২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১২:৩১:০৯ পূর্বাহ্ন


গাজায় ২১ জনকে হত্যা! এবার ইসরাইলকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন বাইডেন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০২-২০২৪
গাজায় ২১ জনকে হত্যা! এবার ইসরাইলকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন বাইডেন গাজায় ২১ জনকে হত্যা! এবার ইসরাইলকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন বাইডেন


গাজার খান ইউনিসে ইসরাইলি স্নাইপাররা নাসের হাসপাতালের বাইরে অন্তত ২১ জনকে হত্যা করেছে এবং চিকিৎসা কর্মীদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় প্রায় ১০৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৪২ জন আহত হয়েছে। মধ্য গাজায়, একটি আবাসিক এলাকায় বোমা হামলার পর বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বেসামরিক প্রতিরক্ষা সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে ভারী গোলাবর্ষণ এবং গোলাগুলির কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষ চাপা পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দক্ষিণ খান ইউনিস শহরের নাসের হাসপাতালের চারপাশে, ইসরাইলের নতুন হামলার প্রবণতা দেখা গেছে। ইসরাইলি স্নাইপাররা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকা ঘিরে রেখেছে এবং লোকজনকে গুলি করছে। এ পর্যন্ত রাস্তা থেকে ১৭টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হামলাকারী ড্রোন হাসপাতালের ছাদে জড়ো হওয়া একদল তরুণকেও লক্ষ্য করে গুলি করে। যোগাযোগ ব্ল্যাকআউটের কারণে, তারা তাদের মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের জন্য সিগন্যাল পাওয়ার চেষ্টা করছিল যাতে তারা পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

এদিকে, ইসরাইল আক্রমণ করলে রাফাতে ‘একটি বিশাল ট্র্যাজেডি’ ঘটার আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছেন জাতিসংঘের প্রধান। গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষকে ইসরাইলের সামরিক আক্রমণ থেকে সুরক্ষার সন্ধানে রাফাতে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘তারা পানি, বিদ্যুৎ এবং পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ ছাড়াই অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে জনাকীর্ণ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে।’ ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ২৭,৯৪৭ জন নিহত এবং ৬৭,৪৫৯ জন আহত হয়েছে। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,১৩৯।

এদিকে, গাজায় হামলার বিষয়ে ইসরাইলকে হুশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ হুশিয়ারি দেন। গাজায় চলমান যুদ্ধের চার মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর এই প্রথম ইসরাইলের প্রতি কঠোর ভাষায় কথা বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

বাইডেন বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আপনি জানেন— গাজায়, গাজা উপত্যকায় (হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার বিপরীতে ইসরাইলি) প্রতিক্রিয়ার মাত্রা ছাড়িয়েছে।’ এ সময় তিনি যোগ করেন, তিনি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি পেতে ইসরাইলকে কঠোরভাবে চাপ দিচ্ছেন। এ ছাড়া হামাসের হাতে থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্ত করতেও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমি জিম্মিদের মুক্ত ও যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে এখন কঠোরভাবে চাপ দিচ্ছি। অনেক নিরপরাধ মানুষ আছে, যারা ক্ষুধার্ত, অনেক নিরপরাধ মানুষ যারা কষ্টে আছে এবং মারা যাচ্ছে—এটি বন্ধ করতে হবে।’

এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত বুধবার তেলআবিবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৭ অক্টোবর হামাস যা করেছে, সেটাকে ‘অন্যদের অমানবিক পরিস্থিতিতে’ ঠেলে দেয়ার লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ ইসরাইলের নেই। অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলিদের সঙ্গে সবচেয়ে ভয়ংকর উপায়ে অমানবিক আচরণ করা হয়েছিল। সেদিনের পর থেকে (হামাসের হাতে বন্দী) জিম্মিরা প্রতিদিন অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছে। তবে এটি কখনোই অন্যদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করার লাইসেন্স হতে পারে না।’

ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো ব্লিঙ্কেনের এই মন্তব্যকে ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কড়া ধমক বলেই উল্লেখ করেছে। ব্লিঙ্কেনের বক্তব্যের মধ্যে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় বেসামরিক হতাহত ও যুদ্ধের সময় সেখানকার মানবেতর পরিস্থিতি নিয়ে ইসরাইলের প্রতি হোয়াইট হাউসের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। বুধবার ব্লিঙ্কেনের দেয়া বক্তব্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর।

ব্লিঙ্কেন বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেছেন, ‘গত ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে গাজার সিংহভাগ মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। গাজার অনেক পরিবারের বেঁচে থাকা নির্ভর করে ইসরাইলি সহায়তার ওপর। তারাও তো আমাদেরই পরিবারের মতো। তারাও আমাদের মা, বাবা, ছেলে ও মেয়ের মতো। যারা ভালো জীবিকা অর্জন করতে চায়, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে চায় এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চায়। তাদের প্রকৃত পরিচয়ই এটা।’ সূত্র : আল-জাজিরা, টাইমস অব ইসরাইল।