রাজশাহীর তানোরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকুপ অপারেটরদের বিরুদ্ধে কৃষক শোষণের অভিযোগ উঠেছে। সেচের কাজে নিয়োজিত গভীর নলকূপ অপারেটররা জমিদারের উমেদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে কৃষকদের শোষণ করছে। বিগত ২০২২ সালের মার্চে সেচ না পেয়ে গোদাগাড়ি উপজেলায় দুজন কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে। চলতি আলু ও বোরো মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপ অপারেটররা কৃষকদের জিম্মি করে সেচের চার্জ বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। গভীর নলকূপ অপারেটরদের বেপরোয়া সেচ বাণিজ্যের কবলে পড়ে কৃষকদের অবস্থা এখন শোচনীয়। কৃষকদের কষ্টের ফসলের বড় অংশই চলে যাচ্ছে গভীর নলকূপ অপারেটরদের পেটে। সরকারের সেচ ভর্তুকি সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। এক সময় গভীর নলকূপগুলো ডিজেল চালিত হলেও এখন চলে বৈদ্যুতিক মোটরে। ফলে কৃষকের সেচ খরচ অনেক কম হওয়ার কথা। কিন্তু কৃষকরা সেই সুবিধা মোটেও পান না। সেচের নীতিমালায় আছে ঘণ্টায় ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা চার্জ নেওয়া যবে। কিন্তু নলকূপ অপারেটররা ঘণ্টার বদলে ফসল মৌসুমের জন্য কৃষকদের কাছ থেকে অগ্রিম ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করছে। কোনো কৃষক অপারেটরের শর্তে রাজি না হলে তার জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ রাখা হচ্ছে।
বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, সেচ সুবিধা নিশ্চিতে প্রতিটি গভীর নলকূপে কমিশন ভিত্তিতে একজন অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়। কৃষকরা প্রি-পেইড সেচ কার্ড নিয়ে অপারেটরদের কাছে গেলে কোনো পানি পান না। ১ ঘণ্টা সেচের জন্য ১২৫ টাকা মূল্যের প্রি-পেইড কার্ড লাগে। অথচ ১ ঘণ্টার জন্য অপারেটরদের দিতে হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। অনেক অপারেটরের অধীনে একাধিক নলকূপও থাকে। এমনকি এ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন লোকজনও ঘুসের বিনিময়ে একাধিক নলকূপ অপারেটর হয়েছেন
এদিকে বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরীর নজরে আসে। তিনি সমিতির মাধ্যমে গভীর নলকুপ পরিচালনা করার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিএমডিএ'র সহকারী প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে স্কীমভুক্ত কৃষকের মতামতের ভিত্তিতে ১৫ থেকে ২০ সদস্যর কমিটি গঠন করতে বলা হয়। কমিটি গভীর নলকুপ পরিচালনা করবেন এবং অপারেটর সমিতির একজন কর্মচারী হিসেবে কাজ করবেন। কিন্ত্ত দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও অধিকাংশ গভীর নলকুপে এখানো সমিতি গঠন করা হয়নি। আবার যে দু'একটার সমিতি গঠন করা হয়েছে সেখানেও শুভঙ্করের ফাঁকি। অপারেটর তার অনুগত ভুয়া কৃষকের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করেছে। এমনকি স্কীমে জমি নাই, তার পরেও কমিটিতে তাদের নাম দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় গভীর নলকূপ রয়েছে বিএমডিএ'র ৫৩৬টি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৬টি মোট ৫৫২টি এবং অগভীর বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র রয়েছে ৪১১টি। উপজেলায় আবাদ যোগ্য জমি রয়েছে প্রায় ২৩ হাজার ৯৯৩ হেক্টর। এর মধ্যে সেচের আওতায় জমি রয়েছে প্রায় ২২ হাজার ৩৩২ হেক্টর। এবিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, গভীর নলকূপের প্রকারভেদে ঘণ্টাপ্রতি ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা সেচ চার্জ ধার্য করা আছে। কোনো অপারেটর এই নিয়ম লঙ্ঘন করে কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অপারেটর অন্যায়ভাবে অতিরিক্ত অর্থ চাইলে ভুক্তভোগীরা যেন অভিযোগ দেন-পরামর্শ দেন তিনি।