দৈনন্দিন রুটিনমাফিক বহু কাজ করতে হয়। বেঁচে থাকার তাগিদে কারণে-অকারণে কিছু কাজ প্রতিদিন করতে হয়। এগুলো মানুষের সাধারণ অভ্যাস বা নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ। কিন্তু যথাযথ নিয়ম মেনে কাজটি সম্পাদন করলে তা ইবাদতে পরিণত হতে পারে।
সাধারণ ইবাদতে পরিণত হওয়ার সূত্র
মানুষ অভ্যাসের বশে অথবা জাগতিক চাহিদার ভিত্তিতে যেসব কাজ করে তা নিয়তের কারণে ইবাদত ও আমলে পরিণত হয়। মানুষ যখন তার নিত্যকার বৈধ ও অভ্যাসমূলক কাজে আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিয়ত করে, তখন সেই কাজের মাধ্যমেও সওয়াবের অধিকারী হতে পারে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, সব আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।
শিক্ষা যখন ইবাদত
মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। এর মানে এই নয় যে জাগতিক জ্ঞান অর্জন করা যাবে না। বরং জাগতিক জ্ঞান অর্জন কার্যক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। মুসলমানদের বৈষয়িক উন্নতি ও অগ্রগতির স্বার্থে জাগতিক জ্ঞান অর্জন জরুরি।
যদি কোনো মেডিক্যালের ছাত্র তার অধ্যয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে পড়ালেখা করেন, অনুরূপ ইঞ্জিনিয়ারিং বা অন্যান্য শাখার শিক্ষার্থীরা যদি তাঁদের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের জ্ঞান দ্বারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবা করার নিয়ত করেন, তাহলে তাঁদের সেই পড়াশোনা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া পার্থিব কোনো উদ্দেশ্যে ধর্মীয় জ্ঞানও অর্জন করে, তাহলে জান্নাতে প্রবেশ করা তো দূরের কথা, জান্নাতের সুগন্ধিও সে পাবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৬৪)
এভাবে বিশুদ্ধ নিয়তের মাধ্যমে অভ্যাসমূলক কাজ ইবাদতে রূপান্তরিত হয়।
ঘুম যখন ইবাদত
ঘুম মানুষের চিরায়ত অভ্যাস।
খাবার গ্রহণ যখন ইবাদত
বেঁচে থাকার তাগিদে খাবার খেতে হয়। বিশুদ্ধ নিয়তে একজন মুমিন তার এই খাবার গ্রহণকে ইবাদতে পরিণত করতে পারে। এই খাবার খেয়ে দেহে যে শক্তি অর্জিত হবে তা যদি আল্লাহর ইবাদতের কাজে ব্যয় করার নিয়ত করে এবং আল্লাহর নামে আহার করে, তাহলে এই খাবার ইবাদতে পরিণত হবে। রাসুল (সা.) বলেন, মুমিনের সব কাজের জন্য প্রতিদান দেওয়া হয়, এমনকি নিজের মুখে খাবারের লোকমা তুলে নেওয়ার সময়ও (তাকে নেকি দেওয়া হয়)। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৫৩১)
পরিবারের জন্য খরচ যখন ইবাদত
স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিয়ে আমরা বসবাস করি। তাই পরিবারের জন্য যথাসাধ্য খরচ করতে হয়। কিন্তু পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য যা কিছু ব্যয় করা হয়, এর মাধ্যমেও নেকি অর্জন সম্ভব। রাসুল (সা.) বলেন, যখন কোনো মুসলমান সওয়াবের আশায় পরিবারের জন্য খরচ করে, তখন তার জন্য সদকা করার সমতুল্য সওয়াব নির্ধারণ করা হয়। (মুসলিম, হাদিস : ১০০২)
উপার্জন যখন ইবাদত
জীবিকার জন্য শিক্ষক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, ড্রাইভার, মত্স্যজীবী, নাপিত, কামার, কুমার, মিস্ত্রি, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর প্রমুখ পেশাজীবী মানুষ অনেক পরিশ্রম করে। তাদের কাজগুলো নিছক কর্তব্য নয়, এর জন্য আল্লাহর কাছে আছে সীমাহীন পুরস্কার। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদিন আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে বসে ছিলাম। হঠাৎ আমাদের সামনের দিক থেকে এক যুবকের আগমন ঘটল। আমরা তাকে দেখে বললাম, যদি এই যুবক তার যৌবন, উদ্দীপনা ও শক্তিমত্তা দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করত (তাহলে কত উত্তম হতো)! বর্ণনাকারী বলেন, রাসুল (সা.) আমাদের কথাবার্তা শুনে বলেন, নিহত হওয়া ছাড়া কি আল্লাহর পথে সংগ্রামের কোনো রাস্তা নেই? যে ব্যক্তি তার মা-বাবার জন্য কাজ করে, সে আল্লাহর পথেই কাজ করছে। যে তার পরিবারের জন্য শ্রম ব্যয় করছে, সে আল্লাহর পথেই পরিশ্রম করছে। আর যে ব্যক্তি নিজেকে নিষ্কলুষ রাখার জন্য মেহনত করছে, সে আল্লাহর পথেই মেহনত করছে। কিন্তু যে ব্যক্তি শুধু সম্পদ বৃদ্ধির জন্য পরিশ্রম করে, সে শয়তানের পথে পরিশ্রম করে। (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৯৮৯২)
নারীদের গৃহস্থালি কাজ যখন ইবাদত
মুসলিম সমাজে নারীরা ঘরের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন। অক্লান্ত কায়িক পরিশ্রমে গড়ে তোলেন সংসার। বিশুদ্ধ নিয়তের কারণে এই কাজগুলো ইবাদতে পরিণত হতে পারে। একবার উম্মে সালামা (রা.) রাসুল (সা.)-কে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (আমার প্রথম স্বামী) আবু সালামার সন্তানদের জন্য আমি খরচ করি, তাতে কি আমি সওয়াব পাব? আমি তাদের এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না, তারা তো আমারই সন্তান? রাসুল (সা.) বলেন, হ্যাঁ! তুমি তাদের জন্য যা কিছু দান করবে, তার বিনিময়ে সওয়াব পাবে। (মুসলিম, হাদিস : ১০০১)
এভাবেই বিশুদ্ধ নিয়তের মাধ্যমে অনেক অভ্যাসমূলক কাজ আমল ও ইবাদতে পরিণত হয়।