২৯ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০২:৪১:২৭ পূর্বাহ্ন


কৃষি বিপ্লবে বিলুপ্তির পথে গরুর হালচাষ !
নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০১-২০২৪
কৃষি বিপ্লবে বিলুপ্তির পথে গরুর হালচাষ ! কৃষি বিপ্লবে বিলুপ্তির পথে গরুর হালচাষ !


যুগের চাহিদা ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় কৃষিতে ঘটেছে বিপ্লব। কৃষির উন্নয়নের গতিতে তাল মেলাতে না পারা গরুর হালচাষ এখন বিলুপ্তির পথে। ঐতিহ্য হয়ে জাদুঘরেও ঠাঁয় পাচ্ছে এই চালচাষের যন্ত্র।

আবহমান কাল ধরে বাংালির চিরচেনা সেই গরুর কাঁধে জোয়াল লাঙল দিয়ে জমি চাষের চিত্র এখন খুবই কম দেখা যায়। রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে এক সময় গরু-লাঙল দিয়ে জমি চাষ আর মই দেয়ার দৃশ্য সবার নজর কাড়তো। বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠের দিকে নজর পড়তেই দেখা যেতো শত শত কৃষক বাঁশের ফালা দিয়ে তৈরি করা ধারালো লাঙল কাঠের হাতল আর জোয়ালের মাধ্যমে গরুর কাঁধে বেঁধে দিয়ে জমি চাষ করছে। সে সময় গরু-লাঙল ছাড়া জমি চাষ করার কথা চিন্তাই করা যেত না। অথচ গরু-লাঙলের সঙ্গে কৃষকের সেই মিতালীর দৃশ্য এখন বিরল। যুগের পরিবর্তন আর বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতির কারণে গরু-লাঙলের স্থান দখল করে নিয়েছে ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি। কৃষক এখন তার সুবিধামতো দিনের যেকোনো সময় ট্রাক্টর বা পাওয়ার টিলার নিয়ে মাঠে গিয়ে অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় জমি চাষ এবং মই দিয়ে ফসল আবাদ করছে। তবে ওই ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষে পরিশ্রম এবং সময় কমেছে সত্য।

পবা উপজেলার প্রবীণ কৃষক ফরজ আলী জানান, একসময় পবা উপজেলায় প্রতিটি গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ছিল গরুর লালন-পালন। এই গরুগুলো যেন পরিবারের এক একটা সদস্যের মতো। তাদের দিয়ে আমরা একরের পর একর ভূমি চাষ করতাম। যাদের গরু কিংবা হাল ছিল না তাদের জমি চাষের জন্য ‘ কামলা দিতাম’। অনেকে শুধু হাল চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। এছাড়াও হাল মালিকেরা সময়মতো জমি চাষ করে দিত। এতে করে চাষের মৌসুমে তাদের উপরি আয়ের ব্যবস্থা হতো। এ কৃষক একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, এখন আর কেউ গরু দিয়ে হাল চাষ করে না। আমাদের বাপ-দাদাদের ঐতিহ্য গ্রাম অঞ্চল থেকে একদম বিলীন হওয়ার পথে যাচ্ছে।

আরেকজন প্রবীণ কৃষক আব্দুস আবেদ আলী জানান, তিনি নিজেও কয়েক বছর আগে হালচাষ করে আবাদ করতেন। তার নিজেরই হালচাষের যাবতীয় যন্ত্রপাতি এখনো আছে। তবে সময়ের সঙ্গে এগুলো এখন অকেজো। গরুর লাঙ্গল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ শতাংশ জমি চাষ করা সম্ভব। কষ্ট হলেও আমাদের গরু দিয়ে হাল চাষ করতে খুব ভালো লাগত। বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির আবির্ভাবের কারণে এভাবেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। আগামী প্রজন্ম হয়তো বই পড়ে জানতে পারবে এক সময় গ্রাম অঞ্চলে গরু দিয়ে হাল চাষের বিষয়টি।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি কর্মকর্তারা জানান, গরু দিয়ে হাল চাষ করালে অধিক সময় ব্যয় করতে হয় কৃষকদের। বর্তমান সময়ে হাল চাষের জন্য আধুনিক ট্রাক্টরের আবিষ্কার হওয়ায় অল্প সময়ে কৃষকরা তাদের জমিন চাষ করতে পারে। যার কারনে পুরনো পদ্ধতিতে গরু দিয়ে হাল চাষ এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না। হাল চাষ এখন শুধুই ঐতিহ্য।