২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ০৭:৪৩:০৩ পূর্বাহ্ন


পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারে ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০২-২০২৪
পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারে ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারে ১০ দেশের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী


প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অন্যান্য সহায়তা নিতে ১০ দেশের সঙ্গে আইনগত সহায়তা চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, বিদেশে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা সহজ করতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন-২০১২ জারি করা হয়েছে। 

এই আইনের আওতায় অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা দিতে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে বিদেশে পাচার করা সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্স কাজ করে যাচ্ছে।

বুধবার জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এদিন প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন-উত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়। 

শেখ হাসিনা বলেন, অর্থ পাচার রোধে বর্তমানে বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ বলবৎ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর এটি সংশোধিত হয়। এই আইনের বিধান অনুসারে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি নিয়মবহির্ভূভাবে বিদেশে পাচারকে মানি লন্ডারিং অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানি লন্ডারিং অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন চার বছর এবং সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। 

এর অতিরিক্ত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা ও সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ লাখ টাকা (এর মধ্যে যা অধিক) অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পাচার করা অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদনের পর ওই কৌশলপত্রের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। 

এছাড়া পাচার করা অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে বিএফআইইউ কর্তৃক একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা জাতীয় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি শিগগির নিয়ন্ত্রণে আসবে: শিগগির মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতির দেশগুলোতে ২০২৪ সালে মূল্যস্ফীতি উলে­খযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। 

এ অবস্থায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে শিগগির মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা যায়। 

পরিশেষে বলা যায়, সামষ্টিক অর্থনীতিতে নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসাবে অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

নতুন শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের পরিকল্পনা নেই-শিক্ষামন্ত্রী: একেএম রেজাউল করিম তানসেনের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, নতুন শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে নতুন পদ্ধতি আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

মন্ত্রী বলেন, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে শিক্ষা পদ্ধতি চালু হচ্ছে এই শিক্ষা ব্যবস্থায় মেধাবী একটি জাতি তৈরি হবে। নতুন শিক্ষাব্যবস্থা মূলত নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত। আমাদের আগামী প্রজন্মকে যা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার সঙ্গে সঙ্গে ৪র্থ শিল্পবিপ্লব, বিশ্বায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা এবং মধ্য আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরের পথ সুগম করবে।

তিনি বলেন, অতীতে মুখস্থনির্ভর ও সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বের হয়ে বর্তমানে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যুগের চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। শিক্ষার্থীরা মেধাশূন্য নয়, নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা আরও দক্ষ ও যোগ্য হয়ে উঠবে। 

নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে মেধাবী জাতি তৈরি হবে: মশিউর রহমান সজলের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা নেই তেমন নয়। আগের মুখস্থনির্ভর ও সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, যা প্রচলিত পরীক্ষার ধারণা থেকে ভিন্ন। আগের মতো মুখস্থনির্ভর পরীক্ষা না থাকার কারণে অনেকেই নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেই বলে অভিযোগ করছেন। 

নতুন শিক্ষাক্রমে ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়নের সমন্বয়ে একটি আধুনিক কার্যকরী মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এখানে লিখিত মূল্যায়নের পাশাপাশি সমস্যা সমাধান, একক কাজ, দলীয় কাজের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। উপস্থাপন ও যোগাযোগ সক্ষমতা, সহযোগিতা, নেতৃত্ব, অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগ পর্যবেক্ষণসহ আরও নানা উপায়ে শিখন মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ: এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সরকার গত ১৫ বছরে ৮২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ করেছে। এর মধ্যে ৫৪টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৩৭৪টি কলেজ, ৩৪৭টি স্কুল এবং ৪৯টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 

শফিকুল ইসলাম শিমুলের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেএসসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা পুনরায় চালু করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা: এম আবদুল লতিফের অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী বলেন, বর্তমানে দেশে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫১ হাজার ২৬টি। নতুন বিধিমালার আওতায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় আনার কার্যক্রম চলমান। সেসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।

ঢাকায় ৬৩৭২ পরিত্যক্ত বাড়ি: মুহম্মদ সাইফুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, রাজধানী ঢাকায় ৬ হাজার ৩৭২টি পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। 

তিনি বলেন, পরিত্যক্ত বাড়ি সব থেকে বেশি মিরপুর এলাকায়। মিরপুরে দুই হাজার ৫৮২টি পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে মোহাম্মদপুর। এখানে রয়েছে এক হাজার ৫৪২টি পরিত্যক্ত বাড়ি। এছাড়া অন্য পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর মধ্যে গুলশানে ১২৮টি, বনানীতে ৯টি, মগবাজারে ৬২টি, তেজগাঁওয়ে ৩৬, নাখালপাড়ায় ১৯টি, ক্যান্টনমেন্টে ২৬টি, বাসাবোতে ৩৮টি, শাহজানপুরে ১০টি, খিলগাঁওয়ে ১২টি, জুরাইনে ২টি, মতিঝিলে ৭২টি, রমনায় ১৫৮টি, সূত্রাপুরে ৩২০টি, লালবাগে ১৭৪টি, কোতোয়ালিতে ৪৬টি, ধানমন্ডিতে ৮৮টি, লালমাটিয়ায় ২৫টি, যাত্রাবাড়িতে ৪টি ও মানিকনগরে রয়েছে ১টি।

পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হিসাবে ৪টি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে ২০টি ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানান। 

মন্ত্রী বলেন, সংরক্ষিত পরিত্যক্ত বাড়িতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাড়াভিত্তিকে বরাদ্দ করা হচ্ছে। বিক্রয়যোগ্য পরিত্যক্ত বাড়িগুলো প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিতে বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান, শহিদ পরিবার, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বরাদ্দপ্রাপ্তদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। 

গত তিন অর্থবছরে ঢাকা শহরের পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে ১২ কোটি ৬৮ লাখ ১৬ হাজার ৪২৯ টাকা ভাড়া আদায় হয়েছে। এ সময়ে বিক্রি থেকে মূল্য আদায় হয়েছে দুই কোটি ৩১ লাখ ২ হাজার ৭৩৭ টাকা।