তীব্র শীতে শুধু মানুষই নয় কাবু হয়ে পড়েছে পশু-পাখিও। শীতজনিত অসুখে রাজশাহীতে মারা যাচ্ছে পোল্ট্রি মুরগি। জেলায় গত ২০ দিনে প্রায় ১৫ হাজার মুরগির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি বলছে, হিমেল আবহাওয়ায় আরও মুরগি মারা যাওয়ার শঙ্কায় আছেন খামারিরা। এমন অবস্থায় অর্থিক ক্ষতির কথা জানাচ্ছেন মুরগি খামারিরা।
তবে রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, শীতের কারণে মুরগি মারা যাওয়ার তথ্য তাদের কাছে নেই। শীতের কারণে মৃত্যুরোধে পর্যাপ্ত বাল্ব জ্বালিয়ে উষ্ণ করা ছাড়াও পলিথিন টানিয়ে খামারে বাতাস প্রবেশ বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে।
বুধবার বিকেলে রাজশাহী পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের মুসলেমের মোড় এলাকার বেলালের খামারে গিয়ে খাচায় জীবিত মুরগির সঙ্গে মৃত মুরগি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এই খামারে বুধবার চারটি মুরগি মারা গেছে। এছাড়া মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) ৫টি মুরগি মারা যায় বলে খামারের শ্রমিক শ্যামল জানান।
এই খামারো শ্রমিক বলেন, শীত বেশি পড়ার পর প্রতিদিনই তিন থেকে চারটি করে মুরগি মারা যাচ্ছে। শীতের কারণে মুরগি অসুস্থ হলে খুব কম বোঝা যাচ্ছে। কোনো কোনো মুরগির মাথার ওপরের লাল টোপ অংশিক কালো হয়ে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো মুরগি শরীর ফুলিয়ে থাকছে। খাবার কম খাচ্ছে, কোনোটি খাচ্ছেই না।
তিনি বলেন, এখানে ১০ থেকে ১১টি মুরগির শেড রয়েছে। এর মধ্যে দু’টিতে মুরগি নেই। বাকিগুলোতে মুরগি আছে। আমরা সবসময় মুরগির দেখভাল করি। দুপুরে খাবারের পর এসে দেখি একটা লাল ও একটা সাদা লেয়ার মুরগি মরে পড়ে আছে। এছাড়া সকাল ১১টার দিকে আরও একটি মুরগি মারা যায়। সাধারণত শীতের কারণে যেসব মুরগি মারা যায় সেগুলো স্বাভাবিক মুরগির মতো বসা বা মাথা নীচু করে মরে পড়ে থাকছে।
এই খামারের ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম বলেন, শীতের কারণে তাদের অনেক মুরগি মারা গেছে। প্রতিদিনই ৫ থেকে ৬টি করে মুরগি মারা যাচ্ছে। তারা চেষ্টা করছেন বাল্ব জ্বালিয়ে ও চারপাশে পলিথিন টানিয়ে খামার উষ্ণ রাখার।
শুধু এই খামারগুলোই নয়, আশপাশের খামারগুলোর মুরগি তীব্র শীত সহ্য করতে না পেরে বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। শুধু শীতই নয়, শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে রাণীক্ষেত, মাইকোপাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, পেটে পানি জমা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। রাণীক্ষেত সারাবছর থাকলেও মাইকোপাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, পেটে পানি জমা রোগে বেশি আক্রন্ত হয়ে মুরগি মারা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুখুন্ডির জয়পুরের একটি লেয়ার খামারি জানান, শীতের ১০ দিনে তার খামারের সাতটি মুরগি মারা গেছে। এই খামারির ধারণা তার কম মুরগি মারা গেছে। কারণ তিনি আগে থেকেই মুরগি সুস্থ রাখার জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
রাজশাহী পোল্টি অ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক এনামূল হক বলেন, রাজশাহীতে মুরগির খামার রয়েছে ৫ হাজারের বেশি। খামারগুলোতে ব্রয়লার, লেয়ার, সোনালী মুরগি পালন করা হয়। শীতের কারণে প্রতিদিন একেকটি খামার থেকে কমপক্ষে ৫টি থেকে ৭টি করে মুরগি মারা যাচ্ছে। তীব্র শীতের ২০ দিনে রাজশাহীতে মারা গেছে প্রায় ১৫ হাজার মুরগি। এক মাস আগে যে খামারি খামারে ১ হাজার মুরগি তুলেছেন। গত ২০ দিনে তার খামারে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মুরগি মারা গেছে। দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতির বাজারে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাজার হাজার মুরগির খামারি।
রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, শীতের কারণে খামারের পর্যাপ্ত বাল্ব জ্বালিয়ে উষ্ণ করে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু খামারি বাতাস বন্ধ করতে পারছে না। তাদের পলিথিন টানিয়ে বাতাস বন্ধের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। শীতের কারণে মুরগি মারা যাচ্ছে এমন খবর পাইনি।