা অত্যন্ত কম বলে, তারা জনবহুল দেশের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব অফার করে থাকে।
তার জন্য চকরি, বাডি়, অর্থ সহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুটিও দেয় সে দেশের সরকার। কিন্ত্ত আবার এমন কিছু দেশও রয়েছে যেখানকার নাগরিকত্ব পেতে গেলে নাভিঃশ্বাস উঠে যায়। এই দেশগুলিতে স্থায়ী হওয়ার জন্য আপনি যতই পরিশ্রম করুন না কেন, শুধুমাত্র নির্বাচিত ব্যক্তিদেরকেই নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। জানতে চান এই তালিকায় কোন কোন দেশের নাম রয়েছে।
ভ্যাটিকান সিটি: বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটি। তার থেকেও ক্ষুদ্র এখানে থাকা মানুষজনের সংখ্যা। প্রায় ৮০০ জন মানুষ বসবাস করেন। কিন্তু জেনে আশ্চর্য হবেন এঁদের মধ্যে ৪৫০ জন এখানকার নাগরিক। ইউএস লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস অনুসারে, ভ্যাটিকান সিটির বাসিন্দা হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই একজন ক্যাথলিক কার্ডিনাল হতে হবে এবং যাঁরা ইতিমধ্যেই রোম বা ভ্যাটিকান সিটিতে বসবাস করছেন। নাগরিকত্ব পাওয়ার আরেকটি উপায় হল সরাসরি চার্চ প্রশাসনের কাছে আবেদন করা। তবে হ্যাঁ, সেই আবেদনও শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিরাই করতে পারবেন যাঁদের ভ্যাটিকান সিটিতে বসবাসের জন্য বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এবং সেই ব্যক্তি স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তানরাও এই পদ্ধতিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য।
অস্ট্রিয়া: আপনি যে পেশায় নিযুক্ত তার চাহিদা থাকলে তবেই অস্ট্রিয়াতে থাকতে যেতে পারবেন। বর্তমানে এখানে মাত্র ১১টি পেশার চাহিদা রয়েছে। এর বাইরে কেউ কোনও পেশায় নিযুক্ত থাকলে তাঁকে শীর্ষস্থানীয় হতে হবে, না হলে নাগরিকত্ব মিলবে না। পাশাপাশি ব্যক্তিকে ১০ বছর অস্ট্রিয়াতে থাকতে হবে, জার্মান ভাষা শিখতে হবে এবং অস্ট্রিয়ার নাগরিকত্বের জন্য অন্য কোনও দেশের নাগরিকত্ব ছেডে় দিতে হবে।
ভুটান: পর্যটকদের কাছে দারুণ প্রিয় বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন দেশগুলির মধ্যে অন্যতম ভুটান। এই দেশটি দারুণ আকর্ষণীয়। ভুটানের নাগরিকত্ব আইন অনুসারে, জন্মের সময় কোনও শিশুকে নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য, পিতামাতা উভয়কেই ভুটানের নাগরিক হতে হবে। যাদের অভিভাবকদের মাত্র একজন ভুটানি, তাদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার আগে ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। অ-ভুটানি বাবা-মা সহ বিদেশে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিরা ভুটানে ২০ বছর বসবাসের পরে এবং ১৫ বছর সরকারের হয়ে কাজ করার পরে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে সাবধান রাজা বা দেশের বিরুদ্ধে কথা বলে ধরা পড়লেই নাগরিকত্ব শেষ।
চিন: ২০২4 সালের আদমশুমারি অনুসারে চিনের জনসংখ্যা বিশ্বে সবার ওপরে। আর আদমশুমারির হিসেব অনুযায়ী, এই দেশে এক বিলিয়নেরও বেশি আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র ৯৪১ জনকে নাগরিক করা হয়। আইন অনুসারে, চিন সরকার কোনও বিদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের নাগরিক হওয়ার জন্য তখনই অনুমতি দেবে, যদি তাঁর কোনও আত্মীয় চিনা নাগরিক হন, যদি তাঁরা চিনে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন অথবা যদি তাঁদের চিনা নাগরিক হওয়ার অন্য কোনও 'বৈধ কারণ' থাকে।
জার্মানি: জার্মান নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য, আপনাকে অবশ্যই জার্মান ভাষায় কথা বলতে এবং দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। সেদেশে চাকরি এবং বসবাসের প্রমাণও দিতে হবে। সেই নাগরিককে কমপক্ষে ৮ বছর জার্মানিতে থাকতে হবে এবং অন্য কোনও নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হবে।
জাপান: জাপানের নাগরিক হতে হলে প্রথমে আপনাকে পাঁচ বছর জাপানে থাকতে হবে। আপনাকে অন্য দেশের নাগরিকত্বও ছেডে় দিতে হবে। একবার আপনি যোগ্য হয়ে গেলে এবং আবেদন করলে, আপনাকে একটি পর্যালোচনা এবং ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে যা সম্পূর্ণ হতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে।