সুরা নাবা কোরআনের ৭৮তম সুরা। এর আয়াত সংখ্যা ৪০টি, রুকু ২টি। সুরা নাবা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। দ্বিতীয় আয়াতে বর্ণিত ‘নাবা’ শব্দটি থেকে এ সুরার নাম হয়েছে নাবা। নাবা শব্দের মূল অর্থ সংবাদ, এখানে কেয়ামতের ও আখেরাতের সংবাদ বোঝানো হয়েছে। কেয়ামত ও আখেরাতের সংবাদই এ সুরার মূল আলোচ্যবিষয়।
সুরা নাবার ১-১৬ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,
(১)
عَمَّ يَتَساءَلُونَ
আম্মা ইয়াতাসাআলুন।
তারা একে অপরের কাছে কী বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে?
(২)
عَنِ النَّبَإِ الْعَظِيمِ
আনিন-নাবাইল আজীম।
সেই মহাসংবাদ বিষয়ে,
(৩)
الَّذِي هُمْ فِيهِ مُخْتَلِفُونَ
আল্লাযী হুম ফীহি মুখতালিফূন।
যে বিষয়ে তাদের মধ্যে মতানৈক্য আছে।
(৪)
كَلاّ سَيَعْلَمُونَ
কাল্লা-সাইয়ালামূন।
কখনও না, এদের ধারণা অবাস্তব, এরা শীঘ্র জানতে পারবে;
(৫)
ثُمَّ كَلاّ سَيَعْلَمُونَ
সুম্মা কাল্লা সাইয়ালামূন।
আবার বলি কখনও না, এরা অচিরেই জানবে।
(৬)
أَلَمْ نَجْعَلِ الْأَرْضَ مِهاداً
আলাম নাজআলিল আরদা মিহাদা।
আমি কি করি নাই ভূমিকে শয্যা
(৭)
وَالْجِبالَ أَوْتاداً
ওয়াল-জিবালা আওতাদা।
ও পর্বতসমূহকে কীলক?
(৮)
وَخَلَقْناكُمْ أَزْواجاً
ওয়া খালাকনাকুম আঝওয়াজা
আমি সৃষ্টি করেছি তোমাদের জোড়ায় জোড়ায়,
(৯)
وَجَعَلْنا نَوْمَكُمْ سُباتاً
ওয়া জাআলনা নাওমাকুম সুবাতা।
তোমাদের নিদ্রাকে করেছি বিশ্রাম,
(১০)
وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِباساً
ওয়া জাআলনাল-লাইলা লিবাসা।
করেছি রাত্রিকে আবরণ,
(১১)
وَجَعَلْنَا النَّهارَ مَعاشاً
ওয়া জাআলনা-ন্নাহারা মাআশা।
এবং করেছি দিবসকে জীবিকা আহরণের সময়,
(১২)
وَبَنَيْنا فَوْقَكُمْ سَبْعاً شِداداً
ওয়া বানাইনা ফাওকাকুম সাবআন শিদাদা।
আর আমি নির্মাণ করেছি তোমাদের ঊর্ধ্বদেশে সুস্থিত সপ্ত আকাশ
(১৩)
وَجَعَلْنا سِراجاً وَهّاجاً
ওয়া জাআলনা সিরাজাওঁ ওয়াহহাজা।
এবং সৃষ্টি করেছি প্রোজ্জ্বল দীপ।
(১৪)
وَأَنْزَلْنا مِنَ الْمُعْصِراتِ ماءً ثَجّاجاً
ওয়া আনঝালনা মিনাল-মু’সিরাতি মাআন সাজ্জাজা।
এবং বর্ষণ করেছি মেঘমালা হতে প্রচুর বারি,
(১৫)
لِنُخْرِجَ بِهِ حَبًّا وَنَباتاً
লিনুখরিজা বিহী হাব্বাওঁ ওয়া নাবাতা।
যাতে তা দিয়ে আমি উৎপন্ন করি শস্য, উদ্ভিদ,
(১৬)
وَجَنّاتٍ أَلْفافاً
ওয়া জান্নাতিন আলফাফা।
ও ঘন সন্নিবিষ্ট উদ্যান।
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই
১. আল্লাহর জ্ঞান, ক্ষমতা ও দয়া অপরিসীম। তার ক্ষমতার অসংখ্য নিদর্শন আমাদের ঘিরে আছে। আমাদের কর্তব্য এ নিদর্শনগুলো দেখে আল্লাহর বড়ত্ব অনুভব করা। তিনি এ পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করে এটিকে আমাদের বসবাসের উপযোগী বানিয়েছেন। তার দয়ায় আমরা সঙ্গী পেয়েছি, বিশ্রামের জন্য রাত পেয়েছি, ঘুম পেয়েছি। কাজের জন্য আলোকোজ্জ্বল দিন পেয়েছি। যে ফসল ও ফলাদি খেয়ে আমরা বেঁচে থাকি, তাও তারই দান।
২. আখেরাত, হিসাব ও প্রতিদানে বিশ্বাস মুসলমানদের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস, আখেরাতে অবিশ্বাসী হয়ে কেউ মুমিন হতে পারে না। আখেরাতের বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে অন্তরে ধারণ করা আমাদের কর্তব্য। কিছু মানুষ পরকালকে মিথ্যা মনে করলেও এটি সুনিশ্চিত ও সত্য।
৩. মানুষ অবশ্যই কেয়ামত, হিসাব-নিকাশ, প্রতিদান বা শাস্তির মুখোমুখি হবে। মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষ জেনে যাবে পুনরুত্থান সত্য, আখেরাত সত্য, কিন্তু তখন জেনে আর লাভ হবে না।