রেলপথ যাত্রাকে আরও নিরাপদ করতে এবার ট্রেনে ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন বা সিসিটিভি বসাতে যাচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। আন্তঃনগর এক্সপ্রেসসহ ২৪টি ট্রেনে এই সিসিটিভি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে ১৮টি ট্রেনে বসতে যাচ্ছে সিসিটিভি। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোতেও স্থাপন হবে এই ক্যামেরা। দেশের দুই মোবাইলফোন অপারেটরের মাধ্যমে এসব সিসিটিভি বসানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম শেষ হয়েছে।
সম্প্রতি সময়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাহী বেশক’টি ট্রেনে পরপর অগ্নিসংযোগ, নাশকতাসহ পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। তাই বাড়তি সতর্কতামূলক এ বিশেষ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে কমবে নাশকতা, নিশ্চিত হবে রেলের সার্বিক নিরাপত্তা। যাত্রীরা বলছেন এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগে।
রেলের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন যাত্রীরা। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকা-রাজশাহী রুটের ১৬টি ট্রেনে কোচের ভেতরে রয়েছে সিসি ক্যামেরা। তবে ট্রেনের ভেতর-বাইরে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবার ট্রেনে বসছে সিসিটিভি। পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্মকর্তারা বলছেন, এতে শুধু যাত্রী নিরাপত্তাই নয়, ট্রেনের বাইরে এবং ভেতরে থাকা রেল সদস্যরাও থাকবেন নজরদারিতে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, এটি বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিচালিত একটি রেলওয়ে অঞ্চল। দেশের ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার রেললাইন পরিচালনা করা হয় দুটি অঞ্চলের চারটি বিভাগের মাধ্যমে।
এই দুই অঞ্চলের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চল একটি অঞ্চল। রাজশাহী, রংপুর ও ও খুলনা বিভাগ নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান কার্যালয় রাজশাহীতে অবস্থিত। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অধীনে বর্তমানে ১ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অধীনে দুইটি বিভাগ রয়েছে। এর একটি হচ্ছে- পাকশী বিভাগ। অপরটি লালমনিরহাট বিভাগ।
বর্তমানে রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী নিয়ে ৩৭ জোড়া ট্রেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করে। এর মধ্যে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ১৬টিসহ মোট ২৪টি ট্রেনে বসতে যাচ্ছে সিসিটিভি।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে একদিকে রেলযাত্রীদের নিরাপত্তা যেমন বাড়বে তেমনি ট্রেনে কর্তব্যরত রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও সার্বিক নজরদারির মধ্যে আসবেন। এতে অনিয়ম ও দুর্নীতি কমলে বাড়বে রাজস্বও।
রেলওয়ের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এই রুটের যাত্রীরা। যাত্রীরা বলেন, যাত্রীদের সেবা ও জীবন রক্ষার্থে এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ বলে আমরা মনে করি। এক যাত্রী বলেন, ‘যাত্রী হিসেবে খুবই নিরাপদ বোধ করছি। এটা আসলে আমাদের জন্য একটা সৌভাগ্যের বিষয়, ট্রেনে এমন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ তবে তিনি বলেন, দ্রুত এ বাস্তবায়ন দরকার।
সিসি ক্যামেরার বিষয়ে আরেক যাত্রী বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফলে নাশকতাসহ আর পাথর নিক্ষেপের মতো ঘটনার কোনো ভয় থাকবে না। কে করবে সেটা ধরা পড়ে যাবে। এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’
রেল পুলিশ বলছে, এই উদ্যোগের ফলে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। রেলওয়ে পাকশীর পুলিশ সুপার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি আশা করছি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে ইন্টার্নাল এবং এক্সটার্নাল কোনো ধরনের কোনো সমস্যা হবে না।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে বলেন, ‘আমাদের সম্মানিত যাত্রী যারা আছেন তাদের নিরাপত্তা চিন্তা করে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্ল্যান দেখে এবং সেই রিপোর্টটা দেওয়ার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমার ধারণা ঢাকাগামী ১৬টি ট্রেনসহ রূপসা-সীমান্ত আরও দুটি ট্রেন রয়েছে সর্বমোট ১৮টি ট্রেনে প্রাথমিকভাবে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।’
তিনি বলেন, সিসিটিভি বসানোর কাজ বাস্তবায়ন করা গেলে রেল সেবার মান আরও বাড়বে। মোবাইলফোন অপারেটর এগুলো বসানোর কাজ করবে। রেলভবনের মাধ্যমে এরই মধ্যে অপারেটর দুটি তাদের টেলিকম বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করে গেছেন।